ভাষার মাসে অনাথ শিশুর মায়ের ভাষা ফিরিয়ে দিচ্ছে বিদ্যানন্দ!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
একটি শিশুর মৌলিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি তার মানসিক বিকাশের ব্যাপারটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। বিদ্যানন্দের স্বপ্নডাঙ্গা অনাথালয়ে সকল ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী শিশুদের ভাষা চর্চার উদ্যোগ নিয়েছে তারা।
মা বাবার মৃত্যুর পর মাত্র তিন বছর বয়সে জয়িতা এসেছিলো বিদ্যানন্দের অনাথাশ্রমে। অনাথ সে জীবনে নিজের ভাষাভাষী না থাকায় ধীরে ধীরে ছোট্ট মেয়েটি ভুলে যায় জন্মদাত্রী থেকে পাওয়া কথাগুলো, হারিয়ে যায় মায়ের শেষ চিহ্নটুকু। মায়ের ভাষাটাই হারিয়ে ফেলে জয়িতা।
জয়িতা এখনো আছে বিদ্যানন্দের স্বপ্নডাঙ্গা অনাথালয়ে। নিজের ভাষায় কথা বলতে না পারলেও ভিন্ন দুইটি ভাষা তার দখলে। যে দেশের মানুষ প্রাণ দিয়েছে মায়ের ভাষার জন্য, সে দেশের মানুষের মায়ের ভাষা এভাবে হারিয়ে ফেলাটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
জয়িতাকে তার মাতৃভাষা ফিরিয়ে দেবার উদ্যোগ নিয়েছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। শুধু তাকেই নয়, বিদ্যানন্দের স্বপ্নডাঙ্গা অনাথালয়ে জয়িতার মতো সকল ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী শিশুদের ভাষা চর্চার উদ্যোগ নিয়েছে তারা। সে চেষ্টার অংশ হিসেবে চাকমা, মারমা, ম্রো, তঞ্চঙ্গা ভাষায় বর্ষপঞ্জি প্রকাশ করেছে বিদ্যানন্দ। পাশাপাশি ম্রো ভাষায় দ্বিতীয় বই প্রকাশ করা হয়েছে।
ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের অনেক ভাষাই বাংলাবাজারের ছাপাখানা পর্যন্ত কোনদিন আসেনি, তাই ফন্ট সংগ্রহে বাংলাদেশ ছাড়াও বিদ্যানন্দ যোগাযোগ করেছিলো দেশের বাইরের ভাষাবিদদের সাথে। পর্যাপ্ত রিসোর্সের অভাবে তারা অনেকদূর গিয়েও প্রকাশ করতে পারেনি চাক, বম, ত্রিপুরা এবং বিষ্ণুপ্রিয়া ভাষার কোন প্রকাশনা। আগামীতে সে প্রতিবন্ধকতা জয় করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে বিদ্যানন্দ।
বিদ্যানন্দের এই অভিনব উদ্যোগটি আসলেই প্রশংসার দাবিদার। একটি শিশুর মৌলিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি তার মানসিক বিকাশের ব্যাপারটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এই বোধটুকু আমাদের মধ্যে তৈরি হয়নি এখনো। একটি সুন্দর ভাবনা বদলে দিতে পারে একটি শিশুর ভবিষ্যত। ঠিক এ কারণেই একটি শিশুর জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা যেমন দরকার ঠিক তেমনি যথাযথ শিক্ষার ব্যবস্থাটাও জরুরী। তাই যে স্বেচ্ছাসেবীরা এই প্রকাশনার জন্য গত এক বছর ধরে কাজ করে গেছেন, তাদের সবার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।
এই দারুণ উদ্যোগের জন্য বিদ্যানন্দকে জানাই বিশেষ কৃতজ্ঞতা। ভাষার মাসে মাতৃভাষাকে এর চাইতে চমৎকারভাবে সম্মান জানানো সম্ভব না আসলে। আমাদের দেশে সুবোধ ফিরে আসুক বিদ্যানন্দের মাধ্যমেই।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন সম্পর্কে জানতে আরো পড়ুনঃ
সাবাশ বাংলাদেশ! ভালো কাজের প্রতিদান এভাবেই দিতে হয়!
অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসার পর এবার বাসস্থান তৈরি করছে বিদ্যানন্দ!
সমুদ্র সৈকতের আবর্জনা দিয়ে বইমেলার স্টল! বিদ্যানন্দ, ইউ বিউটি!
পুরাতন জিনিস দিন, বিনিময়ে বইমেলায় বই নিন: বাহ বিদ্যানন্দ!
নির্বাচনী ব্যানার দিয়ে এতিমদের স্কুলব্যাগ, অবিশ্বাস্য!
এতিমদের লেখাপড়ার খাতা বানানো হবে নির্বাচনী পোষ্টার দিয়ে!