জাল টাকার নোট দিয়ে বিদ্যানন্দের বইমেলার স্টল থেকে বই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন প্রতারকেরা। সুবিধাবঞ্চিত এতিম পথশিশুদের কল্যাণের জন্য বরাদ্দ অর্থ থেকে লুটপাট করতে একটুও লজ্জা লাগছে না অবিকল মানুষের মতো দেখতে এই অমানুষদের।

টাকার পাশাপাশি পুরাতন ল্যাপটপ, কম্পিউটার, মোবাইল বা মেয়াদ আছে এমন ঔষধের বিনিময়ে বিদ্যানন্দের স্টল থেকে বই কিনতে পারবেন সাধারণ পাঠকরা। এই অভিনব এবং কার্যকরী উদ্যোগ নিয়েই এবারের একুশে বইমেলায় একটি স্টল দিয়েছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। জাল নোটের ধাক্কায় লাভের পরিবর্তে ক্ষতিই হয়েছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের। গত কয়েকদিন ধরে এভাবেই চলছে বিদ্যানন্দের বইমেলার স্টল। ব্যয় বাঁচাতে পেশাদার বিক্রেতা ছাড়া স্বেচ্ছাসেবীদের স্টল চালাচ্ছে তারা। আর স্বেচ্ছাসেবকদের নোট চেনার অনভিজ্ঞতাটাকে পুঁজি করে সুযোগসন্ধানীরা জাল নোট দিয়ে বই কিনছেন।

এবং এতে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। বাধ্য হয়ে বড় নোট নেয়াই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে তাদের স্টল থেকে। জাল টাকার ক্ষতিটা শেষ পর্যন্ত কর্মীরাই নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে, তাদের দূর্বলতায় যেন পথশিশুরা না ভুগে সেজন্য নিজের পকেট থেকেই ক্ষতিটা পুষিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে তারা। যারা জাল নোট দিয়ে প্রতারিত করছেন তাদের মানসিকতা কী পরিমাণ জঘন্য সেটা আসলে অবর্ণনীয়। সুবিধাবঞ্চিত এতিম পথশিশুদের কল্যাণের জন্য বরাদ্দ অর্থ থেকে এভাবে চুরি করতে কি একটিবারও বিবেকে বাধছে না কারো?  

একদিকে বইমেলার স্টল থেকে ঔষধ সংগ্রহ হচ্ছে, অন্যদিকে সে ঔষধে মেডিক্যাল ক্যাম্প হচ্ছে বস্তির শিশুদের জন্য। পাঠকরা শুধু বই নিয়েই যাননি, বাঁচিয়ে যাচ্ছেন অনেক প্রাণ। আর যারা মোবাইল দিয়ে যাচ্ছেন বইয়ের বিনিময়ে, তাদের সে মোবাইল বিচ্ছিন্ন কিছু মানুষকে পৌঁছে দেয়া হবে ভালোবাসা দিবসে। যে সকল মানুষ প্রিয়জনের সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না মোবাইলের অভাবে, তারাই বিনামূল্যে পাচ্ছে এই মোবাইলগুলো।

বিদ্যানন্দের বইমেলার স্টল

আপনার কাছে যা আবর্জনা, সেটাই অন্যের কাছে সম্পদ। তবে কেন ঘরে ফেলে রাখা দামী জিনিসগুলো? এগুলোর বিনিময়ে একদিকে যেমন বই পাবেন, তেমনি হাসি ফুটাবেন সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মুখে। অর্থ সংকটের ব্যাপারটি নিয়ে অপমানের ভয়ে তেমন উচ্যবাচ্য করে না বিদ্যানন্দ। অথচ অনুপ্রেরণা তো এমনি এমনি আসে না। মানি ইজ দ্যা বিগেস্ট মোটিভেশন। টাকা ছাড়া কোনো স্বেচ্ছাসেবী কাজই টিকে থাকে না। অথচ আর্থিক অভাবের কষ্টগুলো তারা নীরবেই সহ্য করে। গত দুই দিনেই তাদের তিন লাখ টাকা ঋণ করতে হয়েছে খরচ মেটাতে।

বছরের প্রথম প্রান্তিকটা তাদের এমনই যায়। অনেক শিশুর স্কুলে ভর্তি, পোশাক পরিবর্তন এবং শিক্ষা উপকরণ কিনতে হয়। এছাড়া খাবার প্রজেক্টের উপকরণের একটা বড় চালান নিশ্চিত করার পাশাপাশি অবকাঠামো ঠিক করতে হয়। রমজানের সময়ে সে ঘাটতি পূরণ হয়ে কিছুটা অর্থ সঞ্চয় থাকলেও ভুগতে হয় জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত। চাইলেও অনুদানের উপর ভিত্তি করে খাবার আয়োজন ছোটবড় করা যায় না, ঠিকই ৩৬৫ দিন ২,০০০+ মানুষ আহারের অপেক্ষায় থাকে, হাজার বাচ্চাকে লেখাপড়ায় যুক্ত রাখতে হয়।

এদিকে নির্বাচনী পোস্টার এখনো আসছে, এখনো প্রার্থীদের থেকে পোষ্টার সংগ্রহ চলছে। লাখে নয়, এখন পোস্টারের সংখ্যা কাউন্ট হচ্ছে ট্রাকে। দৈনিক ১৩ বার ট্রাক আসা যাওয়া করছে পোস্টার পরিবহনে। খাতা সেলাই এবং গুছিয়ে আনতে খরচ হবে আরো কয়েক লাখ টাকা। এই পুরো খরচটিই বিদ্যানন্দের বহন করতে হচ্ছে। আর্থিক দৈন্যতার মাঝে চাপটা বেশি হলেও তাদের কিছুই করার নেই। অনেকেই নতুন করে তাদের কমিউনিকেশন ম্যাটেরিয়াল বিদ্যানন্দের হাতে তুলে দিতে চাচ্ছেন, কিন্তু প্রক্রিয়াজাতকরণের খরচ দিতে চান না। তাই উদ্যোগটি সমাজের জন্য অনেক কার্যকর হলেও তারা হয়তো এখানেই সমাপ্ত করবে এই প্রজেক্টটি।

আপনারা যারা এমন পরিস্থিতিতে পাশে দাঁড়াতে চাচ্ছেন, তাদেরকে বিদ্যানন্দের ফেসবুক পেইজে যোগাযোগ করে সাহায্য পাঠানোর অনুরোধ করা যাচ্ছে। বিদ্যানন্দ স্বেচ্ছাসেবক মারফত রাস্তায় অনুদান সংগ্রহ করে না, অনুগ্রহ করে প্রতারক থেকে সাবধান থাকার অনুরোধ জানিয়েছে তারা।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন সম্পর্কে জানতে আরো পড়ুনঃ   

অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসার পর এবার বাসস্থান তৈরি করছে বিদ্যানন্দ!

সমুদ্র সৈকতের আবর্জনা দিয়ে বইমেলার স্টল! বিদ্যানন্দ, ইউ বিউটি!

পুরাতন জিনিস দিনবিনিময়ে বইমেলায় বই নিন: বাহ বিদ্যানন্দ!

নির্বাচনী ব্যানার দিয়ে এতিমদের স্কুলব্যাগ, অবিশ্বাস্য!

এতিমদের লেখাপড়ার খাতা বানানো হবে নির্বাচনী পোষ্টার দিয়ে!

কয়জন পারে এমনটা করতে?


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা