ত্রাণ বিতরণ, লোক দেখানো 'শো অফ' এবং আমাদের হীনমন্যতা!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
কেউ কিছু করলে সেটা লোক দেখানোর জন্য করছে- এইরকম নেগেটিভ ধারণা আপনি ইচ্ছা করলেই ধরার অধিকার রাখেন না। ভাইরাসে না মারলে ক্ষুধা মেরে ফেলবে। নিজের ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে পেট চেপে রাখা যায়, সন্তানের কান্না কিভাবে সহ্য হয়?
বিশ্বজুড়ে মহামারী শুরু হয়েছে কয়েকমাস হয়ে গেল। কোটি কোটি লোকজন ইতিমধ্যেই কর্মহীন হয়ে গেছেন, কোটি কোটি মানুষ চাকরি হারাচ্ছেন, খুব শীঘ্রই বিশ্বজুড়ে অন্নসংকট দেখা দিবে।
দেশের সবপ্রান্তে ত্রাণ বিতরণ চলছে। লাখে লাখে মানুষ ভাইরাসের ঝুঁকি উপেক্ষা করে লাইনে দাঁড়িয়ে ত্রাণ নিচ্ছে। আগে পেটের ক্ষুধার দাবি মেটানো জরুরি, পরে ভাইরাস নিয়ে ভাবা যাবে। ভাইরাসে না মারলে ক্ষুধা মেরে ফেলবে। নিজের ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে পেট চেপে রাখা যায়, সন্তানের কান্না কিভাবে সহ্য হয়?
সামনে আমাদের জন্য কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। এই অবস্থায় দেখা যাচ্ছে একদল লোক কুকুর বিড়াল সহ নানান অবলা প্রাণীর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। তাদের খাবার দিচ্ছেন। রুটি, বিস্কিট, কলা ইত্যাদি। সেদিন পত্রিকায় খবর এসেছিল রাজশাহী চিড়িয়াখানায় কিছু ক্ষুধার্থ কুকুর খাঁচা বন্দি হরিণকে আক্রমন করে মেরে খেয়ে ফেলেছেন। দর্শনার্থী নাই, তাই কুকুরদের খাবার কেউ দেয়না, এবং ক্ষুধার যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে তারা এই কাজটা করেছে।
তেমনই দেখলাম, এক পুলিশ সদস্য এক পঙ্গু (দুই হাতই নেই) বানরের জন্য কলা ছিলে তাকে খাওয়াচ্ছেন। কারন নিজের খাবার জোগাড় করে খাবার ক্ষমতা বহু আগেই সে হারিয়েছে। লোকজন এইসব খবর প্রচারের সময়ে প্রশংসার পাশাপাশি কুৎসাও রটাচ্ছে। বিশেষ করে কমেন্টে। একদিকে যেমন বাহ্ বাহ্ দিচ্ছে লোকে, অন্যদিকে এমনও বলছে যে "যেদেশে মানুষ খাবার পায় না, সেই দেশে এইসব ঢং দেখানো শোভা পায় না।"
কিংবা "এইসব লোক দেখানো কর্মসূচি। লাইক আর শেয়ার পাবার ধান্দাবাজি।" সমস্যা হচ্ছে, এরাই ইসলাম ধর্মের নামে বাড়াবাড়ি করে। যেহেতু বাড়াবাড়ি করে, তাই এদের কর্মকান্ডই অমুসলিম বা নিজের ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞাত মুসলিমদের চোখে পড়ে। ফলে একটি বিরাট কনফিউশন তৈরী হয়। এদের কারণেই লোকে ভাবে ইসলাম একটি অমানবিক বর্বর স্বার্থপর ধর্ম।
প্রথম কথা, "কেউ কিছু করলে সেটা লোক দেখানোর জন্য করছে" এইরকম নেগেটিভ ধারণা আপনি ইচ্ছা করলেই ধরার অধিকার রাখেন না। একটি উদাহরণ দেই। এক যুদ্ধে উসামা ইবনে জাইদ(রাঃ), যার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা হয়েছিল নবীজির (সঃ) বাড়িতে, যাকে নবীজির (সঃ) নয়নমনি ডাকা হতো, সাহাবীদের কিছু চাহিদা থাকলে তাঁরা এই বালকের মাধ্যমে নবীজির কাছে পেশ করতেন, কারন একে রাসূলুল্লাহ (সঃ) না করতেন না, সেই উসামা এক শত্রুর মৃত্যু নিশ্চিত করার পরে রাসূলুল্লাহকে এসে বলেন, "লড়াই শেষে আমার তলোয়ারের আঘাতের ঠিক আগ মুহূর্তে সে কলিমা পড়েছিল।"
নবীজি (সঃ) বিস্মিত হয়ে বললেন, "তাহলে তুমি তাঁকে মারলে কেন?" উসামা (রাঃ) বললেন, "সেতো কেবল নিজের জান বাঁচানোর জন্য বলেছিল।" এই কথায় রাসূলুল্লাহর (সঃ) মুখ লাল হয়ে গেল। তিনি অগ্নিশর্মা হয়ে বললেন, "তুমি কী তাঁর হৃদয়চিড়ে দেখেছিল ও সত্যি নাকি মিথ্যে বলছিল?"
উসামার (রাঃ) কথা একটু চিন্তা করুন। নবীর অমন রাগের পাত্র কে হতে চাইবে? অথচ এই কাজটিই আমাদের অগা মগারা করে বেড়াচ্ছে। উনি উসামা বিন জাইদ হয়েও নবীজির রাগের পাত্র হয়েছিলেন, তুমি জনৈক রহিমুদ্দিন - করিমুদ্দিন, তোমার কি হবে?
তাই দেখা যাচ্ছে, যুদ্ধের ময়দানে, যেখানে এক সেকেন্ডেরও কম সময় আগে যে লোকটি আমাকে মারতে এসেছিল, এবং তখন তার হাত থেকে অস্ত্র পড়ে গেছে, পরাজয় ও বধ হওয়া নিশ্চিত, এবং তখনও সে ভাল কিছু করে, আমাকে বেনিফিট অফ ডাউট তাঁকে দিতেই হবে। অন্যান্য সিচ্যুয়েশনের কথা বাদই দিলাম। এইটাই ইসলামের নিয়ম। আমাদের সাকিব আল হাসান এতিম খাওয়ালে লোকে বলে ও লোকদেখানোর জন্য কাজটি করেছে।
আমাদের মাশরাফি ভাল কিছু করলে বলে, ভোটের লোভে কাজটি করেছে। আমাদের অনন্ত জলিল কোটি কোটি টাকা বিলিয়ে দিলেও লোকটাকে নিয়ে আমাদের ট্রলিং বন্ধ হয়না। তাও এই লুজারগিরি করে কারা? যাদের পকেট থেকে দুই পয়সাও বের হয় না। তখন উনাদের বাণী "আমি লোকদেখানো দানে বিশ্বাস করিনা।" - এই কথাটা একটা ক্যান্সার রোগীকে বলুন।
যে টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না। তাঁর কাছে প্রতিটা পয়সার মূল্য অসীম। সে পরোয়া করেনা কে লোক দেখানোর জন্য দিয়েছে, কে আল্লাহর জন্য দিয়েছে এবং কে এমনিতেই দিয়েছে। সুইডিশ রাজকুমারী সোফিয়া রাজ প্রাসাদ ছেড়ে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান, হসপিটালে যোগ দিয়েছে। নার্সিংয়ের উপর অনলাইন কিছু কোর্স করে ফ্রন্ট লাইন যোদ্ধাদের মনোবল বৃদ্ধি ও তাঁদের সাহায্যে তিনি এগিয়ে আসতেই কাজটি করেছেন।
তিনি রোগীদের জন্য খাবার তৈরী, চিকিৎসা সরঞ্জাম জীবাণুনাশক দিয়ে ধোয়া মোছা করা, পেপার ওয়ার্ক ইত্যাদি কাজ, যা পেশাদার নার্সদের করতে হতো, কিন্ত বাস্তবে যে কেউ করতে পারে - সেসবই তিনি করবেন। যাতে পেশাদার নার্সের পুরো সময়টা রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যয় হতে পারে। খুবই মহান উদ্যোগ না? ভেবে দেখুন, তিনি দেশের একজন রাজকুমারী, তাঁর কিন্তু এসবের দরকার ছিল না। আমাদের পলিটিশিয়ানদের কয়জনের ছেলেমেয়ে এমন ভলান্টিয়ার হয়েছেন? ছেলেমেয়ের কথা বাদ দেন, নেতাদেরইতো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।
কিন্তু আমাদের বাঙালির আচরণ কেমন ছিল জানেন? প্রথম আলোয় এই সংবাদের নিচে মোটামুটি সব কমেন্টই নেগেটিভ। রাজকুমারী লাইম লাইটের ধান্দায় এই কাজ করছেন। নাহলে কয়েকদিন অনলাইন কোর্স করে কিসের নার্সিং? এই সমস্ত নেগেটিভ মন্তব্যকারী ও চিন্তাধারার মানুষদের কারনে যদি একজন মানুষও, যে হয়তো এক্সট্রিম ইন্ট্রোভার্ট, কোন ভাল কাজ করা থেকে পিছিয়ে যায়, তাহলে এর দায়ভার কে নিবে? দুর্গন্ধময় আবর্জনায় ঠাসা সেসব মস্তিষ্কে এইসব কথাবার্তা ঢুকবে?
এদেরকে নবীর (সঃ) সামনে দাঁড় করালে তাঁর প্রতিক্রিয়া কি হবে সেটা কল্পনাও করতে পারছি না। তিনি এই কাজে স্পষ্ট করে নিষেধ করেছেন। তাই, এই যে ক্ষুধার্ত কুকুর, বিড়াল ও বানরকে খাওয়াতে দেখছি - কে লোকদেখানোর উদ্দেশ্যে করছে, আর কে জেনুইনলি ভালবেসে করছে, সেটা নিয়ে গবেষণার অধিকার আমাদের নেই। আমাদের দেখতে হবে যে, এদের কারণেই কুকুর বিড়াল ও সব অবলা প্রাণী খাবার পাচ্ছে। ওরা না দিলে এরা খাবার পেত না। যেখানে আমি আপনি ফেসবুকে তামাশা করে বেড়াচ্ছি।
কুকুর বিড়ালকে খাবার না দিলে কী হয়? হাদিস অনুযায়ী দোজখে যেতে হয়। অথেন্টিক হাদিস আছে, এক সাহাবী রমণী তাঁর বিড়ালকে বেঁধে রেখেছিলেন এবং ক্ষুধা তৃষ্ণায় কষ্ট পেয়ে বিড়ালটি মারা গিয়েছিল। মহিলা একজন সাহাবী ছিলেন, নবীজির (সঃ) সাথে এক জামাতে নামাজ আদায় করতেন, নবীজির সাথে একই শহরে থাকতেন, তাহাজ্জুদে সেজদায় কান্নাকাটি করতেন, কিন্তু তারপরেও কেবলমাত্র একটি বিড়ালকে না খাইয়ে মারার জন্য রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, তিনি দোজখে যাচ্ছেন।
সুনানে নাসায়ীতে আছে, "চড়ুই পাখির চেয়েও ছোট কোন প্রাণীকে যদি কেউ বিনা কারনে হত্যা করে, তবে কেয়ামতের দিন সে আল্লাহর দরবারে এই অবিচারের জন্য বিচার চাইবে।" (৪৪৪৬)
মুসলিম প্রধান আমাদের দেশে, যেখানে মহামারীর সময়েও জুম্মার নামাজ বাদ দিতে কেউ রাজি হয়না, সেখানে গরমপানি বা ভাতের মাড় দিয়ে কুকুর বিড়ালের শরীর ঝলসে দেয়ার ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই ঘটে। অথচ মুসলিম শরীফের হাদিস, কোন প্রাণীকেই মুখে গরম ছ্যাঁকা দেয়া যাবেনা।
আপনি জীবনভর যতই নামাজ রোজা হজ্ব যাকাত দেন না কেন, আল্লাহ সৃষ্ট অবলা প্রাণীর উপর অত্যাচার করলে আপনার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে, যা আমাদের ইসলামের প্রধান পাঁচ স্তম্ভের এক নম্বর স্তম্ভ। ওদের অভিশাপ বড় কঠিন অভিশাপ!
কে জানে, এই যে বিশ্বজুড়ে আমরা মানুষরা ইচ্ছেমতন অমানুষী করছি, যেখানে আমাদের দায়িত্ব ছিল সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে ওদের অভিভাবকত্ব করা, সেখানে আমরা খেয়ালখুশি মতন ওদের আবাসস্থল উজাড় করে দিচ্ছি, লাখে লাখে প্রজাতিকে বিলুপ্ত করে দিচ্ছি, পৃথিবীটাকে ওদের বসবাসের অযোগ্য করে দিয়েছি।
কে নিশ্চিত করে বলতে পারবে, ওদের অভিশাপেই কিনা আজকে আমাদের এই দশা হলো! ঈশ্বরতো তাঁদেরও। তিনি সব শোনেন, সব জানেন, এবং সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। এখন আসা যাক, অবলা প্রাণীকে খাওয়ালে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের কী উপকার হয়?
বুখারী শরীফের হাদিস, (Vol. 4, Book 56, Number 673), "আবু হুরায়রা হতে বর্ণিত, নবীজি (সঃ) বলেছেন, একটি কুকুর একটি কুয়ার পাশে তৃষ্ণায় ছটফট করতে করতে মারা যাচ্ছিল। এক ইহুদি বেশ্যা রমণী সেই কুকুরটিকে পানি খাওয়াতে নিজের পায়ের জুতা কুয়ায় ফেলে পানি টেনে তুলে কুকুরটির তৃষ্ণা মেটান। আল্লাহ সেই রমণীর সমস্ত জীবনের গুনাহ মাফ করে দেন।"
এই হাদীসটি আমরা সবাই শুনেছি। ডিটেইল নিয়ে কখনই চিন্তা করিনা। আমরা সবাই জানি, শিরকের পরেই ইসলাম ধর্মে সর্বোচ্চ পর্যায়ের গুনাহ হচ্ছে খুন এবং ব্যাভিচার। মহিলার জীবিকাই ছিল ব্যাভিচার। এই ঘটনার পরে মহিলা কী তাঁর আদি পেশায় ফিরেছিলেন? আমরা জানিনা। মহিলা যে জুতা পানিতে ফেলে দিলেন, সেটি হয়তো তাঁর খুব প্রিয় ছিল।
সেই যুগে একেকটি জুতা, একেকটি জামার মূল্য অসীম ছিল। কারন তখন এসব ফ্যাক্টরিতে তৈরী হতো না। একজন মানুষ তাঁর পুরো জীবনে তিন চার জোড়া জুতার বেশি ব্যবহার করতেন না। সেই অবস্থায়, মহিলা কেবল একটি কুকুরের জন্য সেই জুতা পানিতে নষ্ট করলেন। এই কুরবানীতো কম নয়।
আবার, এইটাও আমরা জানিনা, মহিলা কোন উদ্দেশ্যে পানি খাইয়েছেন। তিনি নিশ্চই এভাবে বলেন নি, "হে আল্লাহ, দেখো, একটা কুকুরকে পানি খাওয়াচ্ছি। হিসাব রাখো।" বরং এমন হবার সম্ভাবনাই প্রবল যে তৃষ্ণার্ত কুকুরটিকে দেখে তাঁর মায়া লেগেছে, এবং অন্য কিছু চিন্তা না করেই সে খাইয়েছে। দেবার মালিক যেহেতু আল্লাহ, তিনি সেটাই দিয়েছেন যাতে মহিলার সর্বোচ্চ উপকার হয়।
এই হাদীসটি শুনে সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করেন, যেকোন প্রাণীকেই আমরা খাওয়ালে আল্লাহর কাছ থেকে উপকার পাব? নবী (সঃ) বললেন, "যে কোন প্রাণের সেবাতেই সওয়াব পাবে।" (বুখারী ২/৮৩৩, ৮৭০) এবং যারা এমন কাজ করা মানুষদের নামে কুৎসা রটাচ্ছেন, তাঁরা ইসলামের বিরুদ্ধাচরণ করছেন। কারন মুসলিম শরীফে আছে, "সুন্দর আচরণই নেক আমল।" এবং এর বিরুদ্ধাচরণ কী, সেটা বুঝতে একটু মাথা খাটানোই যথেষ্ট।
এখন এই চরম সংকটকালে আমাদের করণীয় কী সেটা বলেই শেষ করি। এতদিন ধরে আমরা আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি অন্যায় করে গেছি। এখন ঋণ শোধের সময়। প্রথম কাজ, শুধু নিজেকে নিয়ে চিন্তা বাদ দিয়ে, আশেপাশের সবাইকে নিয়েই ভাবতে হবে। আমি প্রয়োজনে লাঞ্চে চার পাঁচ পদের পরিবর্তে এখন এক-দুই পদ দিয়ে খাব। যাতে যা বেঁচে যাবে, তা দিয়ে একজনকে বা একটি পরিবারকে উপকার করতে পারি।
মাছ মাংস ডিম সবজি ছাড়া আমার লাঞ্চ ডিনার হয় না, এদিকে কিছু মানুষের বাড়িতে মুড়িও নেই যে মুড়ি আর পানি খেয়ে কোন রকমে বেঁচে থাকবেন। বরং আমি যদি এই কটাদিন সবজি খেয়ে বাঁচি, কিংবা দুই পিস্ মাংস কম খাই, এবং সেই টাকায় আরেকজনকে চিড়া গুড় মুড়িও কিনে দেই, তাতেও একটি ভাল কাজ হবে।
এবং আমার খাওয়া উচ্ছিষ্ট, যেমন মাছের কাটা, মাংসের হাড্ডি ইত্যাদি আমার এলাকার কুকুর, বিড়ালকে খাইয়ে দেই। ভাত বাসি হয়ে গেছে, খাওয়া যাচ্ছেনা, সেটা আমি কাকের মধ্যে বিলিয়ে দেই। কুকুরকে খাইয়ে দেই। আমার কোন ক্ষতি হচ্ছেনা, কিন্তু ঐ প্রাণীগুলোর উপকার হচ্ছে। আর যদি সামর্থ্য থাকে, তবে অবশ্যই আমি যেন ওদেরকে একটু উন্নতমানের খাবার দেই। উন্নত মানে পোলাও কোর্মা না, ফ্রেশ খাবারের কথা বলছি।
দাদি নানীর কাছ থেকে শুনেছি, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আমাদের এমন দুর্দিন দেখতে হয়েছিল যে লোকে আমাদের বাড়িতে এসে ভাতের ফ্যান বুকিং দিয়ে যেত। জানে, কেউ ভাত দিবে না, ফ্যানটা যেন না ফেলা হয়। ওটা খেয়েও মানুষ বাঁচার চেষ্টা করেছে। আল্লাহ না করুক, আমরা সেই দিকেই যেতে পারি। এবং সেটা যেন না হয়, সেজন্য এখন থেকেই দুনিয়ার অন্যান্য প্রাণীর মুখে খাবার তুলে আসমানওয়ালার কাছে দোয়া করুন, তিনি যেন আমাদের, বা উত্তরসূরিদের কাউকেই অন্নকষ্টে না ফেলেন।
সেদিন দেখলাম, সামান্য এক প্যাকেট ত্রাণ পেয়ে এক ক্ষুধার্ত দিনমজুর হাঁটু গেড়ে বসে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করছেন। দোয়া করছেন সেই ব্যক্তির জন্য যে তাঁকে খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তেমনই আপনার দেয়া খাবার খেয়ে কুকুর বিড়ালও আপনার জন্য দোয়া করবে। অসহায় মানুষ ও অবলা প্রাণীর দোয়া রাব্বুল আলামিন নিশ্চই কবুল করবেন ইন শা আল্লাহ।
আরও পড়ুন-