২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাস। ভ্যাকসিন চলে এসেছে। কিন্তু কেউ সেই ভ্যাকসিন নিচ্ছে না। ভ্যাকসিন দেয়ার সেন্টারগুলোতে মাইক মেরেও কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। সব দেশের মানুষজন দাঁড়িয়ে আছে এয়ারপোর্টে। লম্বা লম্বা লাইন। পৃথিবীর সব দেশের বিমান সব দেশের সাথে ফ্লাইট ক্যানসেল করে কেবল একটা দেশেই প্যাসেঞ্জার নিচ্ছে। দেশটার নাম বাংলাদেশ।

ফাইনালি ২৫% ফ্যাটালিটি রেটের কোভিড নাইনটিন বিদায় নিতে যাচ্ছে। তবে বিদায় বেলায় তাকে সংবর্ধনা দিতে কোটি কোটি মানুষ বাংলাদেশে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন করোনার বধ্যভূমি। এখানে করোনা হ্যাচারি হয়েছে। করোনার চাষ হচ্ছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। বিশ্বের সব লাক্সারিয়াস রিসোর্ট, প্রাইভেট ভিলা বাংলাদেশ থেকে করোনা নিয়ে ওয়ালকাম ড্রিংস বানিয়ে গেস্টদের আপ্যায়ন করছে যাতে তারা 'স্টে রিসোর্ট" ঠিকমত পালন করতে পারে। 

৯৭০ বার জিন পাল্টে করোনা একটা লাস্ট জিনে স্ট্যাবল হয়েছে। এইটার নাম বাংলা জিন। এই কথা শুনে বাংলাদেশের ওয়াজ মাহফিলে প্রচুর মিষ্টি বিতরণ হয়েছে। আরেক মনোয়ার বলেছেন, জীন যে আছে প্রমাণ হইলো তো। এই দেখেন। জোরে বলেন...

করোনা চা, করোনা ফুচকা, করোনা কফি এইসব বের হয়েছে। টিউব থেকে একটু করে করোনা ভাইরাস ঢেলে খাবারে মেশানো হয়। তারপর এটা খেয়ে সবাই নেশা করে। করোনা খেলে ঘুম ভালো হয়। মানে খাওয়ার সাথে সাথে বাসায় যেতে ইচ্ছে করে। "স্টে হোম" আর কী। সবাই উইকেন্ডে একটু ভাইরাস খেয়ে শুক্র শনিবার বাসায় থেকে রেস্ট টেস্ট নেয়।

পুরো দুনিয়াতে লাখ লাখ মানুষ মরলেও বাংলাদেশে মরেছে মাত্র ৭০ জন। বাকিরা সব ঠাণ্ডা জ্বরে। ওসব কাউন্ট করা হয় নাই। বাংলাদেশিদের ইমিউন সিস্টেম সুপার হিউম্যান লেভেলে। গিনেস বুকে তাদের নাম উঠে গেছে। নোবেল- অস্কার- ব্যালন ডিঅর সবকিছুই দেয়া হয়েছে বাংলাদেশকে।

ডাক্তার বিজ্ঞানীরা বাংলাদেশিদের জিন নিয়ে গবেষণা করে ফেল মেরেছে। এখন নাসা থেকে বিজ্ঞানীরা এসেছে। তাদের লিড দিচ্ছেন মুফতি ইব্রাহীম। সেশন শুরু করার আগে সবাইকে তিনি অজু করিয়ে পাক পবিত্র করে নেন। নাপাক শরীরের বিজ্ঞানীদের সাথে তিনি কথা বলেন না।

সেদিন গুলিস্তান স্টেডিয়ামের পাশে ভ্যান থেকে লুঙ্গি কিনেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি শুনেছেন, এই পোষাকের ইমিউন সিস্টেম সবচেয়ে ভালো। কিনেই তিনি শেখ হাসিনার সাথে দেখা করতে গেছেন। এদিকে পুরা দুনিয়াতে সবাই তাকিয়ে আছে বাংলাদেশের দিকে। বাংলাদেশের সবকিছু লাইভ দেখানো হচ্ছে সব দেশের টিভিতে। মানুষের টয়লেটে যাওয়াও বিদেশিরা আগ্রহ নিয়ে দেখছে। প্রতিটা মানুষের পেছনে একজন করে সাংবাদিক আছে। বাংলাদেশের পোলাপান চান্স পেয়ে এডভান্টেজ নিচ্ছে। ক্যামেরাম্যানদের ডেকে বলে বিড়ি ধরায়া দেন, বাথরুমে বদনা আগায়া দেন।

কীভাবে এই অসাধ্য সাধন করলো বাংলাদেশ সেটার গবেষণায় উঠে এলো, পুরা পৃথিবীতে সামাজিক দূরত্ব মেইনটেইন করার সময়ে বাংলাদেশিরা আরও কাছাকাছি এসেছে। দুই শরীরের চাপ খেয়ে করোনা ফেটে গেছে। কারণ ম্যাক্সিমাম ছিলো পোয়াতি করোনা। তাদের ডিম ফেটে আর বাচ্চা হয় নি। সব মানুষের পায়ের নিচে চাপা পড়েছে।

এদিকে বেস্ট সার্ভাইভাল মিষ্টি ফারিয়াকে তার টেকনিক জিজ্ঞাসা করলে সে বলেছে, আমি কিছু জানি না। আমি শুধু একটা লাল পাড়ের সাদা শাড়ি পরে বুকের ডান পাশের পাখনায় দুইটা বাড়ি দিয়ে কিচ্ছুক্ষণ নাচছিলাম। তারপর একটা ডালগোনা কফি বানাইছিলাম। তারপর আমার আর করোনা হয় নাই।

ঢাকার ছেলে ফাহিম বলেছে, আমিও কিছু বুঝলাম না। আমি শুধু ৫ হাজার কমেন্ট পেয়ে মাথা টাক করছিলাম আর এক বস্তা চাল গুনছিলাম। ডিজিট মনে নাই। তবে পদ্মাসেতুর বাজেটের চেয়ে বেশি। তারপর আমার আর করোনা হয় নাই। মফিজল হক নামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বললেন, করোনা আমার বশ মানছে। আমার সাথে একা একা কথা কয়। এই যে আমার বুকের মইধ্যে কান দিয়া শোনেন।

এদিকে সবাই বাংলাদেশিদের থেকে এসব শিখে এপ্লাই করলো। ভ্যাকসিন আর কেউ নিলো না। ভ্যাকসিনে করোনা মরবে কিন্তু বাংলাদেশি ইমিউন সিস্টেমের নিঞ্জা টেকনিক শিখে গেলে দুনিয়ার আর কোনো ভাইরাসই কাজ করবে না। এজন্য সবাই পারমানেন্ট সলিউশন নিতে বাংলাদেশে চলে এসেছে।

ফাইনালি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর খোঁজ নিলো সবাই। তিনি এখন লাইমলাইটে। তাকে প্রথমেই জিজ্ঞাসা করা হলো, আপনি কীভাবে মোকাবেলা করলেন? (১) তিনি বললেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে।

আবারও জিজ্ঞাসা করা হলো, কী কী স্টেপ নিয়েছিলেন? (২) তিনি বললেন, আপনারা যা যা দেখছেন তাই।

মন্ত্রী সম্পর্কে জানতে গিয়ে সবাই আরও অবাক হয়ে গেলো কারণ তিনি অভিনব একটা স্টেপ নিয়েছিলেন কিন্তু এত মানুষের সামনে লজ্জায় স্বীকার করছেন না। সারা দুনিয়া ডাক্তারদের দিয়েছে পিপিই আর তিনি দিয়েছেন পিপিপি। এই পিপিপি পরা ডাক্তার দেখেই অর্ধেক রোগী ভাল হয়ে বাড়ি চলে গেছে।

সব দেশের জনগণ প্রেশার ক্রিয়েট করলো এমন একজন স্বাস্থ্যমন্ত্রী তাদের দেশেও নিয়োগ করতে। তবে তিনি ওয়ান পিস। তাকে তো আর পাওয়া যাবে না। এজন্য তার সেইম ব্যাকগ্রাউন্ডের, তার মত টেকনিক জানা কাউকে খোঁজা হলো। এজন্য তার হেল্প প্রয়োজন।

তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, আপনার টেকনিক কী ছিলো?

(৩) তিনি লজ্জা পেলেন। বলতে চাচ্ছিলেন না। তার কানে কানে গিয়া বলা হলো। বলেন, কাউকে বলবো না। বললে এক লাখ পিপিপি গিফট দিবো। স্বাস্থ্যমন্ত্রী লজ্জা ভেঙে আবার বললেন, কী জানতে চান? তারা বললেন, আপনার টেকনিক?

(৪) স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ভেরি সিম্পল। আমি প্রতিদিন দুইটার বেশি প্রশ্নের উত্তর দেই নাই। আপনার দুইটা প্রশ্ন আগেই হয়ে গেছে। তিন নাম্বার আর চার নাম্বার প্রশ্নের উত্তর আমি দিবো না। এইটাই আমার টেকনিক। ধন্যবাদ আবার আসবেন...


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা