যখন আমরা ডেটিংয়ে যাব, আমি নিশ্চিত করব যেন বিলটা সমান দুই ভাগে ভাগ করা হয়। তোমার টাকা তো ফ্রিতে আসে না, এবং আমার টাকাও না!

বর্তমান সময়ে নারীদের উপর নিপীড়ন, অত্যাচার কিংবা হয়রানির পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গিয়েছে। আর তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রেন্ডিং টপিকগুলোর মধ্যে নারীবাদ অন্যতম। এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নারীবাদ সংক্রান্ত লেখাগুলো অতিরিক্ত মাত্রায় নেতিবাচকতায় পরিপূর্ণ থাকে। এ কথা সত্য যে নারী বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হেনস্থার শিকার হয় তাদের বিপরীত লিঙ্গ তথা পুরুষের দ্বারা। আর তাই নারীবাদ সংক্রান্ত অধিকাংশ লেখাতেই পুরুষজাতিকে অবজ্ঞা বা হেয় করা হয়ে থাকে।

এ ধরনের বেশিরভাগ লেখাতেই সাধারণীকরণ চোখে পড়ে, অর্থাৎ গুটিকতক পুরুষের অপকর্মের জন্য সকল পুরুষকে কাঠগড়ায় তোলা হয়। আবার আরেক ধরনের নারীবাদী রচনাও চোখে যেখানে নারীবাদ বলতে যেকোন ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে নারীর অগ্রাধিকার লাভকেই প্রাধান্য দেয়া হয়ে থাকে। ফলে এ ধরনেরর লেখাগুলো প্রায় সময়ই বিতর্কের রসদ জোগায়। লেখার বিষয়বস্তু নিয়ে দুইটি দল দুইভাগে ভাগ হয়ে যায়, এবং পক্ষে-বিপক্ষে নানা যুক্তি তর্ক পেশ করতে থাকে। অনেকক্ষেত্রে অবস্থা এতটাই সঙ্গিন হয়ে যায় যে দুই পক্ষের মধ্যে কাদা ছোঁড়াছুঁড়িও শুরু হয়ে যায়। 

সব মিলিয়ে নারীবাদী লেখাগুলোকে সর্বস্তরের গ্রহণযোগ্যতা পেতে খুব কমই দেখা যায়। কিন্তু বছর দুয়েক আগে বিপাশা বড়ুয়া নামে কলকাতার এক তরুণ লেখিকার নারীবাদ নিয়ে একটি স্ট্যাটাস হৃদয় ছুঁয়ে গেছে সকলের। বিপাশা কলকাতার আশুতোষ কলেজে পড়াশোনা করছেন। এগিয়ে চলোর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো ইংরেজিতে রচিত সেই আলোচিত স্ট্যাটাসটির বাংলা অনুবাদ। 

বিপাশা বড়ুয়া

প্রিয় পুরুষ, 

যখন তুমি মেট্রো বা বাসে করে যাতায়াত করো, আমি দেখি একজন নারী জায়গা না পেলে অনিচ্ছা সত্ত্বেও তোমাকে তোমার আসনটি ছেড়ে দিতে হয়। না, আমার জন্য তোমাকে তোমার আসন ছাড়তে হবে না। কারণ আমি জানি তুমিও একটা মানুষ, দাঁড়িয়ে থাকতে তোমারও কষ্ট হয়। কিন্তু লিঙ্গের কারণে আমার জন্য কিছু আসন সংরক্ষিত থাকলেও, তোমার জন্য তা হয় না। চিন্তা কোরো না। আমিও দাঁড়িয়ে থাকতে পারি, যেভাবে তুমি থাকো, সবসময়। এটাই আমার কাছে সমতা। 

যখন আমরা ডেটিংয়ে যাব, আমি নিশ্চিত করব যেন বিলটা সমান দুই ভাগে ভাগ করা হয়। তোমার টাকা তো ফ্রিতে আসে না, এবং আমার টাকাও না। আমাকে যেমন ওই টাকাগুলো আয় করতে অনেক খাটতে হয়, তেমনি তোমাকেও হয়। তাই, যখন আমরা দুইজনই খাবার খাচ্ছি, কেবল একার বিল পরিশোধের যুক্তি কী? আমরা দুইজন ভাগাভাগি করব। এটাই আমার কাছে সমতা। 

যখন আমরা দুইজনে একটি সম্পর্কে আবদ্ধ হই, তোমাকে সবসময়ই বিশ্বস্ত থাকতে বলা হয়। এবং তুমি তা থাকোও (দুই একটি ব্যতিক্রম বাদ দিলে)। কিন্তু আমাদের লিঙ্গও তো প্রতারণা করতে পারে, তাই না? আমরাও কি অনেকের হৃদয় ভাঙি না? আমরাও কি তোমাদের অনুভূতি নিয়ে খেলা করি না? হ্যাঁ, এগুলো সবই ঠিক। তাই আমি যখন তোমাকে বিশ্বস্ত হতে বলব, আমি কথা দিচ্ছি, তখন আমি নিজেও তোমার প্রতি বিশ্বস্ত থাকব। এটাই আমার কাছে সমতা। 

যখন আমরা আবেগঘন কোন সময় পার করি, কিংবা যখন তুমি কষ্টে থাকো, আমি দেখেছি তুমি অনেক চেষ্টা করো তোমার চোখের জল আটকে রাখার। কারণ তুমি ভয় পাও, কেঁদে দিলে তোমার পুরুষত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠে যেতে পারে। কিন্তু না, আমি কখনও তা করব না। বরং আমি আমার কাঁধ তোমার দিকে এগিয়ে দেব, যাতে তুমি কাঁদতে পারো। ঠিক যেমনটা তুমি সবসময় করো আমার জন্য। এবং কখনও কখনও, আমরা দুইজন একসাথে কাঁদব। আমি কখনও তোমাকে বিচার করতে যাব না। যেহেতু তোমাকে সবসময়ই আরও বেশি অনুভূতিপ্রবণ হতে বলা হয়, তাই আমি তোমাকে তোমার অনুভূতি স্বাচ্ছন্দ্যে প্রকাশের স্বাধীনতা দেব। এটাই আমার কাছে সমতা। 

আমি কর্তৃত্ব চেয়ে চেঁচাব না। সমতার কথা বলে অর্ধনগ্ন ছবিও পোস্ট করব না। কিংবা তোমাকে লজ্জা দেব না বা তোমাকে গালাগাল করব না, তোমার বিরুদ্ধে কোন মিথ্যা অভিযোগ আনব না। আমি এটা স্বীকার করে নেব যে আমার লিঙ্গেরও কখনও কখনও ভুল হতে পারে, এবং সবসময়ই কেবল আমরাই ভুক্তভোগী নই। নিজেকে তাই ভুক্তভোগী দাবি করে, বা নারী বলে কখনও বাড়তি সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করব না, অন্যের মনোযোগ কাড়তে চাইব না। আমিও তোমার মতই সমান পরিশ্রম করব, তোমার সাথে প্রতিযোগিতা করব, এবং আমার নিজের মেধা ও যোগ্যতাতেই তোমাকে হারিয়ে দেব, এবং তারপরই সেটাকে সমতা বলে দাবি করব। 

তোমার ভালোবাসার,
একজন সত্যিকারের নারীবাদী

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা