যুদ্ধরত সৈনিকদের খাবারের সরবরাহ যাতে ঠিক থাকে, এজন্য মুখের খাবার কেড়ে নিয়ে, চালের দাম বাড়িয়ে দিয়ে ঠান্ডা মাথায় মরতে দেয়া হয়েছিল বাঙ্গালীদের। ত্রিশ লক্ষ লোক মারা গিয়েছিল শুধু 'চার্চিলসৃষ্ট' এই দুর্ভিক্ষে...

কুছ কালা আদমী মর গিয়া তো হামি কি কারিবে? উহারা লাইক ইনসেক্ট, জান্মাবে-মারবে, মারবে-জান্মাবে! ইটা নিয়া এতো কনসার্নের কিচু নাই। জেন্টেলম্যান, উই হ্যাভ আ গট ওয়ার্ল্ড ওয়ার টু ডিল উইথ! লেটস কনসেনট্রেট দেয়ার! 

'চার্চিল'স সিক্রেট ওয়ার' বইয়ে মধুশ্রী মুখার্জি রীতিমত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময় ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার যেসব বৈঠক হয়েছে, এসব বৈঠকের বিশ্লেষণ ও মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন নথিপত্রের তথ্য উপস্থাপন করে দেখিয়ে দিয়েছেন যে যখন বাংলার পথে প্রান্তরে এক মুঠো ভাতের জন্য কংকালাসার মৃতপ্রায় মানুষের হাহাকার চলছে, এখানে-ওখানে খেতে না পেয়ে মরে যাওয়া হাড্ডিসার লাশ পড়ে আছে, তখন জরুরি খাদ্য সরবরাহের জন্য বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের কাছে আবেদন করেও বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন ভারতের তৎকালীন ব্রিটিশ কর্মকর্তারা। 

বিভিন্ন গ্রাম থেকে তখন বুভুক্ষু হাজার হাজার মানুষ একমুঠো অন্নের আশায় কলকাতার দিকে ছুটে এলেও চালে ঠাসা ব্রিটিশ জাহাজগুলো তখন অস্ট্রেলিয়া থেকে এসে ভারতের পাশ দিয়ে চলে গেছে ভূমধ্যসাগরীয় এলাকার দিকে। ওই এলাকায় খাদ্যশস্যের বিশাল মজুদ গড়ে তোলা হয়েছিল যুদ্ধরত ব্রিটিশ সেনাদের জন্য ও কর্মরত কর্মীদের জন্য। 

তৎকালীন সময়ে চাল আমদানীর অন্যতম উৎস বার্মাকে (বর্তমান মায়ানমার) জাপান দখল করে নেওয়ার পর তেতাল্লিশের মন্বন্তর বা দুর্ভিক্ষ শুরু হয়। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের নির্দেশে পুরো বাংলা থেকে বিপুল পরিমাণ খাদ্য মজুদ করা হয় ব্রিটিশ সেনা ও যুদ্ধরত কর্মীদের জন্য, ফলে চালের দাম বেড়ে যায় এক লাফে, এবং বাজারে চাল দুষ্প্রাপ্য হয়ে ওঠে। 

উইনস্টন চার্চিল, যার কারণে মৃত্যু হয়েছিল ত্রিশ লক্ষ বাঙালীর

বিশ্বযুদ্ধরত সেনাদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া চার্চিলের কাছে ভারতের জনগণ আসলেই পোকামাকড়ের চেয়ে বেশি কিছু ছিল না খুব সম্ভবত, নইলে এভাবে সরকারী নির্দেশ দিয়ে জনগণের খাদ্য মজুদ করিয়ে তাদের সামান্য খাবারের জন্য হাহাকার করে মরতে দেবার অবিশ্বাস্য ঘটনা খুব স্বাভাবিকভাবে ঘটতে দেবার কথা না। 

আরো ভয়াবহ ব্যাপারটা ছিল যে, জাপান ভারত দখল করলে খাদ্য যাতে শত্রুর হাতে না পৌঁছায়, সে জন্য চার্চিলের নির্দেশে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সেটা হচ্ছে বাংলার নানা অঞ্চলের নৌকা ও গরুর গাড়ি হয় বাজেয়াপ্ত—নয় তো ধ্বংস করে ফেলা হয়। ফলে দুর্ভিক্ষ চলাকালে বাংলার এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে চাল বা খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থাও ভেঙে পড়ে।

এই মানবসৃষ্ট, বা আরো সরাসরি বললে চার্চিলসৃষ্ট দুর্ভিক্ষে ৩০ লাখের বেশি বাঙ্গালী মারা যায়। আরো পরিস্কার করে বললে খাবার কেড়ে নিয়ে ঠান্ডা মাথায় মরতে দেয়া হয় বাঙ্গালীদের উপর, যেটাও একধরনের গণহত্যা। মাত্র ৩ দশকের ব্যবধানে পর পর দুটো ভয়াবহ গণহত্যা ও জেনোসাইডের শিকার হয়েছিল বাঙ্গালী জাতি। 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা