খুব কষ্ট হলেও কিছু করার নেই, যতবার যত অজুহাতে বাইরে যাবেন, নিজের আর পরিবারের নিরাপত্তার জন্য এই কাজগুলো করতেই হবে৷ তাই যতটা পারুন, ঘরে থাকুন প্লিজ।

ডা. শাওলী সরকার: করোনার ক্রান্তিকালে বেঁচে থাকতে হলে তো খেতেও হবে। সেক্ষেত্রে বাজার করা আবশ্যক। আসুন জেনে নিই, করোনা থেকে বাঁচতে যে সাবধানতা অবলম্বন করে বাজার করবেন! 

বাজারে যেতে হবে সপ্তাহে একবার বা ১৫ দিনে একবার। সেভাবে সপ্তাহের শুরুতে ঘরে কি কি আছে দেখে প্ল্যনিং করতে হবে। একসাথে বাজার করে ফেলতে হবে। এমন যেন না হয় আজ ডিম আনব, কাল মুরগী আনব, পরশু চা পাতা। এভাবে প্রতিদিন বের হলে সংক্রমণ এর আশংকা অনেক বেড়ে যায়।

বাজারে যাওয়ার সময় লিস্ট করে যেতে হবে এবং চটপট সেগুলো কিনে ঘরে ফিরতে হবে। মোবাইল ফোনে যেন ইন্সট্রাকশন নেওয়া না লাগে কারন বাজারে মোবাইল ব্যবহার করলে সেটা থেকে সংক্রমণ এর আশংকা থাকে। এজন্য মোবাইল না নেওয়া বেস্ট অপশন।

অপচয় নয়। এমন যেন না হয় পুরো বাজার আমি নিজেই উজাড় করে নিয়ে আসলাম আর ফ্রিজে পঁচে গেল।সামনে আরো কঠিন সময় আসছে। আমরা মিতব্যয়ী হই। হালকা খাবার খাই এবং সব ধরনের খাবার খেতে শিশুদেরকেও অভ্যস্ত করি। বিশেষ করে শাকসবজি ও ভিটামিন সি যুক্ত খাবার ( যেমন, লেবু, টমেটো, আমলকি, কাঁচা মরিচ)

বাজারে যাওয়ার সময় ঘড়ি, চুড়ি, আংটি ইত্যাদি বাসায় রেখে যেতে হবে। খুচরা টাকা একটা পলিথিন / জিপ ব্যাগে রাখতে হবে যেটা পরে ফেলে দেওয়া যায়। টাকা ও মোবাইল (নিলে) আলাদা রাখতে হবে। মাথায় ক্যাপ/ স্কার্ফ, সার্জিক্যাল মাস্ক, চশমা ও গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে। হালকা পুরো শরীর ঢাকা পোশাক পরতে হবে ও রাবার এর পা ঢাকা জুতা /বুট ব্যবহার করতে হবে যেটা ধোয়া যায়।

আমার মতে ভীড় যুক্ত সুপার শপ/ কাঁচা বাজার এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। অনেক লোকের ভীড় হওয়ায় সংক্রমণ এর আশংকা বেশি থাকে। ট্রলিগুলো থেকেও জীবাণু আসে, কেউ সোশ্যাল ডিস্টেন্স ঠিক মত মানেও না। বিল পরিশোধ এর জন্য লাইন ধরতে হয়। এর চাইতে পাড়ার দোকান / ভ্যান থেকে চটপট বাজার করা যায়। (যদি খোলা থাকে)

যদি সুপার শপ/ কাঁচা বাজারে যেতেই হয় কাউকে ঘাড়ের উপর উঠতে দেওয়া যাবে না। বিনীত ভাবে অন্তত ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে বলতে হবে। মাস্ক একবারের জন্যও খোলা যাবে না এবং মুখের কোন অংশ বাজারে থাকা অবস্থায় স্পর্শ করা যাবে না। চুল যাতে মুখের উপর না আসে এইজন্য ভালভাবে টুপি/ স্কার্ফ দিয়ে আটকে যেতে হবে। ট্রলি হ্যান্ডেল টিসু পেপার দিয়ে ধরতে হবে।

বাসায় বাজার নিয়ে আসার পর কনুই দিয়ে বেল চাপতে হবে। জুতা/ মোজা ২ লিটার পানিতে ১ টেবিল চামচ ব্লিচিং পাউডার মেশানো পানিতে ঘরের বাইরে ডুবিয়ে রাখতে হবে৷ বাইরে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকলে গ্লাভস পরা অবস্থায় সাবান দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে হবে। যে পথ টুকু লিফট থেকে নামার পর এসেছি বা সিঁড়ির যে স্টেপগুলো উঠেছি, ব্লিচিং পানি দিয়ে মুছে দিতে হবে। দরজা খোলার পর যিনি বাজার করেছেন তিনি নিজেই গ্লাভস ও মাস্ক পরা অবস্থায় ব্যবস্থাপনা করবেন।

ফল ও ডিম সাবান পানি দিয়ে ধুতে হবে। মাছ, মাংসের প্যাকেট সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে ফ্রিজে রাখতে হবে। আর যেসব পচনশীল না সেই সব কিছু অন্তত ২৪ ঘন্টা একটি নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে দিতে হবে যাতে বাচ্চাসহ কেউ ধরতে না পারে৷ খুচরা টাকাগুলোও বের করে সেখানে রেখে দিতে হবে। টাকার পলিথিনটা ফেলে দিতে হবে। বাজার গুছানোর সময় ও যাতে মাস্কের উপর বা মুখের কোন অংশে হাত না যায় সেদিকে বিশেষ ভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রয়োজন এ অন্য কারো সাহায্য নিতে হবে এবং সে সঙ্গে সঙ্গে সাবান দিয়ে ভালভাবে হাত ধুয়ে ফেলবে।

এরপর সোজা বাথরুমে গিয়ে প্রথম এ গ্লাভস সহ হাত আবার সাবান দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধুতে হবে। সমস্ত কাপড় চোপড় বালতির সাবান পানিতে ডুবিয়ে চশমা সাবান পানিতে ডুবিয়ে নিয়ম অনুযায়ী গ্লাভস খুলে ঢাকনা যুক্ত বিনে ফেলে দিতে হবে। এবার হাত সাবান দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধুতে হবে। এরপর মাস্ক কানের পিছন থেকে খুলে নিয়ে বিনে ফেলতে হবে। ডেটল সাবান মেখে গোসল করে ফেলতে হবে ও চুলে শ্যাম্পু করতে হবে।


খুব কষ্ট হলো তো! কিছু করার নেই, যতবার যত অজুহাতে বাইরে যাবেন, নিজের আর পরিবারের নিরাপত্তার জন্য এভাবে করতেই হবে৷ তাই যতটা পারুন, ঘরে থাকুন প্লিজ।

লেখক- ডা. শাওলী সরকার
সহকারী অধ্যাপক
ঢাকা শিশু হাসপাতাল।

আরও পড়ুন-

 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা