জাতিসংঘের 'রিয়েল লাইফ হিরো' স্বীকৃতি পাওয়া চার বাংলাদেশি তরুনের গল্প!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

জাতিসংঘের এই তালিকায় উঠে এসেছে যেসব বাঙ্গালীর নাম, তাদের গল্প শুনলে অনুপ্ররণা পাবেন আপনিও।
গত বুধবার ছিলো বিশ্ব মানবিক দিবস। এই দিবসে যদি কেউ জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে কোনো কারণ ছাড়াই ঢুঁ মারতেন, তাহলে দেখতেন সেখানে 'রিয়েল লাইফ হিরো' হিসেবে সম্মানিত করা হয়েছে চার বাংলাদেশি মানুষকে। আজকের কথাবার্তা এই চারজন মানুষ নিয়েই।
যে চারজনকে এই সম্মানে সম্মানিত করা হয়েছে, তারা হলেন ব্র্যাকের প্রকৌশলী রিজভী হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানভীর হাসান সৈকত, অনুবাদক সিফাত নুর ও পোশাক শ্রমিক আঁখি। করোনাকালীন সময়ে তাদের বিভিন্ন কাজকর্মের ওপর ভিত্তি করে তাদের এই সম্মাননা দেয়া হয়।
ব্র্যাকের প্রকৌশলী রিজভী হাসান স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে কাজ করছিলেন বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের সাথে। চাকরির কারণেই তাকে যেতে হয় কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। সেখানে তিনি লক্ষ্য করেন, অল্প খরচে রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি বানিয়ে দিচ্ছে বিভিন্ন সংস্থা। তিনিও ভাবলেন, এই আইডিয়াটি বেশ ভালো। মায়ানমারের সহিংসতায় বিপর্যস্ত নারীদের জন্যে তিনিও স্বল্প খরচে ঘরবাড়ি বানানোর উদ্যোগ হাতে নিলেন। সেসব নারীদের স্বাবলম্বী করার জন্যে বিভিন্ন পদক্ষেপও হাতে নেয়া হলো। ব্র্যাক ও ইউনিসেফ একত্রিত হয়ে এই কাজে রিজভীকে সাহায্যও করা শুরু করলো। মূলত এ কাজের জন্যেই রিজভীর নাম উঠে আসে জাতিসংঘের 'রিয়েল লাইফ হিরো'র তালিকায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তানভীর হাসান সৈকতের গল্প আবার ভিন্ন। বাংলাদেশে করোনার প্রকোপ শুরু হয় মূলত মার্চের ৯ তারিখ থেকে। সবাই ক্যাম্পাস থেকে চলে যাচ্ছিলো, কিন্তু সৈকত যান না। তিনি ক্যাম্পাসে থেকে তৃনমূল মানুষদের নানা ভাবে সহায়তা করা শুরু করেন। টানা ১১৬ দিন এভাবে কাজ করার পরে তিনি চলে যান সুনামগঞ্জে। সেখানে বন্যা চলছে। বন্যাকবলিত মানুষদের সহায়তা করার জন্যে তিনি সাধ্যমত চেষ্টা করেন। তার এই কাজের জন্যেই তাকে 'রিয়েল লাইফ হিরো'র তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে জাতিসংঘ৷
এ বছরের মার্চের দিকে 'ট্রান্সলেটর উইদাউট বর্ডারস' নামের একটি সংস্থায় কাজ শুরু করেন সিফাত নুর। এ পর্যন্ত তিনি এক লাখ পনেরো হাজারেরও বেশি শব্দ অনুবাদ করেছেন। আইএফআরসি, ইউএনএইচসিআর এর এসব লেখাগুলো অনুবাদ করে তিনি সাধারণ মানুষের কাছে জীবন রক্ষাকারী বিভিন্ন তথ্য পৌঁছে দিয়েছেন। এবং এ কাজের জন্যে অনেক মানুষের জীবন বেঁচেছে বিভিন্ন সময়ে। পরবর্তীতে জাতিসংঘের 'রিয়েল লাইফ হিরো'র সম্মানজনক স্থানে পৌঁছে গেছে তারও নাম৷
এই লিস্টের একমাত্র বাঙালি তরুণীর কথা বলা হয়নি এতক্ষণ। তার নাম আঁখি। তার গল্পটা একটু অন্য তাৎপর্যের। খুব অল্পবয়সেই অভাবের তাড়নায় কাজে যুক্ত হতে হয় তাকে। পরবর্তীতে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন তাকে সহায়তা করে। দর্জি কাজের প্রশিক্ষণ নেন তিনি। সেলাই মেশিন আর কিছু কাপড় নিয়ে শুরু হয় তার যাত্রা। আঁখি বেশ কিছুদিন হলো নিজের একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও খুলেছে। সব ঠিকঠাক চলছিলো। এরমধ্যেই এলো কোভিড-১৯। আঁখি ভাবলেন, মানুষের জন্যে কিছু করা যাক। তিনি স্বল্প খরচে মাস্ক বানানো শুরু করলেন এবং মানুষের মাঝে বিক্রি করতে লাগলেন এই মাস্ক। সমাজের তৃনমূল মানুষদের মাঝে তার এই স্বল্পমূল্যের মাস্ক বেশ জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছে অল্পদিনের মধ্যেই। এখনো কম খরচেই মাস্ক বানিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এই সমাজকল্যাণমূলক কাজের জন্যে আঁখিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে জাতিসংঘের 'রিয়েল লাইফ হিরো'র তালিকায়।
ভালো কাজ, সেটা ছোটই হোক বা বড়, সেটার একটু স্বীকৃতি পাওয়া গেলে তা মানুষকে আরো ভালো কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে। সে হিসেবে এই স্বীকৃতি অনুপ্রেরণা করবে আরো অজস্র মানুষকে। এটা আশা করাই যায়।
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন