ইউরোপ-আমেরিকা না, সত্যিকার 'ল্যান্ড অফ অপুরচুনিটিজ' হলো বাংলাদেশ!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
ল্যান্ড অফ অপুরচুনিটিজ- খুঁজতে অন্য কোথাও তাকাতে হয় না। নিজের দেশে তাকালেই বুঝতে পারবেন- কী অসাধারণ সব সুযোগ। আপনি এখনো ভাবছেন, আপনার কিছু নেই?
'ল্যান্ড অফ অপুরচুনিটিজ' বলতে আমরা আমেরিকা-ইউরোপ ভাবি। আপনি আমেরিকায় টানা তিনমাস কাজ না করে বেঁচে থাকতে পারবেন না। বাংলাদেশে পারবেন। টানা দুই চার বছর কাজ না করেও এখানে প্রতিদিন ভাত-মাংস খাওয়া সম্ভব। এখানে ভবিষ্যতের জন্য অর্থ জমা না করেও ভবিষ্যত পাড়ি দেওয়া যায়।
একজন উদীয়মান মিউজিশিয়ানকে প্রায়ই বলি, ভালো অ্যারেঞ্জমেন্ট করে গোটা পাঁচেক গান ছাড়ো ইউটিউবে। সে বারবার বলে- বাংলাদেশে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি নাই। কলকাতা-মুম্বাইতে ভালো কদর আছে। কথাটা ভুল ধারণা। আমাদেরও ইন্ডাস্ট্রি আছে। ইউটিউবে একটা গান দিয়েই এখানে মাহতিম সাকিব সেলিব্রেটি হয়ে যেতে পারে। গোটা দশেক শর্টফিল্মে কাজ করেই সিয়াম স্টার হয়ে যেতে পারে। স্টারডম নিয়ে পরে আলোচনা হতে পারে, কোয়ালিটি নিয়ে পরে রিসার্চ হতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশে চাইলেই সব হওয়া যায়।
একটা সময় ছিল পত্রিকায় না লিখলে লেখক-কবি হিসেবে ধরা হত না। ভালো পত্রিকায় নিয়মিত লিখলেই তাকে বিশাল কবি সাহিত্যিক হিসেবে মাথায় তোলা হত। আমরা যখন বাংলা পড়তাম তখন মুখস্ত করতে হত ‘সওগাত’ এ লিখতেন নজরুল। এরপর ব্লগ আসলো। শুরুতে সেখানেও ফার্স্ট পেইজে এক্সেস দেওয়া নিয়ে ঝামেলা হত। এরপর আসল ফেসবুক। সাথে ইউটিউব আছেই। এখন কেউ পত্রিকায় লেখে না। পত্রিকায় লেখা আসলে হয়তো ভাল লাগে। স্যুভেনির হিসেবে পত্রিকা কাটিং করে রেখে দেওয়া যায়। কিন্তু পত্রিকা টিভি এখন সব নয়। পত্রিকা টিভিরাও এখন ওপেন প্ল্যাটফর্মে (ফেসবুক, ইউটিউব) এসে নিজেদের প্রচার করছে। এখানে কোন ইন্ডাস্ট্রিই এখন কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এখন তেল ঢেলে কারো পেছনে ঘুরতে হয় না।
আমি নিজে কখনো পত্রিকায় এক শব্দ লিখিনি। তাতে আমার ক্ষতি হয়নি। এখানে ফেসবুকের সব পাতা খোলা। যেখানে ইচ্ছে লেখা যায়। চাইলেই ছড়িয়ে দেওয়া যায়। এখানে ইউটিউব সবার জন্য খোলা। চাইলেই একটা ভিডিও বানিয়ে আপলোড দেওয়া যায়। এখন পত্রিকা লাগে না। ফেসবুকে যেকোন ধরণের ভিডিও বানিয়ে আপলোড দিলেই মিলিয়ন মানুষ দেখে। যদি একটু কোয়ালিটি দেওয়া যায়, তাহলে আর পেছনে ফিরতে হবে? কখনোই না। জীবন রাতারাতি বদলে যাবে। হ্যাঁ, তেল ঢালাঢালির যুগ শেষ।
এখানে পাবলিক পরিচিতি পেতেও খুব বেশি কষ্ট করতে হয় না। মানুষের সমস্যা তুলে ধরতে আর পত্রিকা, ইত্যাদি প্রোগ্রামে চিঠি লিখতে হয় না। অব্যবস্থাপনার সামনে দাঁড়িয়ে মোবাইলের ক্যামেরা অন করে কথা বললেই পরিচিতি পাওয়া যায়। সমস্যাগুলো সলভ করে দেওয়া যায় রাতারাতি। ব্যবসাগুলোও এখন ফেসবুককেন্দ্রিক। অফিস নাই, দোকান নাই, গলির মাথায় ঠিকানা খুঁজেও তাদের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। কিন্তু লাখ লাখ টাকার বিজনেস করতে পারে। তাদের দোকান লাগে না। ইন্টেরিয়র ডিজাইন করার লাখ টাকা দিয়েই তারা ছোট ছোট বিজনেস দাঁড় করিয়ে ফেলতে পারে।
কতদিন এসব টিকবে? টিকে থাকা নির্ভর করে ‘কোয়ালিটি’র উপর। আপনি যদি নিজের উপর বিশ্বাস রাখেন, নিজের কাজকে কোয়ালিটিফুল মনে হয়, তাহলে কীসের দিক চেয়ে আছেন? কে আপনার পাশে আসবে? কেউ আসবে না। এদেশে সবার টাকা আছে কিন্তু কারো টাকা বেশি হয়নি। এদেশে সবাই ভালো করতে চায় কিন্তু কেউ আরেকজনের ভালো করার জন্য এগিয়ে আসবে না। নিজের নৌকা নিজেকেই বাইতে হবে। নোট করে রাখুন, ভালো লেখক হতে চান? সাহিত্যজগত ফাঁকা। একটু একটু করে লিখুন। একদিন টিকে যাবেন। ভালো গায়ক হতে চান, নিয়মিত নিজের গানের উপর কাজ করুন। ফেসবুক ইউটিউবে আপলোড দিন। মানুষ কোয়ালিটি চিনে নিবে। ব্যবসা করতে চান, ফেসবুকে নিজের বিজনেসের ব্যাপারে প্রচার করুন। মানুষ আপনাকে ইনবক্সে নক করবে।
ফেসবুক আসার আগে বাংলাদেশে কক্সবাজার-সিলেট ছাড়া আর কোথাও মানুষ ঘুরতে যেত না। এখন শিমুলবাগান থেকে ঠাকুরগাঁয়ের আমগাছ দেখতেও মানুষ ট্যুর গ্রুপের সাথে যাচ্ছে। হাওড়-পাহাড় ট্রেকিং সুযোগ দিয়েই ফেসবুকে কোটিকোটি টাকার সৎ বিজনেস করছে ট্যুর গ্রুপগুলো। ইউটিউবে শর্টফিল্ম বানাতে বানাতেই কতজন ডিরেক্টর হয়ে গেল। কনটেন্ট বানাতে বানাতে কতজন এক্টর হয়ে উঠল, হিসেব করতে পারবেন না।
আমেরিকা-ইউরোপে ব্ল্যাংক জায়গাগুলো তো অনেকেই দখল করে আছে। বাংলাদেশে? এত এত সেক্টর! শুধু কাজ করলেই সেখানে পৌছানো সম্ভব। ল্যান্ড অফ অপুরচুনিটিজ- খুঁজতে অন্য কোথাও তাকাতে হয় না। নিজের দেশে তাকালেই বুঝতে পারবেন- কী অসাধারণ সব সুযোগ। আপনি এখনো ভাবছেন, আপনার কিছু নেই? প্ল্যাটফর্ম ইজ ওপেন। প্লে ইয়োর রোল।
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন