করোনাশূন্য নড়াইল: তাতে কী? মাশরাফি রাজনীতিতে না এলেও পারতেন!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
নড়াইল জেলায় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ১২ জনের সবাইকে করোনা নেগেটিভ ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। যাদের সবাই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। এখন পর্যন্ত নড়াইলে আর কোন করোনা আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়নি।
ঘটনাটা গত ১৩ই এপ্রিলের। লোহাগড়ায় প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে নড়াইল দেশের করোনা সংক্রমণের জেলায় নাম লেখায়। পরবর্তীতে দুই দফা পিসিআর টেস্টে আক্রান্ত আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তি করোনা নেগেটিভ হয়ে গেলেও ২০ ও ২৭ এপ্রিল দুই দফা পরীক্ষায় ৭ চিকিৎসকসহ নড়াইল জেলায় মোট ১২ জনের দেহে করোনার উপস্থিতি ধরা পড়ে। সংক্রমন ঠেকাতে সেদিন থেকেই জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন।
তবে আক্রান্তদের সবারই অবস্থা স্থিতিশীল ছিল বিধায় তারা সবাই স্বাস্থ্য বিভাগের তত্বাবধানে ব্যক্তিগত কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। শনাক্ত হওয়াদের খুলনা মেডিকেল কলেজে পিসিআর ল্যাবে এ পর্যন্ত দুই পর্বে নমুনা পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। গত রোববার সর্বশেষ পাওয়া রিপোর্টে সবারই করোনা নেগেটিভ এসেছে। এর মধ্য দিয়ে করোনা মুক্ত জেলা হিসেবে নাম লেখালো নড়াইল।
তবে সতর্কতায় একটু ঢিলেঢালাভাব দেখা দিলেই আবারও সংক্রমিত হতে পারে মানুষ। এই শঙ্কাও পুরোপুরি উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। এই যে নড়াইলের এ সাফল্য, কী মনে হচ্ছে এতে কার অবদান বেশি থাকতে পারে? কোন পরশ পাথরের ছোঁয়ায় নড়াইল আপাতত শঙ্কামুক্ত হলো? সেটা জানতে হলে ফিরে তাকাতে হবে ঠিক দেড় বছর আগে।
মাশরাফি যখন নির্বাচন করার ঘোষণা দিলেন, বাঙালি তখন দুটো দলে ভাগ হয়ে গিয়েছিলো। একদল মানতেই পারছিলো না, কেন মাশরাফি রাজনীতিতে আসবেন, কেন গায়ে কাদা লাগাবেন! মাশরাফি অনেকবার আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন যে, তিনি মানুষের জন্যে কাজ করতেই রাজনীতিতে আসছেন, তার ওপরে যেন ভরসা রাখা হয়, তাকে যেন একটু সময় দেয়া হয়। কিন্ত কে শোনে কার কথা? মাশরাফিকে জাতীয় ভিলেন বানানোর চেষ্টা একপক্ষের লোক গত দেড় বছর ধরেই করছে, ভবিষ্যতেও করবে।
অথচ করোনার এই দিনগুলোতে দেশের সাড়ে তিনশো সাংসদের মধ্যে সবচেয়ে কর্মঠ আর উদ্যমী রূপে আবির্ভূত হতে দেখা গেছে মাশরাফিকেই! এলাকার দুঃস্থ মানুষের জন্যে নিজের ফাউন্ডেশন থেকে খাবার আর ত্রাণের ব্যবস্থা করেছেন, অসহায় মানুষের অয়াশে দাঁড়িয়েছেন নিজ উদ্যোগে। কখনও আবার ফোন পেয়ে নিজেই খাবার নিয়ে ছুটে গেছেন। নড়াইল সদর হাসপাতালের প্রবেশদ্বারেই স্থাপন করেছেন জীবাণুনাশক গেট। একইরকম গেট স্থাপন করা হচ্ছে পুলিশদের জন্যেও।
চিকিৎসকদের সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে ওই হাসাপাতালেই স্থাপন করেছেন ‘ডক্টরস সেফটি চেম্বার’। পিপিই, হ্যান্ড স্যানিজার যখন যা প্রয়োজন হচ্ছে তাও বিলি করছেন মাশরাফি। ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সময় পাঁচ মিনিট ধরর তেল দেয়ার নাটক না করে সরাসরি পয়েন্টে চলে যাচ্ছেন, তার এলাকায় কি নেই, কি লাগবে সেসব জানিয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং তার প্রশংসা করে বলেছেন, 'আমাদের মাশরাফি তো ভালো কাজ করছে!'
ভেবে দেখুন, এই মানুষটা রাজনীতিতে না এলে তার কি এমন কোনো ক্ষতি হতো? অর্থ, যশ-খ্যাতি সবই তো পেয়েছিলেন। উল্টো রাজনীতিতে আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে লোকের কটু কথার শিকার হয়েছিলেন। মধ্যমণি থেকে বনে গেছিলেন অনেকের শত্রু। যিনি ছিলেন ঘৃণার উর্ধ্বে, তাকে টেনে নামিয়ে আনা হয়েছিলো অভিশাপের রাজ্যে! তিনি জনসেবা করতে চেয়েছিলেন, এটাই ছিলো তার সবচেয়ে বড় অপরাধ।
জ্বী, মাশরাফি ভালো কাজ করছেন, এই ভালো কাজ করার জন্যেই আপনাদের গালি খেয়ে তিনি রাজনীতিতে এসেছেন, এমপি হয়েছেন। মাশরাফি রাজনীতিকে বদলে দিতে রাজনীতিতে এসেছেন, ময়লা পরিস্কার করতে কাদায় নেমেছেন। ফুটেজ খাওয়ার বিন্দুমাত্র চেষ্টা তিনি করেননি। বাকীদের সঙ্গে এখানেই তার পার্থক্য... তবে তাতে আমাদের কী? আমরা তো সেই একই গান গাইব- মাশরাফি রাজনীতিতে না এলেও পারতেন!