বাড়ির সামনে এক টুকরো ফাঁকা জায়গা রাখাটা বৃটিশদের কাছে ছিল বিলাসিতা। সেটাই আমেরিকায় এসে হয়ে গেল প্রয়োজনীয় জিনিস! বুকে হাত দিয়ে বলুন তো, কারো বাড়ির সামনে সবুজ ঘাসে ঢাকা এক চিলতে লন দেখলে তার আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে একটা ভালো ধারণা জন্ম নেয় না আপনার মনে?

১. যদি আপনাকে বলি একটা দেশের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ফসল হচ্ছে, ঘাস। সম্ভবত হেসে উড়িয়ে দেবেন। কেউ কেউ হয়ত যুক্তি দিয়ে ভাবতে পারেন, গবাদি পশুর কথা অথবা কারো মনে ঐ দেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাস নিয়েও কৌতুহল হতে পারে। না, এমন কোন ব্যাপার নেই। শুধুমাত্র বাড়ির সামনে এক টুকরো খালি জমি যেখানে সুন্দর করে ছাটা সবুজ ঘাস “শোভা” পায়। পুরো দেশজুড়ে প্রায় সব বাড়ির উঠোনই এমন সবুজ ঘাসের লন। আর দেশটার নাম আমেরিকা। 

আমেরিকার আয়তন ৯৮ লক্ষ বর্গকিমি, বাংলাদেশের চেয়ে প্রায় ৭০ গুণ বড় দেশটায় মানুষ থাকে ৩২ কোটি। এইটুকুতেও আসলে ঠিক বোঝা যায় না দেশটা কতো বড়। একটা মজার ফ্যাক্ট বললে ধারণা করতে সুবিধা হবে। বাংলাদেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে যতজন করে মানুষ থাকে, সেই একই ঘনত্বে যদি আমেরিকাতেও মানুষ থাকত তাহলে পুরো পৃথিবীর মানুষ সেখানে জায়গা হত। শুধু এটুকুই না, এরপরেও এক-তৃতীয়াংশের বেশি জায়গা খালি থেকে যেত। তাই অনেক মরুভূমি, পাহাড়-পর্বত, বন-জঙ্গল থাকার পরেও খুব আরাম আয়েসে হাত পা ছড়িয়ে থাকার জায়গা আছে আমেরিকানদের। অগাধ জায়গা আছে বাড়ির সামনে এক টুকরো লন রাখবার মতন বিলাসিতা করার। 

আমেরিকার প্রায় ৮০ শতাংশ বাড়ির সামনে সবুজ লন আছে। এগুলো যে শুধু পর্যাপ্ত জমির বিলাসিতা তা কিন্তু নয়। ঘাসের লন থেকে কোন খাদ্যশস্য পাওয়া যায় না। গরু ছাগল বা অন্য কোন পশুও এই ঘাস খায় না। অথচ বছরের পর বছর ধরে আমেরিকানরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করে এই ঘাসের যত্নে। লনমোয়ার দিয়ে ঘাস কাঁটা, সময় করে স্প্রিঙ্কলার দিয়ে পানি দেয়া আর নিয়ম করে সার-কীটনাশক দেয়া। আর এই সময়ে এসে পুরো আমেরিকার সব লন মিলিয়ে ফেললে তার মোট আয়তন হবে প্রায় ১ লক্ষ ২৮ হাজার বর্গকিলোমিটার। অন্তত একশটা দেশ আছে, যাদের কি না দেশটাই এত বড় না! 

জানলে অবাক হবেন যে, কোন উৎপাদনশীল কারণ ছাড়াই আমেরিকায় প্রতি বছর ঘাসের পিছনে খরচ হওয়া পানি আর কর্মঘণ্টার পরিমাণ প্রধান দুটো খাদ্যশস্যে (গম আর যব) ব্যবহৃত পানি আর সময়ের চেয়েও বেশি। রেসিডেন্সিয়াল ওয়াটারের অর্ধেকের বেশি খরচ হয় এই ঘাসের জন্যে। আর আমেরিকানরা প্রতি বছর মোটামুটি তিনশ কোটি ঘণ্টা ব্যয় করে এই ঘাসের পেছনে। সেখানে প্রায় ১৫০০ কোটি ডলারের একটা ইন্ডাস্ট্রিই আছে এই লনকে ঘিরে।

২. একটা সুন্দর দোতলা বাড়ির, ডুপ্লেক্স ভেবে নিন, সামনে বেশ খানিকটা জায়গা জুড়ে সবুজ এক টুকরো লন। “এমন একটা বাড়ি যদি থাকত!” এমনটা হয়ত অনেকেই ভেবে ফেলেছেন। আমাদের দেশের বাস্তবতায় এমনটা হাতেগোনা কয়েকজন মানুষের কাছেই বাস্তব, তবে আমেরিকার মতন অনেক দেশেই নতুন কোন বাড়ি বানাবার সময় যে কেউই বাড়ির সামনে এক টুকরো লন রাখতে চান। আপনি তাদের জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন, কেন? সম্ভাব্য উত্তর হবে, লন খুব সুন্দর এবং বাড়িটাকেও আরও সুন্দর লাগবে। 

কিন্তু কেন আমরা মনে করে নিচ্ছি লন সুন্দর, তার পিছনে বেশ পুরনো একটা ইতিহাস আছে। আমাদের হান্টার গ্যাদারার পূর্বপুরুষরা তাদের গুহার বাইরে ঘাস লাগিয়ে রাখত না। এমনকি দুই আড়াই হাজার বছর আগেও আপনি এথেনিয়ান এক্রোপলিস, রোমান ক্যাপিটল কিংবা বেইজিং এর নিষিদ্ধ নগরীতে এমন কোন স্থাপনা পাবেন না যার সামনে সবুজ লন আছে। সবুজ ঘাসের এই বিপ্লবের শুরুটা আরও অনেক পরে ইয়োরোপের ব্রিটেন আর ফ্রান্সে। 

মধ্য যুগে ব্রিটিশ ডিউকদের, যাদের কিনা অগাধ সম্পদ আর জায়গা জমি, বিরাট সব দুর্গের চারপাশে বিস্তৃত খালি জায়গা পড়ে থাকত। কোনরকম গাছপালা রাখা হত না। যাতে অনেক দূর থেকেই শত্রুর আনাগোনা, অবস্থান স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যায়। তখনো অবশ্য এ জায়গাটার আরও ব্যবহার ছিল। সাধারণ মানুষের অর্থাৎ কমনারদের গরু-ছাগল এসব মাঠে চরে বেড়াত। তাতে প্রাকৃতিকভাবেই ঘাস সার পেয়ে বড় হত, আবার ঐ গরু-ছাগলই ন্যাচারাল লনমোয়ার হিসেবে কাজ করত। 

৩. এমনটা চলতে চলতে ষোল শতকে এসে ব্রিটিশ অভিজাত ধনীদের আভিজাত্যের একটা অপরিহার্য চিহ্ন হয়ে গেল বাড়ির চারপাশের এই সবুজ লন। ততদিনে নিরাপত্তার জন্যে প্রয়োজনীয়তা কিংবা অন্যান্য বৈষয়িক কারণ হারিয়ে গেছে। লনমোয়ার আর অটোমেটিক ওয়াটার স্প্রিঙ্কলার আবিষ্কার হবার আগে একটা পরিপাটি লনের পেছনে শুধু জমিই না অনেক পরিশ্রম, সময় আর অর্থ ব্যয় হত। অথচ এর বিনিময়ে সত্যিতে আপনি কোন কিছু পাচ্ছেন না, এমনকি গরু ছাগলও চড়ে বেড়াতে পারছে না। গরীব কৃষকের পক্ষে এমন অনুৎপাদনশীল কাজে জমি নষ্ট করার উপায় ছিল না। আবার মধ্যবিত্ত বা উচ্চ-মধ্যবিত্তের জমি থাকলেও অত টাকা পয়সা খরচ করা সম্ভব ছিল না। 

অর্থাৎ আপনার লন আছে, তার মানেই আপনি প্রচন্ড ধনী মানুষ। আপনার পরিপাটি সবুজ লন বাড়ির সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়া পথিককে যেন আপনার হয়েই গম্ভীর স্বরে বলে "আমার অনেক সম্পদ, অর্থকড়ি এবং আমি অনেক ক্ষমতাবান। আমার একরের পর একর জমি আছে। আমি এই সবুজের বিলাসিতা করতে পারি।" ঐ সময়টায় আপনি কোন ডিউকের বাড়ির লন দেখেই তার অবস্থা সম্পর্কে খানিকটা ধারণা করে নিতে পারতেন। লন তেমন একটা সাজানো গোছানো না, আগাছায় ভর্তি, অসমান ঘাস! তার মানে লনের মালিকের খুব একটা সুবিধার সময় যাচ্ছে না। 

৪. লনের কদর আরও বেড়ে যায় আঠার শতকে এসে যখন উইলিয়াম কেন্ট আর ল্যান্সলট ব্রাউন নামের দুই ব্রিটিশ ভদ্রলোক লন আর বাড়ির ধারণায় অনেক বদল আনলেন আর ধারণা দিলেন আধুনিক পার্কের। ব্রাউন, যাকে কি না ইংল্যান্ডের গ্রেটেস্ট গার্ডেনার বলা হয়, একাই ১৭০ টা পার্কের ডিজাইন করেছিলেন। তবে লনের বর্তমান জনপ্রিয়তার শুরুটা ১৮৩০ সালে, যখন এডউইন বেয়ার্ড বাডিং লনমোয়ার আবিষ্কার করলেন। তারপর থেকে লনের পরিচর্যা অপেক্ষাকৃত সহজ এবং সস্তা হয়ে গেলে অনেক মধ্যবিত্তের পক্ষেও সম্ভব হয় এই বিলাসিতায় সামিল হবার। 

তারও কিছুদিন পর ১৮৭১ সালে আরও একটা আবিষ্কার লনকে আরও সাশ্রয়ী বানিয়ে ফেলে। সেটা হচ্ছে লন ওয়াটার স্প্রিঙ্কলার। আবিষ্কার করেছিলেন জোসেফ লেসলার নামের এক আমেরিকান। এসব সুবিধায় মধ্যবিত্ত সমাজও এই চর্চা শুরু করল। ডিউকদের ক্যাসেলের বিরাট সব লন না হলেও, বাড়ির সামনে মোটামুটি একটা জায়গা খালি রাখা শুরু করল তারা। ব্যাপারটা সত্যিতে ছিল উচ্চবিত্তদের অনুকরণ করে তাদের মতন হতে চাওয়ার প্রবণতা। ভিক্টোরিয়ান যুগ শেষ হতে হতে ব্রিটিশ মধ্যবিত্তের কাছে লন খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় হয়ে উঠল। 

৫. তবে আমেরিকায় লন এবং লনের ঘাসের বিস্তার আরও অন্যরকম। প্রাচীনকাল থেকে উত্তর আমেরিকায় সাধারণত ব্রুম স্ট্র, মার্শ গ্রাস বা রাই জাতীয় ঘাস হত। এগুলো কোনটাই ইয়োরোপে লনে থাকত না। ইয়োরোপিয়ানরা আমেরিকা "আবিষ্কার" করার পর যখন ব্রিটিশরা আটলান্টিক পাড়ি দিতে থাকে, তারা অন্য অনেক কিছুর সাথে ঘাসও নিয়ে আসে। এতটাই দ্রুত এসব ঘাসের বিস্তার হয় যে এক দেড়শ বছরের মাথায় আমেরিকান ঘাস প্রায় বিলুপ্তির কাছাকাছি চলে যায়। 

আমেরিকায় লনের জনপ্রিয়তা উচ্চবিত্তের হাত ধরে আসেনি, এসেছিল মধ্যবিত্তের সাথে। গত শতাব্দীর মাঝামাঝি আমেরিকায় মধ্যবিত্তের কাছে বাড়ির লন খুব স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে যায়। আর তার জন্যে “দায়ী” আব্রাহাম লেভিট নামের এক রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী। 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আমেরিকানরা বেশ অনেকদিনের জন্যে খুব আনন্দময় একটা সময়ে প্রবেশ করেছিল। সময়টায় আমেরিকান জ্যাজের, আর সবার আনন্দ ফুর্তির। ততদিনে লন পরিচর্যা মোটামুটি সহজ হয়ে যাওয়ায়, বিশের দশকেই আমেরিকান অনেক বাড়ির সামনে লন থাকত। কিন্তু তিরিশের দশকে শুরু হয় আমেরিকার ইতিহাসের সবচাইতে বড় অর্থনৈতিক দুর্যোগ "দ্য গ্রেট ডিপ্রেশন"। তখন মানুষের পক্ষে খেয়ে পরে বেঁচে থাকাটাই একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়, লনের কথা চিন্তা করাও সম্ভব হয় না। 

তারপর যেটা হয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপর যখন আমেরিকান শহরগুলোয় আবাসন সংকট প্রকট হতে থাকে, তখন লেভিট এন্ড সন্স বেশ কিছু বড় শহরের বাইরের দিকে অনেক বাড়ি বানাতে থাকে। যেগুলো দেখতে প্রায় একইরকম আর দামেও বেশ সস্তা। আর হ্যাঁ, প্রতিটা বাড়ির সামনেই ছিল এক টুকরো খালি জায়গা। চার বছরে তারা বানিয়েছিলেন প্রায় ১৭ হাজার বাড়ি। কিছুদিনের মধ্যেই সাবআরবান এলাকার সবচাইতে বড় বৈশিষ্ট্য হয়ে যায় এই বাড়ির সবুজ লন। পুরো আমেরিকাতেই মধ্যবিত্তের কাছে এটা আদর্শ হয়ে যায়। 

৬. শুধু বাড়ির লনই কি গুরুত্ব পেয়েছে? না! রাজা-রানী, ডিউকদের অধিকাংশই ইতিহাস হয়ে আছে এখন। তবে তারা বাস্তবতা থেকে হারিয়ে গেলেও লন হারায়নি। রাজতন্ত্রের বদলে এসেছে গণতন্ত্র। ডিউকদের জায়গায় এসেছেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিচারপতিরা। তাদের বাড়ি কিংবা অফিসের সামনেও শোভা পায় বিরাট সব লন। আমাদের সংসদ ভবন, সুপ্রিম কোর্ট কিংবা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কথাই মনে করে দেখুন না। হোয়াইট হাউস থেকে শুরু করে বাকিংহাম প্যালেস কোথায় নেই লন? যেকোনো বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়েও সবুজ লন খুব পরিচিত একটা দৃশ্য, সেটা অক্সফোর্ড থেকে ক্যামব্রিজ হয়ে হার্ভার্ড বা প্রিন্সটন সবার জন্যেই সত্যি।

অথচ এইসব "গুরুত্বপূর্ণ" লনে বছরের কয়েকটা দিন উদযাপন কিংবা কিছু অনুষ্ঠান ছাড়া সারা বছর খালি পড়ে থাকে। ঠিক করে বলতে কাউকে নামতেই দেয়া হয় না। আমাদের সংসদ ভবনের সামনের বিরাট সবুজ চত্বরে এক সময় নিয়মিত মানুষ ঘুরে বেড়াত। বেশ অনেক বছর হয় সেখানে আর আমরা যেতে পারি না। 

৭. এখানেই শেষ না। হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ মরুভূমির বালি থেকে শুরু করে মেরু অঞ্চলের বরফ কিংবা বিস্তীর্ণ প্রেইরিতে অসংখ্য রকমের খেলাধুলা করেছে। কিন্তু এই গত দুইশ বছরে পৃথিবীর সবচাইতে জনপ্রিয় খেলাগুলোর প্রায় সবকটাই ঘাসের লন অথবা টার্ফের উপর খেলতে হয়। ফুটবল, ক্রিকেট, রাগবি, লন টেনিসের মতন খেলাগুলো চাইলেই হয়ত বালিতে খেলা যেত, যায়ও অবশ্য। 

ফুটবলের দেশ ব্রাজিলে কতশত ছেলেপিলে খালি পায়ে ছেড়া একটা বল দিয়ে রিও ডি জেনেরিওর সৈকতে ফুটবল খেলে একসময় পেলে কিংবা রোনাল্ডিনহো হয়ে যায়। আবার কাকার মতন যারা খুব ধনী পরিবারের সন্তান তারা, ছোটবেলা থেকেই সবুজ ঘাসের টার্ফের উপর খেলে বড় হয়। এদিক দিয়ে লন টেনিস বেশ সাম্যবাদী, চারটি গ্র্যান্ডস্লামের একটা হয় মাটিতে, দুটো হয় হার্ডকোর্টে আর একটা হয় কিনা সবুজ লনে। অবশ্য এই সবুজ লনের গ্র্যান্ডস্লাম উইম্বলডনই সবচাইতে বেশি সম্মানের। 

আর এমনিতেই ধনীদের খেলা গলফের কথাই মনে করে দেখুন না। আপনি কখনো কোন গরীব বা মধ্যবিত্তকে গলফ খেলতে দেখবেন না। গলফ খেলেই সমাজের ধনী আর ক্ষমতাবান মানুষেরা। খেলাটা হয়ও সবুজ বিস্তীর্ণ উঁচুনিচু মাঠে। 

৮. ধীরে ধীরে আমেরিকা আর ইংল্যান্ডের গন্ডি পেরিয়ে মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়াতেও উচ্চ-মধ্যবিত্তের কাছে লন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মধ্যপ্রাচ্যেও এখন সাবআরবান এলাকার ধনীদের বাড়ির সামনে বড় বড় সব লন থাকে। অনেক মসজিদের সামনেও এখন সুবিশাল সব লন দেখা যায়। একটা মানুষ হয়তো কোনোদিন হোয়াইট হাউসের লন দেখেনি, ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে বসে এফএ কাপের ফাইনাল দেখেনি কিংবা হয়ত কোন হলিউড সিনেমায় দেখেনি কেভিন স্পেইসি লনের পরিচর্যা করছেন। তারপরেও সে কোথাও একটা লন সহ বাড়ি দেখলে আপনাআপনিই বুঝে নেবে যে, এটা যেনতেন কারো বাড়ি না।

মানুষ নিজে যে বাস্তবতায় বড় হয়, তাকেই একমাত্র সত্য হিসেবে মনে করে নেয়। আমরা জন্মের পর থেকেই দেখে আসছি, যাদের বাড়ির সামনে খোলা জায়গা আছে, তারা অনেক ধনী। তাদের সবকিছুকেই আমরা সম্মানের এবং সুন্দর ভাবতে থাকি। এটা খুব সহজে দূর করা যায় না। সত্যি বলতে অধিকাংশ মানুষের পক্ষেই ভাবা সম্ভব হয় না, অন্য কোন বাস্তবতাও সম্ভব। তাই সারা পৃথিবীর মানুষই নিজের অজান্তে লনকে ক্ষমতা, টাকা এবং সম্মানের একটা মাপকাঠি হিসেবে ভেবে নেয়। 

হতে পারে, এই লেখা পড়ে আপনি নিজেই নতুন বাড়ি করবার সময় লন রাখার কথা একবারের জন্য হলেও ভাববেন। আবার আপনি চাইলেই এই দীর্ঘদিনের আরোপিত সৌন্দর্যের ধারণাকে ছুড়ে ফেলে দিতে পারেন। চাইলে ঘাসের লনের বদলে একেবারেই অন্যরকম কোন ধারণা আনতে পারেন। ইতিহাস জানার গুরুত্বপূর্ণ কারণ কেবলমাত্র ভবিষ্যতকে অনুমান করা তা কিন্তু নয়, বরং আরও গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে নিজেকে অতীতের আরোপিত ধারণা থেকে বের করে নতুন কোন বিকল্প ধারণা নিয়ে আসা। এটা অবশ্যই সত্যিকারের স্বাধীনতা না, আমরা চাইলেই অতীতের এঁকে যাওয়া মানচিত্রের বাইরে বের হতে পারি না সবসময়। তবে কিছুটা স্বাধীনতা তো অন্তত পুরোপুরি বন্দি জীবনের চেয়ে ভালো! 

(ইউভাল নোয়াহ হারারির “হোমো ডিউস” থেকে অনুপ্রাণিত)


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা