সমুদ্র সৈকতের আবর্জনা দিয়ে বইমেলার স্টল! বিদ্যানন্দ, ইউ বিউটি!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
ইতিমধ্যেই সংগৃহীত ২০ টন উচ্ছিষ্ট নির্বাচনী পোষ্টার দিয়ে এতিমদের জন্য এক লাখ লেখার খাতা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবকরা। যার অর্থমূল্য বিশ লাখ টাকারও বেশি। এমন পাগলামি ছাড়া আসলে দেশপ্রেম সম্ভব না।
একদল পাগলাটে তরুণ সংগ্রহ করছে চট্টগ্রাম বঙ্গোপসাগরের সৈকতের আবর্জনা। এই বর্জ্য দিয়েই সাজানো হবে চট্টগ্রাম বইমেলার স্টল। সমুদ্র সৈকত থেকে কুড়িয়ে আনা হচ্ছে প্লাস্টিকের বোতল, চিপস কিংবা শ্যাম্পুর প্যাকেট। এগুলা তো সেখানে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে না। আমরা নিজেরাই দায়িত্ব-জ্ঞানহীনভাবে আমরা সেখানে ফেলে আসছি। যাতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে জীব বৈচিত্র, মারা যাচ্ছে সমুদ্রের প্রাণীগুলো।
সমুদ্র দূষণ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে বিদ্যানন্দের স্টলটি সাজানো হচ্ছে বঙ্গোপসাগর থেকে সংগৃহীত জাল, প্লাস্টিক, মৃত শামুক কিংবা পলিথিনে। এমন পাগলামি ছাড়া আসলে দেশপ্রেম সম্ভব না। শুধু বইমেলার স্টলই নয়। পুরাতন ল্যাপটপ, কম্পিউটার, মোবাইল বা মেয়াদ আছে এমন ঔষধের বিনিময়ে বিদ্যানন্দের স্টল থেকে বই কিনতে পারবেন সাধারণ পাঠকরা। এই অভিনব এবং কার্যকরী উদ্যোগ নিয়েই এবারের একুশে বইমেলায়ও একটি স্টল দিয়েছে তারা। বাংলা একাডেমী চত্বরে বিদ্যানন্দের ৭৭ নাম্বার স্টলটি অপেক্ষা করছে আপনারই জন্য! আর এই সংগ্রহ দিয়ে পার্বত্যঞ্চলে এতিমদের জন্য তৈরি করা হবে কম্পিউটার ল্যাব। উত্তরাঞ্চলের দুস্থ মানুষদের জন্য পরিচালিত হবে মেডিকেল ক্যাম্প।
বলছিলাম স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন এর কথা। সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের লেখাপড়া করানোর দায়িত্ব নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন যারা। সফলতার সাথে সাথে তাদের কার্জক্রমও বৃদ্ধি পায়। শুরু হয় এক টাকার আহার নামে সুবিধাবঞ্চিতদের মাঝে খাবার বিতরণ। বর্তমানে অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসার মতো মৌলিক নাগরিক অধিকারগুলো নিয়ে অভিনব সব উদ্যোগের মাধ্যমে সফলতার সাথে কাজ করে চলেছে তারা। এখন পরিবেশ ধ্বংসকারী বর্জ্যকে সম্পদে রুপান্তর করে দারুণ এক পরিবর্তনের ছোঁয়া নিয়ে এসেছে স্বেচ্ছাসেবী এই সংগঠনটি।
আজকাল দেশের কল্যাণে কাজ করার কথা বলাটা খুবই সহজ। দুই কলম লখে দিলেই যেন দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়। শুধু মুখে বলে দিলেই কিন্তু পরিবর্তন চলে আসে না, পরিবর্তনের এ পথ কন্টকাকীর্ণ ও সর্পিল। দরকার কঠোর অধ্যাবসায় এবং পরিশ্রম। বর্জ্যকে সম্পদে তৈরি করে সেটার ব্যবহার করার যুগোপযোগী উদ্যোগ নিয়েছে তারা। এমন অসম্ভবকেই সম্ভব করার মিশনে নেমেছে বিদ্যানন্দ।
সম্প্রতি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী উচ্ছিষ্ট দিয়ে ছেয়ে যায় পুরো ঢাকা শহর। প্রায় আড়াই হাজার টন আবর্জনার ভারে নুয়ে থাকা ঢাকাকে আলোর পথ দেখাতে এগিয়ে আসে বিদ্যানন্দ। ইতিমধ্যেই প্রায় ২০ টন নির্বাচনী বর্জ্য সংগ্রহ করেছে বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবকরা। শুধুমাত্র নির্বাচনী পোষ্টার দিয়েই এক লাখ লেখার খাতা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তারা। যার অর্থমূল্য বিশ লাখ টাকারও বেশি। এগুলো বিতরণ করা হবে সুবিধাবঞ্চিত এতিম শুধুদের মাঝে। শুধু লেখার খাতাই নয়, নির্বাচনী ব্যানার দিয়ে তৈরি হচ্ছে এতিম শিশুদের স্কুলব্যাগ। সংগ্রহীত বিশাল এ বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করার কাজটি বেগবান করতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কেলে যেতে হচ্ছে তাদের। তৈরি হবে এতিমদের লক্ষাধিক লেখাপড়ার সামগ্রী। কি সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ!
নির্বাচনের বিভিন্ন আবর্জনাকে সম্পদে রূপান্তর করার স্বেচ্ছাসেবী আপ্রাণ চেষ্টা দিয়েই এই উদ্যোগকে সফল করানো সম্ভব নয়। অর্থ, জনশক্তি সঙ্কট তো রয়েছেই। দরকার সরকারি এবং বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। এভাবে শুধু নিজেরা একাই কাজ করলে ১% আবর্জনাও প্রক্রিয়াজাত করা সম্ভব না।
বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবকরা বিরতিহীনভাবে খেটে যাচ্ছে সুবিধাবঞ্চিত ছিন্নমূল মানুষগুলোর মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। যে ব্যানারে ড্রেনেজ সিস্টেম আটকে গিয়ে ঢাকাবাসীর বর্ষা কাটে জলাবদ্ধতায়, যে ময়লা ব্যানারটি গত এক মাস ধরে সবার বিরক্তির কারণ, সেটি দিয়ে তৈরি স্কুলব্যাগই সঙ্গী হবে স্কুলগামী দরিদ্র শিশুদের। বর্ষাতেও তাদের বইগুলো রক্ষা পাবে বৃষ্টি থেকে। যে নির্বাচনী পোষ্টার এর জন্য জনজীবন অতিষ্ঠ, সেগুলো দিয়ে তৈরি হচ্ছে এতিম শিশুদের লেখা খাতা। এর চাইতে দুর্দান্ত প্রক্রিয়াজাতকরণ আর কিইবা হতে পারে।
সারাদিনের পরিশ্রম শেষে ক্লান্ত বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবকরা ঠিকই অপেক্ষা করে বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টার কিংবা অনুষ্ঠান থেকে দেয়া খাবারের জন্য। গভীর রাতে সংগ্রহ করা খাবারগুলো, প্যাকেজিং শেষে বিতরণেও যায় ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তে। আর এতেই হাসি ফুটে ওঠে অনাহারি ছিন্নমূল মানুষের মুখে। অভুক্তের মুখে আহার পৌঁছে দেয়ার আনন্দেই বিদ্যানন্দের সার্থকতা।
বিদ্যানন্দ চেয়েছে দেশের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের ক্ষমতাবানদের এমন উদ্যোগের আইডিয়া দিতে। আবর্জনাকে লাখ টাকার সম্পদে রূপান্তর করার পাশাপাশি দেশের পরিবেশ বাঁচবে এতে। এই আবর্জনা প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রজেক্টটি টিকিয়ে রাখতে দাতাদের সাহায্য দরকার। আপনারা যারা কমেন্টে সাহায্য করতে চান, তারা সরাসরি বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন কিংবা এক টাহার আহার এর ফেসবুক পেইজে যোগাযোগ করতে পারেন। যে যার অবস্থান থেকে সাধ্যমত এগিয়ে এসে এই মহৎ উদ্যোগের সাথে সরাসরি সংযুক্ত হতে পারেন।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন সম্পর্কে জানতে আরো পড়ুনঃ
পুরাতন জিনিস দিন, বিনিময়ে বইমেলায় বই নিন: বাহ বিদ্যানন্দ!
নির্বাচনী ব্যানার দিয়ে এতিমদের স্কুলব্যাগ, অবিশ্বাস্য!
এতিমদের লেখাপড়ার খাতা বানানো হবে নির্বাচনী পোষ্টার দিয়ে!