বর্তমান বেলারুশ সরকার একদম প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশিদের স্টুডেন্ট ভিসা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে!

বেলারুশ নামে ইউরোপে একটা দেশ আছে। এটি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ভুক্ত কোনো দেশ নয়। তবে দেশটির আশপাশে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশ আছে। এই দেশ'টিতে পড়াশুনা করতে যাবার জন্য বাংলাদেশিদের কোনো টিউশন ফি আগে থেকে দেবার প্রয়োজন পড়তো না। অর্থাৎ ইউনিভার্সিটি'তে আবেদন করা যায় ফ্রিতে। এডমিশন পাওয়া যায় ফ্রিতে। এডমিশন পাবার পর ভিসাও পাওয়া যায় ইউনিভার্সিটিকে কোনো টাকা না দিয়েই।

ভিসা পেয়ে যখন আপনি বেলারুশে যাবেন; তখন আপনাকে একটা টিউশন ফি পে করতে হবে। সেটাও খুব কম। অর্থাৎ বেশি টাকা না। তো, বাংলাদেশিরা এই সুযোগ নিয়ে দলে দলে বেলারুশে গিয়ে ইউনিভার্সিটিতে না গিয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ভুক্ত দেশগুলোতে পালিয়ে গিয়েছে! যেহেতু এর জন্য তাদের এক টাকাও খরচ করতে হয়নি; তাই প্রায় ৯৫ ভাগ বাংলাদেশি ইউনিভার্সিটির ইনভাইটেশন লেটার নিয়ে ভিসা পেয়ে জীবনেও আর ইউনিভার্সিটিতে যায়নি! শেষমেশ বাংলাদেশিদের উপর বিরক্ত হয়ে বর্তমান বেলারুশ সরকার একদম প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশিদের স্টুডেন্ট ভিসা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে!

আমি এইসবের কিছুই জানতাম না। বেলারুশ থেকে এক ইউনিভার্সিটির শিক্ষক আমার এখানকার ইউনিভার্সিটিতে এসেছে এক সেমিস্টারের জন্য গবেষণার কাজে। এই ভদ্রমহিলা আমাকে জিজ্ঞেস করেছে, "তোমাদের দেশে কি ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশুনা করতে চায় না?" আমি একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, এই প্রশ্ন করছ কেন? এই ভদ্রমহিলা আমাকে বিস্তারিত ঘটনা বলেছে। এরপর আমি নিজেই খোঁজখবর নিয়ে ঘটনার বাস্তবতা জানতে পেরেছি। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আমার ফেসবুক বন্ধু তালিকায় আছেন। বছর কয়েক আগে তার ফেসবুক পোস্ট পড়েও ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম।

চিন্তা করে দেখুন অবস্থা! বেলারুশ সরকার শুধুমাত্র বাংলাদেশিদের জন্য আলাদা নিয়ম চালু করে রেখেছে। অন্য আর কোন দেশের জন্য এটি প্রযোজ্য নয়। ওরা কেন এমন করেছে?

বেলারুশের আশেপাশে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশের অবস্থান আছে

কারণ বাংলাদেশিরা বেলারুশে গিয়ে ইউনিভার্সিটিকে টিউশন ফি না দিয়ে ভেগে গিয়েছে কিংবা সেখানে গিয়ে এমন সব আজে-বাজে কাজ করেছে যে ওই দেশের সরকার বাধ্য হয়ে এই কাজ করেছে! নিজ চোখেই তো দেখি, বাংলাদেশিরা বিদেশে এসে কী করে! আসে পড়াশুনা করার জন্য, এরপর পড়াশুনা না করে অন্য আর যা যা করা সম্ভব সব করে বেড়াচ্ছে!

এই তো পর্তুগালে কয়েকদিন আগে আওয়ামীলীগ-বিএনপি, দুই ভাগে ভাগ হয়ে মারামারি করেছে। পর্তুগাল এমন একটা দেশ, যেখানে এখনও বাংলাদেশিরা সহজেই পারমিশন পাচ্ছে বলেই জানি! ওই ঘটনার পর হয়ত পর্তুগালও বন্ধ করে দিবে বাংলাদেশিদের সব সুযোগ সুবিধা। কারণ ওদের অনেক পত্রিকায় ওই খবর বড় আকারে এসেছে!

বাংলাদেশিরা আসলে বিদেশে এসে পড়াশুনা না করে অন্য সব কিছু করে বেড়াচ্ছে! এই যখন অবস্থা, তখন আজ জানতে পারলাম বাংলাদেশ সরকার আরও দুটো সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি দিয়েছে। জেলায় জেলায় এত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে কী লাভটা হচ্ছে দেশের? আরও কিছু ভিসি আর প্রভোস্ট নামক জীব তৈরি হচ্ছে। আরও কিছু বেকার গ্র্যাজুয়েট! না শিক্ষকরা পড়াতে চায়; না ছাত্ররা শিখতে চায়!

এই দেশে না আছে শিক্ষার পরিবেশ; না আছে যথাযথ শিক্ষা ব্যবস্থা। আগে তো পরিবেশ তৈরি করতে হবে, এরপর না হয় শিক্ষিত মানুষ তৈরি করা যাবে। তাছাড়া এইসব সাধারণ বিষয়ে হাজার হাজার গ্র্যাজুয়েট তৈরি করে লাভ কী? এরা না পাচ্ছে দেশে চাকরী; না পাচ্ছে বিদেশে। উল্টো বিদেশে গিয়ে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে পড়াশুনা না করে।

এর চাইতে টেকনিক্যাল বিষয়গুলোতে জোর দিন, সেই সঙ্গে পুরো পরিবেশটা উন্নত করুন। সেটা না হলে এমন সব ছাত্র ছাত্রীই তৈরি হবে যারা বিদেশে যাবে স্রেফ কামলা খাটার জন্য কিন্তু যাবার জন্য শিক্ষাকে ব্যাবহার করবে ভিসা পাবার রাস্তা হিসেবে। এর ফল হবে বেলারুশের মতো। এরপর কোন বাংলাদেশিই আর যেতে পারবে না এইসব দেশে! যাওয়া তো দূরের কথা, আবেদনই করতে পারবে না!


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা