আমাদের মতো অসভ্য আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
আইইডিসিআরের হটলাইনে আসা প্রায় দুই লাখ ফোন কলের সঙ্গে করোনার কোন সম্পর্ক নেই। তাহলে এই ফোনগুলো কারা করেছে? কেন করেছে? কি বলা হয়েছে সেই ফোনে? কি জানতে চাওয়া হয়েছে?
বাংলা সাহিত্য একটা সময় ভীষণ সমৃদ্ধ ছিল। বাঙালি বই লিখতো, বই পড়তো, বাঙালির রসবোধ ছিল প্রশংসা করার মতো। সৈয়দ মুজতবা আলির মতো মানুষ বাঙলায় জন্মেছেন, আহমদ ছফা থেকে হুমায়ূন আহমেদ- সেন্স অফ হিউমারের কমতি আমাদের মধ্যে ছিল না কোন সময়। তবে কমন সেন্সের অভাব বরাবরই ছিল, এখন তো সেটার অবস্থা ভয়াবহ। আমাদের কমনসেন্সের লেভেল যে কোথায় নেমে গেছে, সেটা বোঝার জন্যে গবেষণা করা লাগবে না, রিসার্চ পেপার বানানো লাগবে না, শুধু করোনার এই ভয়াবহতার সময়টায় আইইডিসিআর এর হটলাইনে আসা ফোনগুলোর বিবরণ শুনলেই শিউরে উঠবেন যে কেউ।
বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী সনাক্তের পর থেকে এখন পর্যন্ত আইইডিসিআর এর হটলাইনে কল এসেছে ১০ লাখের বেশি। তার ভিতরে প্রায় দুই লাখ ফোন কলের সঙ্গে করোনার কোন সম্পর্ক নেই। তাহলে এই ফোনগুলো কারা করেছে? কেন করেছে? কি বলা হয়েছে সেই ফোনে? কি জানতে চাওয়া হয়েছে?
আইইডিসিআর এর হটলাইনের ফোন রিসিভ করেন, এমন একজন চিকিৎসকই ফেসবুকে লিখেছেন- ‘‘IEDCR এর হটলাইনে কাজ করার পর একটা উপলব্ধি হয়েছে যে, এই দেশের বহু মানুষের আসলে কোন কাজই নাই, এবং তাদের গায়ে তেল অনেক বেশি। নইলে মেয়ে কণ্ঠ শুনেই "আপনি বিয়ে করসেন?" "আপনার বয়স কত", "আমি লাগাইতে চাই", "যৌবন ফিরে পাব কিভাবে", "দুলাভাই কি করে", "এই ফোন দিসি এম্নেই, আপনার সাথে কথা বলার জন্য", "আমাকে ফোন ব্যাক করেন, আপনার সাথে কথা বলতে চাই" ইত্যাদি ইত্যাদি ব্যাপারগুলা ঘটতো না৷ সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছি, সৌদি আরব থেকে একটা গ্রুপ লিটারেলি ১০ বারের উপর ফোন দিয়ে নানাভাবে বিরক্ত করেছে। সমাজসেবা কঠিন জানতাম, তবে এতটা বেহায়াপনা দেখা লাগবে জানতাম না সত্যি।’’
অসভ্যতার সীমা ছাড়িয়ে যেতে আমরা বরাবরই পারদর্শী। বাঙালি বীরের জাত বলে সুনাম ছিল, এখন সেই বাঙালিই হয়ে গেছে লম্পটের জাত। সিংহভাগ মানুষ হয়তো এমন নয়, কিন্ত এদের সংখ্যাটা একদম হাতেগোনাও নয়। দশ লাখ ফোন কলের মধ্যে যখন এরকম অবান্তর কথাবার্তা বলার জন্যেই দুই লাখ কল আসে, সেটাকে তুচ্ছ সংখ্যা ভেবে উড়িয়ে দেয়ার কোন উপায় নেই। এই জনপদের প্রতিটা অংশে লাখ লাখ পার্ভার্ট ছড়িয়ে আছে, সুযোগ পেলেই তারা নিজেদের কদাকার চেহারাটা দেখিয়ে দেয়- এটা নতুন করে জানা গেল এই ঘটনায়।
করোনার উপসর্গ নিয়ে হাজার হাজার মানুষ রোজ ফোন করছেন হটলাইনে দেয়া নাম্বারগুলোতে, ভীষণ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে আইইডিসিআরের শরণাপন্ন হচ্ছেন তারা, মৃত্যুভয় আচ্ছন্ন করে ফেলছে তাদের, অথচ ফোনের লাইন পাওয়া যাচ্ছে না, কারণ পার্ভার্টের দল লাইন বিজি করে রেখেছে! এদের একটা ফোন কেটে সারতে না সারতেই আরেক নম্বর থেকে ফোন দিয়ে বসে। এমন অমানবিক আচরণ আমাদের পক্ষেই করা সম্ভব, অন্য কোথাও এরকম নজির খুঁজে পাওয়া যাবে না।
অসুস্থ মানুষ যখন অসহায় হয়ে একটার পর একটা ফোনের নম্বর ডায়াল করে চলেছে, তখন এরা নারী কণ্ঠ শোনার আকাঙ্ক্ষায় ব্যাকুল হয়ে অযথাই ব্যাপারটাতে বা হাঁত ঢুকিয়ে মানুষকে বঞ্চিত করছে। যেন এসব বেহায়াপনা না করলে এদের পেটের ভাত হজম হবে না! দেশের সীমানা ছাড়িয়ে মধ্যপ্রাচ্যে বসেও এদের ইতরামি কমেনি একটুও। দুই লাখ উড়ো ফোনকল মানে অন্তত দুই লাখ মানুষ বঞ্চিত হয়েছেন আইইডিসিআরের পরামর্শ থেকে, যাদের দরকার ছিল এই সাহায্যটা। সবকিছু নিয়ে যে অসভ্য আচরণ করতে হয় না, এই কমনসেন্সটা এদেশের বিশাল এক জনগোষ্ঠীর নেই, এই বর্বর জাতি নিয়ে এর বেশি আর কিইবা আশা করা যায়?