করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে এই ডাক্তার নার্স আর টেকনিশিয়ানরাই আমাদের সৈন্য-সামন্ত। তাদের কতটুকু সেইফটি নিশ্চিত হচ্ছে। তারা তাদের চাহিদা অনুযায়ী ইকুইপমেন্ট পাচ্ছেন কিনা, এগুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলাও আমাদের নাগরিক দায়িত্ব।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সারা বিশ্বেই বুমাররা বেশী মরছে। তরুণ কিংবা শিশু মৃত্যুর হার তুলনামূলকভাবে কম। এখন অবধি সাধারণ এভিডেন্স এটাই। তরুণ বয়সীদের মধ্যে তারাই ঘায়েল হচ্ছেন- যাদের সাধারণত দূর্বল ইমিউন সিস্টেম আছে। কিংবা হার্ট কিডনি, লিভার, ফুসফুস ইত্যাদির প্রি-এক্সিসটিং কন্ডিশন আগে থেকেই আছে।

কিন্তু সিএনেন বলছে- এর বাইরে করোনায় তরুণ বয়সী যারা মারা গেছেন, তাদের অধিকাংশই তরুণ ডাক্তার, ফার্মাসিস্ট এবং নার্স। আমেরিকা তাই রোগী ভর্তি, শহরে গণজমায়েত বন্ধ করে দেয়া, ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টা ইত্যাদি করেছে। কিন্তু- প্রায়োরিটি লিস্টে সবার আগে জায়গা দিয়েছে- 'ফ্রন্ট লাইন রেসপন্ডারস সেইফটি'। অর্থাৎ মানুষের নিরাপত্তা তো বটেই। কিন্তু ডাক্তার নার্স আর মেডিক্যাল প্রফেশনালদের স্পেশাল সেইফটি সবার আগে।

চীনের পরিসংখ্যানটাই দিয়েছে লস এঞ্জেলস টাইমস- করোনা আক্রান্তের ৫ ভাগের ১ ভাগ হেলথ প্রফেশনালস্। এবং এদের ৫ জনে ৩ জন নার্স। এছাড়া ডাক্তার, ফার্মাসিস্ট এবং ল্যাব টেকশিয়ানরাও রয়েছেন।

শুরুর দিকে চীন সরকার এই ডাক্তার নার্সদের সেইফটির ব্যাপারে বিশেষ নজর দেয়নি। এরপর দিয়েছে- কারণ একই দিনে এক ডাক্তার ও নার্স দম্পতি মারা যান। সেটা নিয়ে একটা কবিতা লেখা হয়। যেটা মিডিয়াতে ব্যাপক আলোড়ন তুলে।। তাই মেডিক্যাল প্রফেশনাল গ্রুপগুলো ভয় কাটিয়ে সোচ্চার হয়ে সরকারকে প্রেশার দিয়েছে। সরকারও 'ফ্রন্ট লাইন রেসপন্ডার্স সেইফটি' নিয়ে তৎপর হয়েছে।

এই মেডিক্যাল প্রফেশনালরা সবাই রোগের প্রথম বাহক নয়। বরং রোগীর শরীর থেকেই এসেছে ভাইরাস। এবং তাদের উপর এত ধকল যায় যে, বয়স বিবেচনা তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় না। সবাই আক্রান্ত হচ্ছে। আমেরিকার করোনাভাইরাস মোকাবেলার টেকনিক উন্নত বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে নাজুক ও দূর্বল।

কিন্তু আমি যে স্টেট ক্যালিফোর্নিয়াতে থাকি, সেখানেও গভর্নর ডাক্তার আর নার্সদের সেইফটির জন্য স্পেশাল প্রক্লেমেশন দিয়েছেন। এমনকি সমস্ত স্কুল বন্ধ করে দিলেও- ডে কেয়ার বন্ধ করতে আহবান জানালেও- ডাক্তার আর নার্সদের বাচ্চারা যাতে ডে কেয়ার পায়- সেজন্য আলাদাভাবে অনুরোধ করেছেন। কারণ এই বাচ্চারা অন্য বাচ্চাদের মতো বাবা মায়ের কাছে থাকবে না।।এদের বাবা মা বরং এদের ফেলে রেখে সম্ভাব্য যুদ্ধক্ষেত্রে লড়বে।

আজ দেখলাম, ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্টস- হাউজিং গ্রুপগুলোতেও পোস্ট দেয়া হচ্ছে। নন মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টির কারও কাছে অতিরিক্ত প্রটেক্টিভ গিয়ার- স্পেশালি মাস্ক মজুদ থাকলে- সেগুলোর অতিরিক্তগুলো যেন স্থানীয় হাসপাতালে ডোনেট করে। যাতে মেডিক্যাল প্রফেশনালদের ঘাটতিতে পড়তে না হয়।

এত কথা বলার কারণ, বাংলাদেশ 'ফ্রন্ট লাইন রেসপন্ডার্স সেইফটি নিতে কি করছে?' পর্যাপ্ত আইসিইউ নাই। কোয়ারান্টাইন ভালোভাবে মানা হচ্ছে না। এগুলো নিয়ে আলাপ হচ্ছে। হওয়া উচিতও। বুঝলাম। কিন্তু যারা রোগীদের সাথে সার্বক্ষণিক থাকবেন। সেই মেডিক্যাল প্রফেশনালদের জন্য আলাদা সেইফটিও তো পর্যাপ্ত নয়।তাহলে কোন কোন হাসপাতালে নার্সরা রোগীর চিকিৎসার সময় ভয়ে ফেলে রাখবে না কেন? কানাডা প্রবাসী শিক্ষার্থীর মৃত্যু এই ফিয়ার মংগারিং এর জন্যই হয়েছে।

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় চীনা নার্সদের অবস্থা

চীনা নার্সদের কিছু ছবি বিশ্বমিডিয়াতে প্রচার হচ্ছে। ১০০ জনে ৯০+ জন নার্সই মাথা কামিয়েছেন কিংবা চুল ছোট করেছেন। এই রোগীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে। কেউ কেউ দুই দিনে একবার বাথরুম করার সুযোগ পেয়েছে। তাই এডাল্ট ডায়াপার পরেই রোগীর চিকিৎসা চালিয়ে গেছেন। কেউ কেউ ক্রমাগত পিল খেয়ে পিরিয়ড পিছিয়েছিলেন। যাতে সেবাদানে ব্যাঘাত না ঘটে।
কয়েকজন সারাদিনের ধকল শেষে হার্ট এটাক করে মারা গেছেন। একটু গুগল সার্চ করলেই এরকম বহু স্যাক্রিফাইসের নিউজ পাওয়া যাচ্ছে।

করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে এই ডাক্তার নার্স আর টেকনিশিয়ানরাই আমাদের সৈন্য-সামন্ত। তাদের কতটুকু সেইফটি নিশ্চিত হচ্ছে। তারা তাদের চাহিদা অনুযায়ী ইকুইপমেন্ট পাচ্ছেন কিনা, এগুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলাও আমাদের নাগরিক দায়িত্ব। কোন হুজুর, কোন প্রবাসী কোন পরিস্থিতিতে কী বলছে- এসব জাজমেন্ট করার উপযুক্ত সময় নয়। যে হাসপাতালে আপনার যমে-মানুষে টানাটানি হবে। যে মানুষেরা আপনাদের টেনেটুনে জীবিত রাখবে। তাদের চাহিদা, সেইফটি নিয়ে যে টানাপোড়েন চলছে। সেটা নিয়ে পদক্ষেপ নেয়াও ফার্স্ট প্রায়োরিটি হওয়া উচিত। 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা