
ব্রাঞ্জেলিনা দম্পতির সন্তান দত্তক নেয়ার গল্প বেশ জনপ্রিয়, কমবেশি সবাই জানেন। নিজেদের ৩টি সন্তান এবং দত্তক নেয়া ৩টি সন্তান মিলে তাদের মোট সন্তান সংখ্যা মোট ছয়। এই দত্তক নেয়া তিন সন্তান, জাহারা, প্যাক্স ও ম্যাডক্সের মধ্যে জাহারার গল্পটা একটু অন্যরকম...
অ্যাঞ্জেলিনা জোলি-ব্রাড পিট দম্পতি ছিলেন হলিউডের স্রোতের বিপরীতে চলতে থাকা এক দম্পতি। শুধু হলিউডও বা কেন বলছি, পৃথিবীর সবখানেই যখন শুনি ভাঙনের সুর, সম্পর্ক গড়ার আগেই সম্পর্ক ভেঙ্গে যাচ্ছে নিয়মিত, শোবিজের ক্ষেত্রে সেটা যখন আরো মহামারী আকারে প্রকট, সেখানে এই দম্পতির এতকাল ধরে একত্রে থাকা ভিন্ন গল্পেরই ইঙ্গিত দেয়।
যদিও সেই দম্পতি একসাথে এখন আর নেই, তবে তাদের একসাথে করা অসাধারণ সুন্দর পদক্ষেপগুলো এখনো মানুষকে অনুপ্রেরণা দেয়, ভালো কিছু করার। সেরকমই এক পদক্ষেপ, এক গল্পের নাম- জাহারা মার্লে জোলি-পিট।
ব্রাঞ্জেলিনা দম্পতির সন্তান দত্তক নেয়ার গল্প বেশ জনপ্রিয়, কমবেশি সবাই জানেন। নিজেদের ৩টি সন্তান এবং দত্তক নেয়া ৩টি সন্তান মিলে তাদের মোট সন্তান সংখ্যা মোট ছয়। এই দত্তক নেয়া তিন সন্তান, জাহারা, প্যাক্স ও ম্যাডক্সের মধ্যে জাহারার গল্পটা একটু অন্যরকম।

জাহারার জন্ম জানুয়ারি ৮, ২০০৫, ইথিওপিয়ার আওয়াসা সিটিতে। অ্যাঞ্জেলিনা জোলি যখন তাকে দত্তক নেন, জাহারার বয়স তখন মাত্র ৬ মাস৷ জাহারার 'বায়োলজিক্যাল প্যারেন্ট' নিয়ে ২০০৯ সালে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জোলি জানান, যখন ইথিওপিয়ার আদিস আবিবার এক এতিমখানা থেকে দত্তক নেওয়া হয় জাহারাকে, তখন তাঁর মা ছিল না। তার মা এইডসে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন আগেই। ছোট্ট জাহারার নানীও একই কথা বলেন। তিনি বলেন, জাহারার বাবা-মা দুইজনেই এইডস আক্রান্ত ছিলেন।
কিন্তু ২০১৭ সালে 'ডেইলি মেইল' নামের ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড দাবী করে, জাহারার মায়ের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তারা এবং জাহারার মা বেঁচে আছেন এখনো। মায়ের পরিচয়ও পাওয়া যায়, যার নাম মেন্তেওয়াইত দাইত লেবিসো। তিনি বলেন, তিনি এইডস আক্রান্ত ছিলেন না। তবে জাহারার জন্মও স্বাভাবিকভাবে হয়নি। তিনি ধর্ষিত হয়েছিলেন এবং সেই ধর্ষণের ফলেই তিনি অন্তঃসত্ত্বা হন এবং জাহারার জন্ম হয়। পরবর্তীতে তিনি সন্তানকে রেখে চলে যান অন্য কোথাও।
পেছনের গল্পটা যেটাই হোক না কেন, ২০০৫ সাল থেকেই জাহারা বড় হচ্ছে জোলি-পিট দম্পতির কাছে। এবং দত্তক নেয়া সন্তানদের মধ্যে জাহারা দ্বিতীয় এবং সবচেয়ে বড় কন্যাসন্তান।
এই কন্যাসন্তানকে আরেকটু আলাদাভাবে পরিচয় দেয়ার জন্যে ২০০৯ সালে জোলি-পিট ফাউন্ডেশন একটা ইনিশিয়েটিভ শুরু করে তাদের মেয়ের নামে, যার নাম 'জাহারা প্রোগ্রাম', যেটির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ইথিওপিয়ান মাদকাসক্ত টিউবারকিউলোসিস রোগীদের ট্রিটমেন্টের জন্যে কাজ করা। এ কাজে তাদের সাহায্য করে ইথোওপিয়ান স্থানীয় কিছু স্বাস্থ্য সংস্থা।

তবে এই দম্পতির এটাই প্রথম দাতব্য কাজ না। তাদের আরেক সন্তান ম্যাডক্স এর নামে নামকরণ করে তারা খুলেছিলো- 'দ্য ম্যাডক্স চিভান চিলড্রেন'স সেন্টার', যেটার মূল কাজ হচ্ছে এইচআইভি অথবা এইডসে আক্রান্ত শিশুদের জন্যে কাজ করা। এছাড়া তারা শিশুদের কল্যানের জন্যে আরো অনেক কাজই করে থাকে। এই তো কয়দিন আগেই অ্যাঞ্জেলিনা জোলি করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্থ শিশুদের কল্যানের জন্যে একটি সংগঠনকে এক মিলিয়ন ডলার দান করলেন। যাক, সেটা ভিন্ন গল্প।
ছোট মেয়ে সেলেব্রেটি বাবা-মা'র আদরেই মানুষ হচ্ছিলো। বাবা-মা সিনেমার মানুষ, মেয়ে সিনেমায় না কাজ করলে হবে? জাহারা তাই কাজ করেছে সিনেমাতেও। ২০১৪ সালে ডিজনি মুভি 'ম্যালফিসেন্ট' এ অভিনয় করে সে, যেখানে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি মূখ্য ভূমিকায় ছিল। এছাড়া বিখ্যাত 'কুংফু পান্ডা ট্রিলোজি' এর তৃতীয় সিনেমাতে এক ছোট পান্ডা 'মেং মেং' এর ভয়েজ ওভার দিয়েছিলো জাহারা।
মাঝে একবার অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে যেতে হয় জোলি-পিট দম্পতির এই কন্যাসন্তানকে। সে সময়ে তার পাশে থাকার জন্যে ব্রাড পিট বাফটা'র প্রোগ্রামে যাওয়া ক্যান্সেল করে দিয়েছিলেন। যতই ব্যস্ততা থাকুক না কেন, নিজেদের প্রত্যেক সন্তানের জন্যে এই দম্পতির ভালোবাসা ও খেয়াল রাখার গল্পটা কিন্তু প্রশংসা করার মতোই।
জাহারাকে নিয়ে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি বলেছিলেন, 'She is an Extraordinary African Woman'
'এক্সট্রা-অর্ডিনারি ওম্যান' কথাটা জাহারার ক্ষেত্রে অনেকটাই প্রযোজ্য, তবে তার চেয়েও বেশি প্রযোজ্য অ্যাঞ্জেলিনা জোলির ক্ষেত্রে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো তীব্র বর্ণবৈষম্যের দেশে জাহারাকে নিয়ে তার এগিয়ে চলা আলাদা করে নজর কাড়ে এ কারণেই।

তাছাড়া সন্তানদের ঠিকঠাক মানুষ করাই শুধু নয়, তাদের নামে বিভিন্ন রকম সংগঠন গড়ে তোলার পর সেগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন বিপর্যস্ত মানুষকে এক সুতায় গেঁথে সাহায্য করার যে প্রচেষ্টা, সেটাই সবাইকে মুগ্ধ করে। সিনেমার পর্দা ছাপিয়ে বাস্তব জীবনেও তাই অ্যাঞ্জেলিনা জোলির গল্প অসাধ্য সাধনের৷
জোলি-পিট দম্পতির হয়তো বিচ্ছেদ হয়েই গিয়েছে, কিন্তু তাদের ভালো কাজগুলো রয়ে গিয়েছে অবিচ্ছিন্ন... এই প্রতিকূল সময়ের প্রেক্ষাপটে এটাই তো অসাধারণ এক বিষয়। তাছাড়া বর্ণবৈষম্যের বিষবাষ্পে প্রতিদিনই যে দেশ বুঁদ হয়ে থাকে, সে দেশে তিনটি 'রঙিন' সন্তান নিয়ে এগিয়ে চলা হয়তো অ্যাঞ্জেলিনা জোলিরই এক নীরব বিপ্লবের আখ্যান। এবং এখানেই আমরা দেখতে পাই ভালোবাসার চমৎকারিত্ব।
-
* প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন
* সমাজের নানান অসঙ্গতি নিয়ে আওয়াজ তুলুন। অংশ নিন আমাদের মিছিলে। যোগ দিন 'এগিয়ে চলো বাংলাদেশ' ফেসবুক গ্রুপে
আরও পড়ুন-