কৃষ্ণাঙ্গ এক যুবককে ভালোবেসেছিলেন ব্রিটিশ বাংলাদেশী এক তরুনী। মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হবার পর পালিয়ে যায় ছেলেটি। পরিবার থেকে বলা হয় গর্ভপাতের জন্যে। কিন্তু মেয়েটি অনড়, এই সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখাবে সে যেকোনো মূল্যে...

যে সত্য ঘটনাটি লিখছি, সে ঘটনাটির বেশ কয়েক স্তর আছে। কোনো স্তরে তীব্র ভালোবাসা, কোনো স্তরে বিশ্বাসহীনতা, কোনো স্তরে সমাজের গৎবাঁধা চিন্তাধারার ভিন্নস্রোতের আখ্যান... এ গল্পের অথবা এ  ঘটনার তাই কোনো একক শিরোনাম নেই। পুরোপুরি শিরোনামহীন এক ঘটনা এটি।

এ গল্প এক ব্রিটিশ বাঙ্গালী পরিবারের মেয়ের। যে মেয়ের পরিবার লন্ডনে এসেছিলো  ত্রিশ বছর আগে। বাংলাদেশ থেকে এসে তারা উঠেছিলেন লন্ডনের বিলাসবহুল দোকান হ্যারডস থেকে হাঁটা পথ দূরের এক হা‌উজিং এস্টেটে। প্রথম প্রথম বিদেশে এসে ঘোর লেগেছিলো পরিবারের প্রত্যেক সদস্যেরই। সেই ঘোর কেটে যায় যখন এই মেয়েটির বাবা-মা'র ডিভোর্স হয়ে যায়। মায়ের সাথে মেয়েটি ও তার ভাই চলে আসে লন্ডনের আরেক অংশে।

যে বাড়িতে তারা থাকতেন, সে বাড়ির পাশেই আরেক বাড়িতে থাকতো এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবক। সেই যুবকের প্রেমে খুব তাড়াতাড়িই মজে যায় মেয়েটি। কিন্তু পরিবার থেকে সে প্রেম মেনে নেয়া হয় না। পরিবার থেকে বলা হয়, কৃষ্ণাঙ্গরা খারাপ। মেয়েদের শরীরকে ভোগ করে ছুঁড়ে ফেলে দেয় তারা। তাছাড়া বাঙ্গালী প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, যাদের গায়ের চামড়া ফর্সা, তারাই ভালো। সে হিসেবে, কৃষ্ণাঙ্গদের একটু ঋণাত্মক দৃষ্টিতে দেখারই চল ছিলো তখন। কিন্তু ততক্ষণে বড্ড দেরী হয়ে গিয়েছে। বাঙ্গালী মেয়েটির সাথে সেই কৃষ্ণাঙ্গ ছেলেটির গভীর প্রেম চলছে তখন।

জাত-ধর্ম-বর্ণ ভুলেই বাঙ্গালী তরুনীটি ভালোবেসেছিলো কৃষ্ণাঙ্গ সেই লম্পটকে! 

অবিবাহিত মেয়েটিকে অন্তঃসত্ত্বা করে সেই কৃষ্ণাঙ্গ যুবকটি। মেয়েটির বয়স তখন একুশ। এর আগেও ষোল বছর বয়সে আরেকবার অন্তঃসত্ত্বা হয়েছিলো সে। তখন অবশ্য গর্ভপাত করা হয় তার। কিন্তু এবার মেয়েটি প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গিয়েছে। সে এবার সাফ জানিয়ে দেয়, এ বাচ্চাটি সে রাখবে৷ আলোর মুখ দেখাবে এ বাচ্চাটিকে। ওদিকে মেয়েটি জানতে পেরেছে, কৃষ্ণাঙ্গ প্রেমিকটি চলে গিয়েছে তাকে কিছু না বলে। জানা গিয়েছে, অন্য একাধিক মেয়ের সাথেও আছে তার শারিরীক সম্পর্ক। বাঙ্গালী মেয়েটির মাথায় যেন ভেঙ্গে পড়ে এক ফালি আকাশ। কী করবে সে! বাসা থেকে বারবার বলা হচ্ছে, বাচ্চাটিকে নষ্ট করার জন্যে। মেয়েটিও বলছে, এই বাচ্চা সে নষ্ট করবে না। এরকমই একদিন পরিবারের সাথে লড়াই করতে করতে ক্লান্ত হয়ে মেয়েটি নিজের বাসা ছেড়ে দেয়। গর্ভের সন্তানকে নিয়ে চেনা চৌহদ্দি ছেড়ে বেড়িয়ে আসে সে রাস্তায়।

এরপরে কীভাবে লড়াই করেছে, তা শুধু সেই মেয়েটিই জানে। সন্তানের যখন বয়স এক সপ্তাহ, মেয়েটি আবার মায়ের বাড়িতে ফেরে। বড়দিনের উৎসবের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাড়ি। ভয়ে ভয়ে চেনা চৌহদ্দিতে প্রবেশ আবার। মা মেনে নেন সন্তানকে, পরিবারের বাকিরাও মেনে নেয় মেয়েটিকে। এক ফালি আকাশ মাথার উপরে ছায়া হয়ে যায় আবার।

কিন্তু সে সুখ বেশিদিন সয় না কপালে। কৃষ্ণাঙ্গ যে ছেলেটিকে এই বাঙ্গালী মেয়েটি ভালোবেসেছিলো, সে যে কত লম্পট, তার প্রমাণ মাঝেমধ্যেই আসতো। মেয়েটি দিশেহারা হয়ে যেতো। বিষন্নতা ভর করতো। বিষন্নতা কাটাতে সে বই পড়া শুরু করলো, পড়াশোনা শুরু করলো, বন্ধুবান্ধবদের সাথে কথাবার্তা শুরু করলো। বিষন্নতা কাটলো। এর মাঝখানে মেয়েটি আবারও সেই কৃষ্ণাঙ্গ ছেলের কাছে ছুটে গিয়েছিলো। আবারও সেই একই ভুল। আবার অন্তঃসত্ত্বা হলো মেয়েটি, সেই কৃষ্ণাঙ্গ যুবক এবারও সন্তানের দায়ভার নিতে চাইলো না।। বাঙ্গালী মেয়েটি তখন চিরতরে চলে আসে মায়ের পরিবারে, সব কিছু ছেড়েছুড়ে, দুই সন্তান সাথে নিয়ে।

মেয়েটি এখন সুখেই আছে। পরিবারের সাথেই আছে। সম্প্রতি মেয়েটির ভাইটিও এক কৃষ্ণাঙ্গ মেয়েকে পছন্দ করেছে। মা তাতেও খুব একটা আপত্তি করেন নি। আত্মীয়স্বজনেরাও মেনে নিয়েছেন এ বাস্তবতাকে। মেয়েটিও বুঝতে পেরেছে, মা খুব একটা ভুল ছিলেন না। ভুল ছিলো না মেয়েটির ভালোবাসাও।

তবে ভুল ছিলো সময়ের গতিপথ ও আবেগের অনিয়ন্ত্রিত ব্রেকফেল। যার ফলাফল, এই ট্রাজিক গল্প। গল্পের চেয়েও বেশি চমকে ঠাসা এ সত্য ঘটনায় আমরা তাই বিচার করতে পারি না কাউকে। কাউকে দোষারোপও করা যায় না ঠিক। আমাদের ভেতরটা দিকশূন্যপূর হয়ে যায়। আমরা অজান্তেই বলে ওঠি-

সখী, ভালোবাসা কারে কয়!

বিশেষ দ্রষ্টব্য- ফিচার্ড ইমেজটি প্রতীকি।

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা