করোনাভাইরাসের দিনগুলিতে অনন্য ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর গল্প
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
ভূটানের মতো ছোট্ট দেশে প্রধানমন্ত্রীই দেশের সবচেয়ে বড় তারকা। আর সেই ক্ষমতাটাকেই লোটে শেরিং ব্যবহার করছেন দেশের মানুষকে সচেতন করার জন্যে, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্যে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সনাক্তের খবর আসার সাথে সাথেই বাজারে মোটামুটি হুলস্থুল একটা ভাব লেগে গেছে। সবাই ছুটছে হ্যান্ডওয়াশ আর অ্যালকোহলযুক্ত স্যানিটাইজার কিনতে। সেসবও বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে, কৃত্রিম সংকট তৈরী করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে অনেক ব্যবসায়ী। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর আজ গুলশানের দুটি ফার্মেসীকে সিলগালাও করে দিয়েছে এই অপরাধে।
এরইমধ্যে অন্যরকম একটা চিত্র দেখা গেল ভূটানে। সেদেশের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং নিজে রাস্তায় নেমে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করছেন জনগণকে। পিকআপ ভ্যানের ওপর দাঁড়িয়ে মানুষের মধ্যে স্যানিটাইজার বিলিয়ে দিচ্ছেন লোটে শেরিং- এরকম ছবি শেয়ার করা হয়েছে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে। করোনাভাইরাস নিয়ে সবার মধ্যে সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে খোদ প্রধানমন্ত্রী নেমে - এসেছেন রাস্তায়- এমন নজির আর কোথাও দেখা যায়নি।
বাংলাদেশের মতো ভূটানেও পাওয়া গেছে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব, সেদেশে একজনের দেহে প্রাণঘাতি এই ভাইরাস সনাক্ত হয়েছে। এরপরেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে মানুষজনের মধ্যে, একটা ভয় ছড়িয়েছে সর্বত্র। সরকার এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নানারকম আশ্বাস এবং অভয়বাণী দেয়া হলেও কাটছে না সেই আতঙ্ক, কারণ করোনার প্রতিষেধক তো এখনও আবিস্কার হয়নি।
করোনার জীবানুবাহী ব্যক্তি সনাক্ত হয়েছে ভুটানে- এই খবর আসামাত্রই মাস্ক-জীবাণুনাশক কিনতে ফার্মেসিগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে মানুষ। ইতিমধ্যে দেশটির রাজধানী থিম্পুর বেশিরভাগ ফার্মেসিতেই মাস্ক ও জীবাণুনাশকের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এই সংকট মোকাবেলায় শহরটির অনেক জায়গায় বিনামূল্যে জীবাণুনাশক বিতরণ করছে ভুটান সরকার।
গত শুক্রবার দেশটিতে ভারত থেকে যাওয়া এক মার্কিন পর্যটকের শরীরে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। এর পর পরই আতঙ্কিত মানুষ থিম্পুর ফার্মেসিতে ভিড় করতে থাকেন। অতিরিক্ত চাহিদার কারণে মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অনেক ফার্মেসি বা দোকানের মাস্ক ও জীবাণুনাশক ফুরিয়ে যায়। এ কারণে শনিবার শহরটিতে বিনামূল্যে জীবাণুনাশক বিতরণ করা হয়। আর এ কাজে যোগ দেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং নিজেই।
ভূটান সরকারের কথা একটাই- করোনার প্রতিষেধক না থাকলেও, প্রতিরোধক তো আছে। আর সেটাকে হাতিয়ার করেই জনগনের ভয় কাটাতে চাইছে তারা। এজন্যেই ভূটানের প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং রাস্তায় নেমে এসেছেন মানুষকে অভয় দিতে, বিলি করছেন হ্যান্ড স্যানিটাইজার।
ভূটানের মতো ছোট্ট দেশ, যেখানে ফিল্মস্টার নেই খুব বেশি, ক্রীড়াক্ষেত্রেও বলার মতো কোন কোন তারকা বা ইনফ্লুয়েন্সার নেই, সেদেশে প্রধানমন্ত্রীই দেশের সবচেয়ে বড় তারকা। আর সেই ক্ষমতাটাকেই লোটে শেরিং ব্যবহার করছেন দেশের মানুষকে সচেতন করার জন্যে, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্যে। রাস্তায় নামতে বলছি না, কিন্ত করোনার এই আতঙ্কের সময়টায় আমাদের রাজনৈতিক নেতারাও যদি যার যার জায়গা থেকে বাগাড়ম্বর না করে শুধু কাজের কাজগুলোই করেন, তাহলেও আমরা খুশি থাকব।
জানিয়ে রাখা ভালো, ভূটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিংয়ের সঙ্গে কিন্ত বাংলাদেশের গভীর একটা সম্পর্ক আছে। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের সাবেক ছাত্র ছিলেন লোটে শেরিং, ১৮তম ব্যাচের ছাত্র হিসেবে এমবিবিএস পাশ করেছিলেন তিনি। ময়মনসিংহ মেডিকেলের পাশাপাশি কিছুদিন হাতে কলমে কাজ করেছেন ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজেও। কিছুদিন আগে বাংলাদেশে এসে ময়মনসিংহ মেডিকেলের পূনর্মিলনীর অনুষ্ঠানেও যোগ দিয়েছিলেন লোটে শেরিং।