গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর এই করোনা ভাইরাসের সময় নিজ উদ্যোগে নানান সব কাজ করে যাচ্ছেন। টেলিভিশন কিংবা পত্র-পত্রিকায় এইসব মানুষ স্থান পায় না। স্থান পায় ঢাকা উত্তর-দক্ষিণের মেয়রসহ নানান সব মানুষ; যাদেরকে এই দুর্যোগের সময় হারিকেন দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না!
আমি গাজীপুর জেলার প্রেমে পড়েছি। জেলাটির এমপি এবং বর্তমান যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। রাসেল ভাই চমৎকার একজন মানুষ। খুবই অমায়িক এবং স্বল্পভাষী। সুইডেনে থাকতে তিনি আমার বাসায় এসেছিলেন, সঙ্গে আরও কয়েকজন এমপি ছিল। অন্য সবাই অনবরত কথা বলে যাচ্ছিলেন, তিনি কেবল চুপচাপ শুনছিলেন। সেই থেকে ভালবাসার শুরু।
সেদিন দেখলাম গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর এই করোনা ভাইরাসের সময় নিজ উদ্যোগে নানান সব কাজ করে যাচ্ছেন। টেলিভিশন কিংবা পত্র-পত্রিকায় এইসব মানুষ স্থান পায় না। স্থান পায় ঢাকা উত্তর-দক্ষিণের মেয়রসহ নানান সব মানুষ; যাদেরকে এই দুর্যোগের সময় হারিকেন দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না! এদের মাঝে উত্তরের মেয়র তো আবার হাজার হাজার মানুষ নিয়ে হাত ধোয়া কর্মসূচীও পালন করেছিলেন!
তবে যে কারণে আবার নতুন করে গাজীপুরের প্রেমে পড়লাম, জেলাটির এসপি শামসুন্নাহারের জন্য। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিকনফারেন্সে কথা বলার সময় তিনি কোন রকম ভূমিকা (আমাদের তেলবাজ এমপি, মন্ত্রী, আমলারা যা করে থাকে আরকি) না করে, সরাসরি মূল পয়েন্টে গিয়েছেন। তিনি বলেছেন- গাজীপুর এখন হটস্পট। এখানে অনেক করোনা রোগী। এদের মাঝে অনেকেই পোশাক কারখানার শ্রমিক। কিছু মুনাফা লোভী মালিক এদের ডেকে এনেছে, কাজ করাচ্ছে। অনেককে আবার বেতনও দিচ্ছে না। এরা পিপিই বানানোর কথা বলে অন্য সব সামগ্রী বানাচ্ছে। এরপর এই এসপি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, গার্মেন্টসের মালিকদের ব্যাপারে একটা সমন্বয় সাধন করুন দয়া করে।
কতো সহজ সরলভাবে কোন রকম ভূমিকা না রেখে, কোন রকম তেল না দিয়েও মূল কথাটা বলে ফেলা যায়। আমি এই এসপির প্রেমে পড়েছি। পুরো গাজীপুর জেলারই প্রেমে পড়েছি। দেশের পুলিশদের নিয়ে এই আমি কতো শত লেখা লিখেছি আমার ফেসবুকে এবং পত্র-পত্রিকায়। এই করোনা যুদ্ধে দুই একটি ঘটনা বাদ দিলে আমাদের পুলিশ বাহিনী যেভাবে কাজ করে যাচ্ছে, সেটা সত্যিই প্রশংসার দাবী রাখে।
আমি লেখালেখি করি মুলত অসঙ্গতি গুলো তুলে ধরার জন্য। তাই আমার লেখার বেশিরভাগ অংশ জুড়ে'ই থাকে নানান সব সমালোচনা। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি- কাউকে না কাউকে সমালোচনা করতে হবে। ধরিয়ে দিতে হবে ভুল গুলো। সেই দায় বদ্ধতা থেকে'ই লেখেলেখি করি।
এই করোনা যুদ্ধে যদি একটা রাষ্ট্রে'র নাম বলতে বলা হয়, যেটি সম্পূর্ণ রুপে ফেইল করেছে করোনা মোকাবেলায়- প্রথমেই নিতে হবে আমেরিকার নাম। দেশটি'তে দুই থেকে তিনটি অঙ্গ রাজ্যে এমনকি মর্গেও মৃত দেহ রাখার জায়গা হচ্ছে না। এর মূল কারন হচ্ছে- দেশটি'র প্রেসিডেন্ট এই করোনার সময়ও রাজনীতি করে বেড়াচ্ছেন। ক্রমাগত রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে বেড়াচ্ছেন। কারন এই নভেম্বরে'ই আমেরিকায় নির্বাচন।
ট্রাম্প ভেবেছিল এইভাবে রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে সে তার জনপ্রিয়তা বাড়াতে পারবে। এই লোক প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলনে এসে বলেছেন- আমি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি বলেই আমেরিকায় এতো কম মানুষ মারা যাচ্ছে, নইলে আরও অনেক বেশি মানুষ মারা যেত! অথচ এই লোক এপ্রিলের প্রথমে'ই অর্থাৎ ইস্টারে সময় সব কিছু খুলে দিতে চেয়েছিল। পুরো পৃথিবীর মানুষ দেখছে, কিভাবে প্রবল পরাক্রমশালী দেশটি এই করোনা যুদ্ধে হেরে যাচ্ছে! আজ অবদি দেশটিতে ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ শুধু সরকারি হিসেবে'ই মারা গিয়েছে। আরও কতো মানুষ মারা যাবে তার কোন হিসেব নেই। পৃথিবীর আর কোন দেশে এতো মানুষ মারা যায়নি।
বাংলাদেশে বোধকরি আজ ৪৫ দিন হতে চলেছে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হবার পর। পৃথিবী ব্যাপী দেশ গুলোর মডেল পর্যালোচনা করলে দেখা যাচ্ছে ৪৫ থেকে ৬৫ দিনের মাঝে'ই সব চাইতে বেশি ছড়াচ্ছে করোনা রোগী, সেই সাথে মৃত্যু'র সংখ্যাও। এই ২০ দিনে আমাদের অবস্থা কি দাঁড়াবে সেটা বলা মুশকিল। কারন আমাদের দেশেও বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। এরপরও বলতেই হচ্ছে- আগামী ২০ দিন অন্তত কষ্ট করে সবাই ঘরে থাকলে প্রাথমিক ধাক্কাটা হয়ত আমরা সামলে নিতে পারব।
করোনা ভাইরাস এতো সহজে যাবে না। এটাও সত্য বাংলাদেশ একা যদি এই যুদ্ধে জয়ী হয় কিংবা কোন একটা-দুটো দেশ যদি এই যুদ্ধে জয়ী হয়; তাহলেও খুব একটা ফায়দা হবে না। কারন অন্য দেশ গুলোতে যদি ভাইরাস থেকে যায়; তাহলে সেটি আবার আসবে। যেমন সিঙ্গাপুরকে প্রাথমিক ভাবে বলা হচ্ছিলো সফল হয়েছে করোনা যুদ্ধে। এরপর গত তিন দিন ধরে সেখানে আবারও হুরহুর করে বাড়ছে করোনা রোগী'র সংখ্যা। তাই এই যুদ্ধটা হবে খুব'ই জটিল-কঠিন এবং লম্বা এক যুদ্ধ। ভ্যাক্সিন আবিষ্কার হবার আগ পর্যন্ত আমাদের নানান উপায়ে চালিয়ে যেতে হবে সেই যুদ্ধ।
গাজীপুর জেলার কর্তা ব্যক্তিরা যেভাবে খুব চমৎকার ভাবে মেনে নিয়েছে যে তাদের জেলায় করোনা ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত। এখন যেভাবেই হোক মোকাবেলা করতে হবে; পুরো দেশ ব্যাপীও সেটাই করতে হবে।
যা সত্যি, সেটা'ই প্রকাশ করতে হবে। করোনা রোগীর সংখ্যা যদি লাখ হয় ( হবে না, কারন এতো টেস্ট করার সামর্থ্য আমাদের নেই, এটাও স্বাভাবিক); বলতে চাইছি রোগীর সংখ্যা যেটাই হয় সেটাই বলুন। যারা যেখানেই মারা যাচ্ছে; সেটা প্রকাশ করুন। সেই সঙ্গে মানুষদের সতর্ক করে বলুন, আমরা প্রতিদিন টেস্ট করছি ২ হাজার, এর মাঝে শনাক্ত হচ্ছে ৩০০ জনের মতো। এরমানে দাঁড়াচ্ছে ১৫ ভাগ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। এভাবে হিসেব করলে দেখা যাবে একটা বিশাল সংখ্যার মানুষ আক্রান্ত হতে পারে পুরো বাংলাদেশে। সেটাও জনগণকে জানান এবং বুঝতে দিন। এতে মানুষ ভয় পেলে পাক কিন্তু তাদেরকে এভাবেই সতর্ক করে ঘর বন্দী করে রাখতে হবে আগামী ২০ দিন।
মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পার হয়ে গেলে এরপর না হয় আমরা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এবং হাসপাতালের ধারণ ক্ষমতা আর আমাদের টেস্ট করার ক্ষমতা বিবেচনা করে আস্তে আস্তে নানান সেক্টর ওপেন করার কথা চিন্তা করবো- যাতে করে টেস্ট বেশি করা যায়, কন্টাক্ট ট্রেসের মাধ্যমে ওই সময়ে আমরা ভাইরাসটি একটা সীমার মাঝে রাখতে পারব ভ্যাক্সিন আবিষ্কার হবার আগ পর্যন্ত। ততদিন দয়া করা আপনারা সবাই নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দার চিন্তা বাদ দিয়ে দেশ এবং দেশের মানুষের কথা চিন্তা করুন।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা এই মুহূর্তে সর্বনিম্ন পর্যায়ে আছে দেশটি'তে। কারন মানুষজন বুঝতে পেরেছে- আমেরিকার জনগণ না; এই লোক স্রেফ ক্ষমতায় থাকার কথাই চিন্তা করে যাচ্ছে এই দুর্যোগের সময়ও। আমেরিকা-ইংল্যান্ড একরকম হেরে বসে আছে এই যুদ্ধে। আমাদের এখনও সুযোগ আছে। দয়া করে এভাবে মানুষের জানাজায় কিংবা অন্য যে কোন কারনে কাউকে ঘর থেকে বের হতে দিবেন না।
দেশে এই মুহূর্তে তিনটি হটস্পট জেলা হচ্ছে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং গাজীপুর। কেন জানেন তো? এই জেলা গুলো'তে শ্রমিকরা বেশি থাকে। সেই যে ছুটি দিয়ে দিয়েছিলেন; সবাই চলে গেল এক সঙ্গে। আবার ফেরতও আসলো এক সঙ্গে! এর ফল হয়েছে- এই জেলা গুলোতে এখন অলি-গলি সব জায়গায় করোনা রোগী পাওয়া যাচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া'য় কি হবে বলতে পারছি না। তবে প্রস্তুত থাকুন দয়া করে।
ভুল হয়েছে। হতেই পারে। অনেক দেশ'ই ভুল করছে। কারন এটি সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতা। সমালোচনা করতে চাইছি না। দয়া করে আর ভুল করবেন না। ভুল গুলো থেকে শিক্ষা নিন।