বাংলাদেশের ডাক্তাররা নাকি করোনার ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছে! সকালটা শুরু হলো ফেসবুকে এই অপমানজনক এবং হাস্যকর কথাটা পড়ে।
আপনারা কি জানেন একজন ডাক্তারের ব্রত সম্পর্কে? একজন সৈনিক যখন প্রশিক্ষিত হয় তখন সে তড়পায় গুলি ছোড়ার জন্য। তেমনি একজন নতুন ডাক্তারও তড়পায় রোগীর চিকিৎসার জন্য। সেটা সে শুরু করে মেডিকেলের থার্ড ইয়ারে। যখন সে মাত্র স্টেথোস্কোপ গলায় ঝোলায়, প্রেশারযন্ত্র নিয়া সে সারা পাড়ার লোকজনের প্রেশার মেপে দেয়। ওয়ার্ডে শোনা ও হিস্টরিতে দেখা ওষুধগুলা নিজেই প্রেসক্রাইব করা শুরু করে মুখে মুখে, এটা খাবেন ওটা খাবেন বলে। এই ছেলে মেয়েগুলা প্রাইভেট প্র্যাকটিস করে না। ঘরবাড়ি থেকে দূর দূরান্তের কোনো এক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে কোনো রকম আধুনিক যন্ত্রপাতি ছাড়াই রোগীর সেবা করে। তাকে ৫ থেকে ৭ বছর যে পড়ানো হয়েছে, তার সঙ্গে কোনো মিল নেই বাস্তবতার। বেশীরভাগ মেডিকেলের বই প্রতি ছয় মাসে আপডেটেড হয় নতুন নতুন চিকিৎসাব্যবস্থার উপায় সহকারে। সে মেশিনগান চালানোর কথা শিখে বাঁশের লাঠি দিয়ে চিকিৎসা করে। তার তখনই পালানো উচিত, কিন্তু সে পালায় না। সে ওইভাবেই লড়ে যায়।
করোনা কোনো সাধারণ রোগ না। সারা বিশ্বে হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে, আক্রান্ত হচ্ছে। আমি তেমনই আক্রান্ত দেশ সুইজারল্যান্ডে থাকি। এখানে কোনোকালেই ডাক্তারদের কাছে সরাসরি যাওয়ার উপায় নেই। ফোনে এপয়েন্টমেন্ট নিতে হয়। করোনা আসার পর এই এপোয়েন্টমেন্ট এক ফোনে মিলবে না। কমপক্ষে দুই তিনবার আপনার হিস্ট্রি জিজ্ঞাসা করা হবে। সর্দি কাশি জ্বর থাকলে আপনাকে বলা হবে, আপনি সম্ভবত করোনার উপসর্গ ধারণ করছেন, আপনার উচিত হবে ঘরে থাকা, উপসর্গ বেড়ে গেলে নির্দিষ্ট হটলাইনে যোগাযোগ করবেন। তারা আপনাকে নির্ধারিত হাসপাতালে নিয়ে যাবে। হ্যাঁ, নির্ধারিত হাসপাতালে। করোনার চিকিৎসা হয় স্পেশাল হাসপাতালে। নরমাল কোনো ক্লিনিক বা চিকিৎসা সেবাকেন্দ্রে না। সুইজারল্যান্ডে সব প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ। আমি যেটা বললাম সেটা কমিউনিটি হাসপাতালের কথা। সুইস ডাক্তাররা ভীরু? পালিয়েছে?
সুইসরা রোগের তথ্য লুকায় না। বাংলাদেশে লুকায়। এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটা ঘটনা ঘটেছে যেখানে রোগীর আত্মীয়স্বজন তথ্য লুকিয়ে তাকে কোনো ক্লিনিকে বা হাসপাতালে নিয়েছে। সুবাদে সেখানকার ডাক্তার, নার্স ও চিকিৎসাকর্মীদের কোয়ারেন্টাইনে যেতে হয়েছে। এই পাপটা করছে, করেই যাচ্ছে আর বলছে ডাক্তাররা পালাচ্ছে। করোনার জন্য সরকার ১২টা স্পেশাল হাসপাতাল বানিয়েছে। সেখানে গ্রেড ওয়ান পিপিই দেয়া হয়েছে। সেখানেই করোনার চিকিৎসা হয়। বাকি যেসব পিপিই দেখছেন, এগুলো রেইনকোট। এগুলো করোনার সঙ্গে বিন্দুমাত্রও লড়তে পারে না। আপনি খেলনা পিস্তল নিয়ে ডাক্তারদের যুদ্ধ করতে বলছেন, সে অস্বীকার করলে বলেন, 'ডরাইছে'!
একজন ডাক্তার হিপোক্রেটিক ওথ নেয় মানুষ সেবার। তার শিক্ষাক্রমে সবখানেই লেখা আছে, সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে মহামারি জাতীয় রোগের ক্ষেত্রে তাকে কী করতে হবে। সে তাই করছে। আপনি বলছেন তাকে যুদ্ধ করতে। তাকে অস্ত্র দিচ্ছেন না। যদিও খেলনা কিছু ধরিয়ে দিচ্ছেন, আবার তার পায়ে বাড়ি মেরে তাকে 'লেংড়া' করে দিচ্ছেন। আপনাদের চেয়ে বড় হিপোক্রেট তো বাজারে নাই। ডাক্তাররা নিয়েছেন হিপোক্রেটিক ওথ, আপনারা নিয়েছেন হিপোক্রেসির ওথ। তারই প্র্যাকটিস করছেন যা তা বলে বলে।
আজকে একটা ঘোষণা দিতে বলেন সরকারকে, ১২টা স্পেশাল হাসপাতালে ডাক্তার নেয়া হবে। জায়গা দিতে পারবেন না। আমি দায়িত্ব নিয়া বলছি। আর আপনারা ভাবেন আমার ভাইরা পালাবে...