প্রশ্ন করা হলো, তুমি হিন্দু না মুসলিম? উত্তর এলো, আমি ক্ষুধার্ত স্যার!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
আপনার কাছে আপনার ধর্মটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, সুবিধাঞ্চিত মানুষগুলোর কাছে তাদের প্রাপ্য নাগরিক অধিকারগুলো ততোটাই গুরুত্বপূর্ণ। যার প্রয়োজন রয়েছে প্রতিটা দিন, প্রতিটা মুহুর্তে। এবং এই অধিকারটা সমানভাবে সকলের। যা হনন করবার এখতিয়ার আমি-আপনি তো দূর, স্বয়ং রাষ্ট্রেরও নেই।
ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ নির্বিশেষে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা এবং নিরাপত্তাই মানুষের মৌলিক চাহিদাসমূহ। পৃথিবীর যেকোনো দেশের সংবিধানেই ব্যাপারগুলো প্রতিটা নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসেবে উল্লেখিত। এখন কেউ যদি এই চাহিদা সম্পর্কিত ব্যবসা করতে চায় তবে সেটা শুধু ব্যবসাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। কারণ, এগুলো শুধু চাহিদাই নয় বরং অধিকারও বটে।
এবং কারো অধিকার হনন করবার অধিকার কারোই নেই, এমনকি রাষ্ট্রেরও নেই। অর্থাৎ আপনি যদি খাবারের হোটেল, গার্মেন্টস, হাউজিং, হসপিটাল, স্কুল কিংবা নাইট গার্ড, এমনকি ইন্টারনেট প্রোভাইডের ব্যবসাও করেন তবে সেটা শুধু ব্যবসা নয় বরং সেবা এবং সেই সেবা থেকে সৃষ্টি হয় দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতা। এজন্য এক্ষেত্রে, আমার ব্যবসা 'আমি যা খুশি তাই করুম' টাইপ আচরণ আপনি করতে পারবেন না।
আপনার খুশিমতনই যদি ব্যবসা করতে ইচ্ছে করে তবে অন্যের মৌলিক অধিকার সম্পর্কিত 'ধান্দা' এড়িয়ে যেতে হবে আপনাকে। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান। তাই এই গরিষ্ঠ হিসেবেও দায়িত্বটা তাদের ওপরেও বর্তায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, প্রতিটা রমজানেই আমরা কিছু কমন নিউজ দেখি। জোর করে খাবারের দোকান বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। রমজান দেখে নাকি খাবারের দোকান খোলা রাখা যাবে না। সামান্য খাবারের দোকান দেখেই যদি রোজা রাখতে কষ্ট হয়ে যায়, তবে এ কেমন সংযম এদের?
এছাড়াও শিশু, অসুস্থ, মুসাফির, অন্যান্য ধর্মালম্বী বা বিনা ধর্মালম্বীদের মৌলিক অধিকারের ব্যাপার রয়েছে। শিধুদের অন্য খাবার কিনতে অনেক বড়রা যায়, সেক্ষেত্রে সন্তানের জন্য খাবার কিনতে যেয়ে অপমানিত হবার রেকর্ডও আছে এদেশে। এ কেমন সংযমের মাস, যেখানে কোনো খাবার কিংবা কাউকে খেতে দেখলেই নিজের সংযম ধরে রাখতে পারে না এরা।
অনেক খাবার দোকান, হোটেল, রেস্টুরেন্ট আছে যারা রমজান মাসে বন্ধ রাখে। এতে সবাই খুব উৎসাহ নিয়ে সাপোর্টও দেয়। অথচ এই খাবারটা মানুষের সবচাইতে বড় প্রয়োজন, বড় অধিকার। বাকি মৌলিক অধিকারের কথা নাহয় বাদই দিলাম। পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, খাদ্য এবং চিকিৎসা বিষয়ক কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান জোরপূর্বক অকারণে বন্ধ করাটা নির্বুদ্ধিতা এবং সয়াসরি মৌলিক অধিকার হরন। অথচ, এই কথাগুলো বললেই কোনো প্রক্রার বুদ্ধি বিবেচনা ছাড়াই সরাসরি বলা হবে- তুই নাস্তিক!
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ২৭-৪৪ অনুচ্ছেদে উল্লেখিত ৬টি সহ মোট ১৮টি মৌলিক অধিকারের উল্লেখ রয়েছে। ২৭ ও ২৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী এবং রাষ্ট্র কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করিবে না।
এছাড়াও ৩১ ও ৩২ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সুস্পষ্ট কারণ ছাড়া কোনো নাগরিকের বিরুদ্ধে এমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না যাতে তার জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পদের ক্ষতি হয়। প্রতিটি নাগরিকের নিজ নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতা থাকবে বলে ৪১ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, কাউকে জবরদস্তি করে কোনো ধর্ম পালনে বা পাঠদানে বাধ্য করা যাবে না।
অর্থাৎ, রাষ্ট্র কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের পক্ষে একপেশে কথা বলতে পারবে না। কারণ সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র কোনো বিশেষ ধর্মে বন্দী নয়। এবং ধর্মের মুখাপেক্ষী না হয়ে জনসাধারণের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করাই রাষ্ট্রের কর্তব্য। এবং সেই কর্তব্য সুষ্ঠুভাবে পালন করতে না পারলে তাকে বলা হয় ব্যর্থ রাষ্ট্র।
পাহাড়ের উপরে কিংবা নিচে; যে গোষ্ঠী, ধর্ম, বর্ণেরই হোক না কেনো- রাষ্ট্রের কাছে প্রতিটা নাগরিকের মৌলিক অধিকারই সমান। আপনার কাছে আপনার ধর্মটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, সুবিধাঞ্চিত মানুষগুলোর কাছে তাদের প্রাপ্য নাগরিক অধিকারগুলো ততোটাই গুরুত্বপূর্ণ। এইটুক উপলব্ধি করবার জন্য খুব বড় মাপের মনিষী কিংবা মহাপুরুষ হবার দরকার নেই। শুধুমাত্র চৌদ্দশো গ্রামের সুস্থ মস্তিস্ক থাকলেই হবে।
আরও পড়ুন-