১৪ দিনের সংগ্রাম ও করোনা পজিটিভ থেকে নেগেটিভ হবার গল্প
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
পরদিনই থানা থেকে আমার এলাকা লকডাউন করতে এলো, তখন সবাই আমার বাসার দিকে কেমন একটা চোখ নিয়ে তাকাতে রইলো। যেন কোনো মারাত্মক অপরাধ করে ফেলেছি!
আহাদ হোসাইন টুটুল: জ্বি, আমি করোনা পজিটিভ থেকে এখন নেগেটিভ। ১৪ দিন শেষে, আজ থেকে মহান আল্লাহ তায়ালা আমাকে মুক্তি দিয়েছেন। ১১ এপ্রিল প্রচন্ড জ্বর আর মাথা ব্যথা নিয়ে যখন সন্দেহবশত টেস্ট করাতে যায়, তখন ক্ষুনাক্ষরেও ভাবিনি এতো এতো সতর্ক থাকার পরেও আমার কোভিড-১৯ পজিটিভ আসবে। কিন্তু এসেছে...
গত ১১ই এপ্রিল সন্ধ্যা ৬:২৪ মিনিটে যখন ফোনে এসএমএস এলো, এক মূহুর্তের জন্য আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। দ্রুত মেয়ে আর তার মাকে দুরে সরে যেতে বললাম। বন্দি হলাম একা একটা রুমে। মাগরিবের নামাজ পড়ে, অফিসে জানালাম। সবাই সাহস দিলো। একটাই কথা- মনোবল হারানো যাবেনা।
মূহুর্তেই খবরটা ছড়িয়ে গেলো। পরিচিত অপরিচিত অনেক ফোন আসতে শুরু করলো। স্তব্ধতায় এতোটাই ডুবে গিয়েছিলাম যে, কারো ফোন রিসিভ করতে পারছিলাম না। তথ্য জানাতে শুধু আমার প্রতিষ্ঠানের এমডি, সিইও, নিউজ হেড আর এ্যসাইনমেন্ট এডিটরের সঙ্গে কিছু কথা শেয়ার করলাম। কারন সিদ্ধান্ত, অফিসে কারা আমার সাথে মিশেছে, তাদের আলাদা করতে হবে।
এরপরই শুরু হলো, আমার এক কক্ষে ১৪দিনের জীবন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আর দোয়ার পাশাপাশি, নিয়ম মেনে ১৫ দিনের ওষুধ চলতে থাকলো। অনেক শুভাকাঙ্ক্ষীর পরামর্শ অনুযায়ী গরম পানি খাওয়া, গরম পানিতে লবন লেবু দিয়ে গারগল করা, গরম পানির স্টিম নাক দিয়ে নিয়ে মুখ দিয়ে ছাড়া আর আদা-লেবু-গোলমরিচ-লবঙ্গ দিয়ে গরম পানি চায়ের মত করে খাওয়া চলতে থাকলো।
বিভীষিকার দিন ছিল, পরদিনই যখন থানা থেকে আমার এলাকা লকডাউন করতে এলো। সবাই আমার বাসার দিকে, কেমন একটা চোখ নিয়ে তাকাতে থাকলো। যেনো কোনো মারাত্মক অপরাধ করে ফেলেছি! কৃতজ্ঞতা এসআই মেহেদীর প্রতি, তিনি হ্যান্ডমাইকে এলাকায় ঘোষণা দিলেন- কোনো ধরনের হ্যারাসমেন্ট করা হলে ব্যবস্থা নিবেন।
১৪ দিনের এই সময়ে অনেকেই ফোন দিয়ে সাহস দিয়েছেন। পরিবার, সহকর্মী, বাড়ির মালিক, প্রিয় সংগঠনের বড় ভাইয়েরাসহ অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী খোঁজ নিয়েছেন। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আবার অনেকেই অনেক কাছে থেকেও, খোঁজ নেননি, ভালবাসা তাদের প্রতিও। অন্তত আগামী দিনগুলোর জন্য দোয়া করবেন।
আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর অশেষ রহমত এবং আপনাদের সবার দোয়ায় ১৪ দিন শেষে আমার কোভিড-১৯ রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। আজ দ্বিতীয়বার স্যাম্পল নিয়ে গেছে আইইডিসিআর। ইনশাআল্লাহ, দ্বিতীয়বার রিপোর্ট পাওয়া শেষে অচিরেই কাজে যোগ দিতে পারবো।
আমাদের কথা-আহাদ হোসাইন টুটুল কাজ করেন দীপ্ত টিভিতে, সিনিয়র ব্রডকাস্টিং জার্নালিস্ট হিসেবে। গত ১১ই এপ্রিল করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছিলেন তিনি, গতকাল নমুনা পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ এসেছে তার। মাঝে পেরিয়ে গেছে দুইটি সপ্তাহ, করোনাকে হারিয়ে ফেরার সেই ১৪ দিনের গল্পই তিনি শেয়ার করেছেন ফেসবুকে। এই লেখাটি তার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে নেয়া। আহাদ হোসাইন টুটুলের জন্য এগিয়ে চলো পরিবারের পক্ষ থেকে শুভকামনা, খুব শিগগিরই সুস্থ হয়ে তিনি কাজে যোগ দেবেন, স্বাভাবিক জীবনযাপন শুরু করবেন- এটাই আমাদের প্রার্থনা...
প্রিয় পাঠক, করোনার এই দিনগুলিতে নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত হতেই পারেন আপনি। সেটা হতে পারে অর্থনৈতিক, মানসিক- বা অন্য কিছু। আপনার সমস্যার কথা জানান আমাদের, আমরা চেষ্টা করব সেটা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অবহিত করার, যাতে বেরিয়ে আসে সমাধানের পথ।