কম্বোডিয়ায় সম্প্রতি একটি আইনের খসড়া হয়েছে। যেখানে বলা হচ্ছে, নারীরা ছোট পোশাক পড়লে দিতে হবে জরিমানা! এ নিয়ে বিক্ষোভে ফুঁসছে গোটা কম্বোডিয়া...

কম্বোডিয়ায় সম্প্রতি একটি অদ্ভুতুড়ে আইনের খসড়া করা হয়েছে। যে আইনে বলা হয়েছে, 'নারীরা খুব বেশি খোলামেলা ও খুব বেশি ছোট' কাপড় পরলে তাকে জরিমানা করা হবে। যে কাপড় পরলে নারীদের ও পুরুষদের শরীর দেখা দেয়, সে কাপড় পরলে জরিমানার বিধান রাখারও চিন্তাভাবনা করছে কম্বোডিয়ান সরকার।

এ খবরটা পড়ে খটকা রাখলো। একটা দেশের নাগরিক কী পোশাক পরবে, তা নিশ্চয়ই সে দেশের সরকার ঠিক করে দিতে পারে না। তাছাড়া এই হাস্যকর খসড়া আইনের কারণ হিসেবে তারা জানাচ্ছে, কম্বোডিয়ার সংস্কৃতিকে বাঁচানোর জন্যেই তারা এরকম আইন করছে। নারী ও পুরুষদের পোশাক যেখানে একটা দেশের সংস্কৃতিকে মুমূর্ষু করে ফেলে, সেই সংস্কৃতি বাঁচানোর জন্যে পোশাকের উপর নিষেধাজ্ঞা দিতে হয়, সেই সংস্কৃতি আসলে কতটা শক্তপোক্ত ও সুস্থ, তা নিয়ে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়। তাছাড়া, সরকার যদি এ আইন পাশ করে, সেক্ষেত্রে মানুষকে হেনস্থা করার জন্যেও এ আইনের যে যথেচ্ছ অপব্যবহার হবে না, তারও বা নিশ্চয়তা কী!

কম্বোডিয়ার মানুষ এই আইনের বিপক্ষে তাই শুরু করেছে জোরেসোরে আন্দোলন। সে দেশেরই এক তরুণী, যার নাম মলিকা টান, তিনি এই আইনের বিরুদ্ধে একটি অনলাইন পিটিশন দায়ের করেছেন। দেশটির একুশ হাজারেরও বেশি মানুষ, সেই পিটিশনে সাক্ষরও করেছেন! সবারই এক কথা, পোশাক পরছেন তারা তাদের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্যে। সেখানে কেন সরকার বিধিনিষেধ দেবে? মলিকা টানের এই উদ্যোগে সাড়া  দিয়েছেন অনেক কম্বোডিয়ান নাগরিকই।#mybodymychoice-এই হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে প্রতিবাদী নাগরিকদের নানা পোশাকে তোলা বিভিন্ন রকম ছবিও। তারা এভাবেই অনলাইনে প্রতিবাদ করে যাচ্ছেন।

এই বিতর্কিত খসড়া আইনের প্রতিবাদে নারীরা এগিয়ে আসছে জোরেসোরেই

কম্বোডিয়ার সরকার নারীদের পোশাক নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই উঠেপড়ে লেগেছে। ছোট পোশাক পরার কারণে গায়িকাকে স্টেজে উঠতে না দেয়া সহ অনেক রকম নির্যাতনই করেছে কম্বোডিয়ার সরকার, সাম্প্রতিক বিভিন্ন সময়ে। তারই ফলশ্রুতিতে এরকম বিতর্কিত এক আইনের অবতারণা করেছে দেশটি। কম্বোডিয়া দেশটির একটি সমস্যা হলো, এ দেশে হুটহাট আইন পাশ হয়ে যায়। সাধারণ নাগরিকদের ঠিক এখানেই ভয়। না জানিয়ে কখন যেন আবার এই বিতর্কিত আইন টা না পাশ হয়ে যায়! এ কারণেই জোরেসোরে আন্দোলন করছে মানুষজন।

পৃথিবী যত সভ্য হচ্ছে, সে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানুষের অসভ্যতা৷ প্রতিদিনই উন্নত প্রযুক্তির ছড়াছড়ি দেখছি আমরা, সে সাথে দেখছি, ধর্ষণ, খুন, নির্যাতনেরও আধিক্য। কম্বোডিয়ার এই জাতীয় খসড়া আইন যেন সেই অসভ্যতারই বহিঃপ্রকাশ। পোশাকে সীমানা দিয়ে তারা কোন সংস্কৃতির মহাউন্নয়ন সাধন করবেন, তা প্রশ্নবিদ্ধ। তবে মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতাকে আটকে দেয়ার তাদের যে অপচেষ্টা, সেটি খুব দৃষ্টিকটু এবং নগ্ন পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবেরই বহিঃপ্রকাশ!

এরকম অসুস্থ মানসিকতার আইন পাশ না হোক, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা