বোমান ইরানী: হোটেলের বেয়ারা থেকে অভিনেতা হবার অবিশ্বাস্য এক গল্প!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
সিনেমার মানুষ তিনি, অথচ তার জীবনটাই সিনেমার গল্পের মতো। সংগ্রামের একটা জীবন্ত উপাখ্যান তিনি, হাল ছেড়ে না দিয়ে যিনি লড়াই করে গেছেন নিরন্তর। চুয়াল্লিশ বছর বয়সে বলিউডে একজন অভিনেতা বা নায়ক সাফল্যের চূড়ায় অবস্থান করেন, সিনেম্যাটিক ভাষায় বললে 'পিক ফর্মে' থাকেন। অথচ রূপালী পর্দায় এই মানুষটার অভিষেকই হয়েছিল চুয়াল্লিশ বছর বয়সে!
অল্প সময়েই তিনি অর্জন করে নিয়েছেন তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তা, সেটা তার দুর্দান্ত অভিনয়ের গুণে। সব শ্রেণীর দর্শকের কাছেই আলাদা একটা গ্রহনযোগ্যতা তৈরী করেছেন নিজের। কখনও তিনি ডক্টর আস্থানা, কখনও ডনের প্রতিদ্বন্দ্বী ভারদান, কখনওবা প্রফেসর বীরু সাহাস্ত্রবুদ্ধ বা ভাইরাস। তিনি বোমান ইরানী, বলিউডের শক্তিমান অভিনেতাদের তালিকা করতে বসলে যার নামটা ওপরের দিকেই থাকবে। অথচ তার অভিনেতা হবার কথা ছিল না। হয়তো কিছুই হবার কথা ছিল না তার। জীবনের কত রঙ দেখে তারপর তিনি ঠাঁই পেয়েছেন আলো ঝলমলে রঙিন এই দুনিয়ায়।
জন্মের ছয়মাস আগেই বাবা মারা গিয়েছিলেন। বোমান পৃথিবীর আলো দেখেছিলেন ঠিকই, কিন্ত বাবাকে কোনদিন দেখতে পাননি। কথা বলতে শুরু করার পরে দেখা গেল তার স্পিকিং ডিজঅর্ডার আছে, সোজা বাংলায় যেটাকে তোতলামো বলা যায়। আরেকটা মানসিক সমস্যা ছিল তার, তিনি মনে করতেন সবাই বুঝি তার দিকে তাকিয়ে আছে, এই বুঝি কোন খুঁত ধরে সবাই তাকে নিয়ে মজা করবে!
স্কুলে ভর্তি হতে গিয়েও বিপত্তি, ইন্টারভিউতে তাকে বিভিন্ন ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করা হয় এটা কী, মাছ-গরু-ঘোড়া সবই তার চেনা, কিন্ত ভয়ে তিনি একটা শব্দও উচ্চারণ করলেন না সেখানে। তার ভয় ছিল, কথা বলতে গেলে তার সমস্যাটার কথা সবাই জেনে যাবে, তাকে কেউ স্কুলে ভর্তি করতে চাইবে না। শেষমেশ অবশ্য স্কুলে ভর্তি হতে পেরেছিলেন তিনি।
তার বাড়িতে কোন পুরুষ ছিল না, মা-মাসী-চাচী-কাজিন সব মহিলাদের নিয়ে তার সংসার, এ কারণে পুরুষ কণ্ঠস্বর শুনলেও ভয় পেতেন একটা সময়ে। স্কুলে পড়াকালীন ক্লাস সেভেন-এইট পর্যন্ত তিনি কথাই বলতেন না। কারণ তিনি কথা বলা শুরু করলেই সবাই হাসতো, টিফিনের সময় মাঠে তাকে অনুকরণ করে দেখাতো কেউ কেউ, হাসির হুল্লোড় পড়ে যেতো পুরো ক্লাসরুমে। টিচার প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছেন, তিনি উত্তর জানলেও চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতেন, বিনা প্রতিবাদে মার হজম করতেন। তার কোন বন্ধু ছিল না, কারো সাথে মিশতে ভয় পেতেন তিনি।
স্কুল থেকে পাশ করার পরে আর পড়ালেখা করতে মন চাইলো না কিশোর বোমানের। তার বাবা বোম্বের গ্র্যান্ট রোডে একটা দোকান চালাতেন, ছোট্ট দশ বাই চার ফুটের একটা দোকান, সেখানে ভাজাপোড়া বিক্রি হতো। আলুর ওয়েফার আরও কয়েক রকমের নাশতাজাতীয় খাবার। ১৯৫৯ সালে তিনি যখন মারা যান, মাথার ওপরে বেশ বড়সড় পরিমানের একটা দেনা ছিল তার। স্বামীর মৃত্যুর পরে বোমানের মা'ই সেই দোকানে বসতেন। অল্প অল্প করে স্বামীর সেই দেনাগুলো তিনি শোধ করেছিলেন। ছেলেকে সিনেমা দেখতে খুব উৎসাহ দিতেন তিনি, কারণ তিনি খেয়াল করেছিলেন, সিনেমা হলে বোমান একদম তন্ময় হয়ে স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে থাকে, ভাবনার আলাদা একটা জগতে ডুবে যায় সে। যেখানে বোমান আর সিনেমার চরিত্রগুলো ছাড়া আর কেউ নেই।
বাড়ির ঠিক উল্টোদিকেই 'আলেকজান্ডার থিয়েটার' নামে একটা সিনেমা হল ছিল, জোর করেই সেখানে ছেলেকে পাঠাতেন মিসেস ইরানী। একটা সিনেমা তিন চারবারও দেখতে পাঠাতেন টাকা দিয়ে, বলতেন, একদিন গল্পটা দেখেছিস, আরেকদিন অভিনয় দেখবি, একদিন ভুলগুলো খুঁজে বের করবি। সিনেমা দেখে ঘরে ফিরলে তিনি এটাসেটা জিজ্ঞেস করতেন বোমানকে। সিনেমার প্রতি তার আগ্রহটা মায়ের কারণেই তৈরী হয়েছিল। তবে সিনেমা তখনও অনেক দূরের গল্প, মাঝের রাস্তাটুকু ছিল কষ্টসংকুল, আর বন্ধুর।
স্কুল শেষ করে বোমান ভাবলেন, তিনি কোন একটা বারে কাজ করবেন। এজন্যে দুই বছরের একটা ওয়েটার কোর্সও করেছিলেন তিনি। বোম্বের বিখ্যাত 'তাজ হোটেলে' গেলেন তিনি, কাজ পেলেন রুম সার্ভিসের। লোকজনের ট্রলি নিয়ে রুমে পৌঁছে দিতেন, চা-কফি দিয়ে আসতেন, বিছানাপত্তর পরিস্কার করতেন। একবার এক অতিথি যাবার সময় তাকে পাঁচ রূপি বকশিশ দিয়েছিল, সেটা পেয়ে তিনি এতটাই খুশী হয়েছিলেন যে, এক রূপি খরচ করে মায়ের কাছে ফোন করেছিলেন। এই টাকা দিয়ে কী করবেন বুঝে উঠতেই পারছিলেন না তিনি!
বছর দুয়েক সেই হোটেলে চাকরী করলেন তিনি, এরমধ্যে বোমানের মা অ্যাক্সিডেন্ট করে শয্যাশায়ী হলেন, দোকান সামলানোর মতো কেউ নেই তখন; কাজেই বোমানকে বসতে হলো সেখানে। চল্লিশ স্কয়ারফিটের ছোট্ট একটা জায়গা ক্যাশবাক্স, ট্রে আর চুলা মিলিয়েই পুরোটা জায়গা ভরে আছে। সেখানেই প্রচণ্ড গরমে ঘাম ঝরাতে ঝরাতে কড়াইতে তেল ঢেলে আলুর ওয়েফার ভাজতেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই একটু নাদুস নুদুস ছিলেন বোমান, গরম সহ্য করতে পারতেন না একদম। সেই ছোট্ট খুপরীমতোন জায়গাটাই পরের দশ-বারো বছরের জন্যে তার ঠিকানা হয়ে গিয়েছিল।
সেখানে বসে কাজের ফাঁকে খাতায় ছোট গল্প লিখতেন তিনি, নিজের গল্প, তার কাছে আসা ক্রেতাদের গল্প। তখন তার বয়স ত্রিশ ছাড়িয়ে গেছে, ইতিমধ্যে তিনি বিয়ে করেছেন, সন্তানের বাবা হয়েছেন। টাকা জমিয়ে একটা ক্যামেরা কিনেছিলেন একবার, ফাঁকা সময় পেলে ছবিটবি তুলতেন। বিভিন্ন স্কুলের স্পোর্টস ফাংশানগুলোতে তাকে দেখা যেতো, ছবিপ্রতি পঁচিশ-ত্রিশ রূপি করে নিতেন তখন। এটা নব্বইয়ের দশকের কথা। তখনও সিনেমা দেখা ছাড়া এই জায়গাটার সঙ্গে তার আর কোন যোগাযোগ নেই।
বিয়ের সাত বছর পরে স্ত্রী-ছেলেদের নিয়ে প্রথমবার বোম্বের বাইরে কোথাও বেড়াতে গেলেন বোমান। ব্যাঙ্গালোরে গিয়ে যে হোটেলটায় তারা উঠেছিলেন, সেটা ভূতের বাড়ির চেয়ে কম কিছু ছিল না। কিন্ত এর বেশীকিছুর ব্যবস্থা করাও সেই মূহুর্তে তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তার স্ত্রীর হতাশ মুখটা দেখে খুব মন খারাপ হলো তার। ভাবলেন, যেভাবে সবকিছু চলছে এভাবে চলতে দেয়া যায় না। জীবনের প্রতিটা সিদ্ধান্তের ওপর তার নিজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আসতে হবে, যেভাবেই হোক।
প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করলেন তিনি, বুকভরা আত্মবিশ্বাস আর মোটামুটি মানের একটা ক্যামেরা ছাড়া সম্বল নেই কিছুই। সেবছরই ওয়ার্ল্ড বক্সিং চ্যাম্পিয়নশীপের আসর বসলো মুম্বাইতে, নামীদামী সব তারকারা আসবেন সেখানে। বোমান বক্সিং ফেডারেশনের অফিসে গেলেন, ফেডারেশনের সভাপতির সঙ্গে দেখা করে তাকে প্রস্তাব দিলেন ফটোগ্রাফার হিসেবে টুর্নামেন্ট কাভার করার। কিন্ত তিনি বোমানের এই প্রস্তাবে সায় দিলেন না। অনেক অনুরোধের পরে চিড়া ভিজলো খানিকটা, স্থানীয় একটা টুর্মামেন্ট কাভারের দায়িত্ব দেয়া হলো তাকে। সেটা সফলভাবে শেষ করায় সভাপতি তাকে খুশী হয়েই ওয়ার্ল্ড বক্সিং চ্যাম্পিয়নশীপের অ্যাক্রিডেশন কার্ড দিলেন। সেই টুর্নামেন্টে তিনটে ছবি নরওয়ের একটা ম্যাগাজিনের কাছে বিক্রি করে নয়শো ডলার পেয়েছিলেন তিনি, যেটা তার কল্পনাতেও ছিল না!
এরমধ্যে এক বন্ধু তাকে প্রস্তাব দিলেন থিয়েটারে অভিনয়ের। জীবনে অজস্রবার অভিনয় করার স্বপ্ন দেখেছেন বোমান, সিনেমা দেখার সময় তিনি নায়ক হলে কী করতেন, বা অন্য অভিনেতা হলে একটা ডায়লগ নিজের মতো করে কীভাবে দিতেন- এসব নিয়ে প্রচুর ভাবতেন। সেই সুযোগটা পাওয়া যাবে এবার। রাজী হয়ে গেলেন বোমান, জীবনে এত কিছু করেছেন, অভিনয় না করার কারণ নেই কোন।
থিয়েটারের দলে যোগ দিতে হলে আগে অডিশন দিতে হয়, সেখানে প্রথম দফাতেই তাকে বাদ দেয়া হলো। তাকে মুখের ওপরে কেউ একজন বলে দিয়েছিলেন- 'তোমাকে দিয়ে হবে না, তুমি ট্যালেন্টলেস!' কিন্ত সেই বন্ধুর জোরে ছোট্ট একটা চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ তিনি পেয়েছিলেন। নাটকটা ফ্লপ হলেও, বোমানের সেই ছোট্ট চরিত্রটা নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছিল। তবে দ্বিতীয়বার অডিশনে টিকে গেলেন, সেই নাটকটার নাম ছিল 'আই অ্যাম নট বাজীরাও।' সেটায় অভিনয়ের জন্যে চার মাসে তিনি সাতাশ কেজি ওজন কমিয়ে ফেললেন! নাটকটা দর্শকপ্রিয়তা পেলো, বোমানও জনপ্রিয় হলেন খানিকটা।
এরপরে ধীরে ধীরে থিয়েটারের পরিচিতমুখ হয়ে উঠেছেন তিনি, দারুণ সব মঞ্চনাটকে অভিনয় করেছেন। অথচ অভিনয়ের কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই তার ছিল না, ছিল বুকভরা সাহস আর আত্মবিশ্বাসের স্ফুলিঙ্গ। এর মধ্যে সিনেমার অফার এসেছে তার কাছে, কিন্ত এক-দুই মিনিটের রোল করতে তিনি রাজী ছিলেন না। গল্পগুলোও পছন্দ হচ্ছিল না, আবার নিজেকে সিনেমার জন্যে প্রস্তুত ভাবতেও পারছিলেন না। মঞ্চে তখন তার ভালোই নামডাক, সেই তিনি যদি সিনেমায় এসে আলতু ফালতু রোলে অভিনয় করেন, সেটা খারাপ দেখায়- এই ভেবেই নিজেকে সরিয়ে রেখেছিলেন।
'লেটস টক' নামের একটা এক্সপেরিমেন্টাল ফিল্মে অভিনয় করলেন, যেটা মাত্র আটদিনে শুটিং শেষ করা হয়েছিল। কিন্ত সিনেমাটা মুক্তিই পায়নি। এর আগে রাহুল বোসের অনুরোধে তার একটা সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন বোমান, সেই সিনেমাটাও ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শনের জন্যেই বানানো হয়েছিল।
একদিন তিনি বাড়িতে বসে আছেন, এমন সময় ফোন এলো একটা। প্রযোজক বিধু বিনোদ চোপড়ার অফিস থেকে তাকে ফোন করা হয়েছে, বলা হলো সেখানে যোগাযোগ করতে। বোমান গেলেন বিধু'র অফিসে। বিধু বিনোদ চোপড়া নিজে তাকে দুই লাখ রূপির একটা চেক দিলেন, বললেন, সামনের বছরের ডিসেম্বর মাস পুরোটা আপনি আমাকে দেবেন। বোমান জিজ্ঞেস করলেন, কোন সিনেমার জন্যে? বিধু বললেন, আমার হাতে কোন সিনেমা নেই আপাতত, কিন্ত লোকজন যখন আপনার কাজ দেখবে, তখন সবাই আপনার পেছনে ছুটবে। আমি আপনার কাজ দেখেছি, তাই আগেভাগে শিডিউল নিয়ে রাখলাম। ছয়মাস পরে বিধু আবার ফোন করলেন বোমানের বাড়িতে, উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে তিনি জানালেন, সিনেমা পাওয়া গেছে। নাম- 'মুন্নাভাই এমবিবিএস'! অথচ এই সিনেমাটাই প্রথমে না করে দিয়েছিলেন তিনি, চরিত্রটা পছন্দ হয়নি বলে।
পরে পরিচালক রাজকুমার হিরানী তার সঙ্গে বসে তাকে বুঝিয়েছেন, বোমানও বুঝতে পেরেছিলেন, এই লোকটার মধ্যে সিনেমা নিয়ে প্যাশনটা আছে। ডক্টর আস্থানার চরিত্রটা তিনি নিজের মতো করে ফুটিয়ে তুলতে পারবেন, হিরানী তাতে বাধা দেবেন না। ওই একটা সিনেমা দিয়েই দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠলেন তিনি। বয়স তখন তার চুয়াল্লিশ বছর! এই সিনেমার সিক্যুয়ালে ভিলেন হিসেবে ছিলেন তিনি।
সিনেমায় যাত্রাটা চলছিল, বীর-জারা, ম্যায় হু না, লক্ষ্য, ডন, দোস্তানা, হেই বেবি- একটার পর একটা সিনেমায় নিজেকে দারুণভাবে উপস্থাপন করেছিলেন তিনি। তারপর হিরানীর সাথেই আবার তিনি এলেন 'থ্রি ইডিয়টস'-এ। বাকীটা ইতিহাস। একটা চরিত্র দিয়ে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে নিলেন বোমান ইরানী। এই সিনেমাটাই সম্ভবত তাকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দিয়েছে। প্রফেসর বীরু সাহাস্ত্রবুদ্ধ বা ভাইরাস, যে নামেই ডাকি না কেন; এই চরিত্রে নিজের সেরাটুকু ঢেলে দিয়েছিলেন তিনি।
শৈশবের সঙ্গী স্পিকিং ডিজঅর্ডারটাকেই এই চরিত্রের মধ্যে নিয়ে এসেছিলেন তিনি, এভাবেই জিভে জড়িয়ে কথা বলতেন তিনি অল্প বয়সে। সিনেমায় আমির খান বা বাকী অভিনেতাদের চেয়েও কোথাও কোথাও বেশী প্রভাব বিস্তার করে রেখেছিলেন সেবছর পঞ্চাশে পা রাখা এই ভদ্রলোক। ভালো আর মন্দের মিশেলে গড়া অদ্ভুত একটা একরোখা চরিত্র একদম জীবন্ত হয়ে উঠেছিল বোমানের সুনিপুণ অভিনয়ে। চরিত্রাভিনেতাদের তো এটাই গুণ, নায়ক না হয়েও নায়কের চেয়ে বেশীকিছু করে ফেলতে পারেন তারা, এটাই তো তাদের 'দাদাগিরি'!
ফিল্মি জার্নিটা অব্যহত আছে, হাউজফুল সিরিজ, ডন টু, জলি এলএলবি, পিকে, দিলওয়ালে, হ্যাপি নিউ ইয়ার... তালিকাটা ক্রমশ লম্বা হচ্ছে। শুধু হিন্দি সিনেমাই নয়, মারাঠি, তামিল আর তেলেগু সিনেমাতেও কাজ করেছেন তিনি। বোম্বের যে ছেলেটা তোতলামোর জন্যে ভালোভাবে কথা বলতে পারতো না, সহপাঠীরা যাকে ভেঙচি কাটতো, সেই ছেলেটা জীবনের বিশাল একটা পথ পাড়ি দিয়েছে, প্রতিটা পদে পদে ধাক্কা খেতে খেতে শিখেছে, ব্যর্থ হয়েছে, কিন্ত দমে যায়নি, হার মানতে শেখেনি। কঠোর পরিশ্রমের সাথে নিজের ওপরে অবিচল থাকার আত্মবিশ্বাসটাই বোমানকে এতটা পথ টেনে নিয়ে এসেছে।
বোমানের নানী তাকে বলতেন, রাস্তার মুচিও যদি হতে হয়, সেরা মুচিটাই হবে। কখনও দ্বিতীয় হবার ভাবনায় কিছু করবে না। বোমানও সেটাই মাথায় রেখেছেন সবসময়। তিনি যখন ছবি তুলেছেন, চেষ্টা করেছেন বাকীদের সাথে একটা পার্থক্য যেন থাকে তার কাজের। যখন অভিনয় করেছেন, তখনও নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন বারবার, নিজের সেরাটা বের করে আনার মিশনে নেমেছেন। জীবনটা তো তার সিনেমার স্ক্রিপ্টের চেয়েও বেশী রোমাঞ্চকর!