একজন অন্ধ মানুষকে আশার আলো দেখাচ্ছে একদল শিশু। তার জীবন চলছে শিশুদের সাহায্যে। এর চাইতে দুর্দান্ত সৃজনশীল শিক্ষা আর কী-বা হতে পারে?

মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম বাঘা। গাজীপুরের বাসিন্দা। ৩নং গাজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দোকানদার। একটা সময়ে ইটভাটায় কাজ করতেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় কোনোমতে দিন কেটে যাচ্ছিলো তার। হঠাৎ করে চোখের সমস্যায় ভুগে চিকিৎসা করিয়েও সুস্থ হতে পারেননি আর। চোখের আলো কমে যেতে যেতে একটা সময়ে পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যান। হতদরিদ্রে এ মানুষটি খুবই অসহায় হয়ে পড়েন তখন। কি উপায়ে পরিবারের আহার জোগাড় করবেন সেটি নিয়ে প্রকট চিন্তায় পড়ে যান।

৩নং গাজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গেইটে অন্ধ দোকানদার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম বাঘা

ভিক্ষা করবার মতো অবস্থা তৈরি হলেও সে পথে পা বাড়াননি তিনি। নিজে কিছু একটা করার তাগিদে শুভাকাঙ্খীদের সাহায্য ও পরামর্শে গড়ে তোলেন ছোট্ট একটি দোকান। প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন হওয়ায়, এ দোকানের মূল ক্রেতা হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১ হাজার কেনাবেচা হয় সেখানে। দোকান খোলা থেকে শুরু করে বন্ধ করা, কেনাবেচার নগদ অর্থ আদান প্রদানসহ যাবতীয় সব কাজে এই অন্ধ মানুষটিকে খুবই সততার সাথে সাহায্য করে চলেছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘ ৭ বছর ধরে চলা এই দোকানে কখনো হিসেবের গড়মিল হয়নি, কিংবা কখনো ঠকানো হয়নি দোকানিকে। মূলত, এই নিষ্পাপ বাচ্চাদের মাধ্যমেই এই অসহায় মানুষটির দোকান ও পরিবার টিকে রয়েছে।

বাঘা ভাইকে দোকান থেকে বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী 

অন্ধের যষ্ঠি কাকে বলে সেই শিক্ষা শুধুমাত্র পাঠ্যপুস্তকেই সীমাবদ্ধ করে রাখি আমরা। পুঁথিগত পড়াশুনা থেকে আর বেড়িয়ে আসা হয় না আমাদের। অথচ, এই কোমলমতি শিশুরা অল্প বয়সেই যে মানবিক দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে গেছে সেটা কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়ে গিয়ে জোর করে শেখানো সম্ভব না। চারিদিকে পাহাড়সম হতাশার ভিড়ে এমন ঘটনা আশার দৈব বাণী ছড়ায়, উজ্জীবিত করে। একজন অন্ধ মানুষকে আশার আলো দেখাচ্ছে একদল শিশু। তার জীবন চলছে শিশুদের সাহায্যে। এর চাইতে দুর্দান্ত সৃজনশীল শিক্ষা আর কী-বা হতে পারে?

মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম বাঘা ভাই, আপনাকে স্যালুট। আপনি এগিয়ে চলুন বাঘের মতো করেই। আপনি একা নন, আপনাকে আগলে রাখার জন্য রয়েছে ৩নং গাজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশুদের সুন্দরবন। আর এই শিশুদের প্রতি রইলো অনন্ত ভালোবাসা এবং শুভকামনা। তোমরাই আগামীর বাংলাদেশ।


ট্যাগঃ

শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা