বাংলাদেশের প্রথম ইন্টারন্যাশনাল ক্রুজশিপ: ট্রাভেলাররা রেডি তো?
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
এতদিন হয়তো ইউটিউবে, সিনেমায় দেখেছেন বিদেশের সমুদ্রে বিলাসবহুল সব ক্রুজশিপ। আপনার জন্যে সুসংবাদ, এবার থেকে বাংলাদেশের সমুদ্রেও দেখবেন তেমন বিলাসবহুল ক্রুজশিপকে!
এ বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চ নাগাদ যখন করোনার প্রকোপ বেশ ভালোভাবে শুরু হলো, তখন মানুষজনকে বাধ্য হয়েই ঘরের অভ্যন্তরে সেঁধিয়ে যেতে হয়েছিলো। শেষ কবে এতদিন ধরে মানুষ আটকে ছিলো ঘরের মধ্যে, সে নিয়ে ভাবনাচিন্তার অনেক জায়গা আছে। সে প্রসঙ্গে তাই যাচ্ছি না। তবে ঘরের মধ্যে থেকে অতিষ্ঠ হতে হতে অধিকাংশ মানুষই একটা লক্ষ্য ঠিক করে ফেলেছিলো, যখনই সব ঠিকঠাক হবে, দিতে হবে লম্বা লম্বা ট্যুর।
মানুষদের এই মনস্তত্ব বিভিন্ন দেশের ট্রাভেল এজেন্সিগুলোও ঠিকঠাক বুঝে নিয়ে চলে এসেছে একের পর এক আকর্ষণীয় অফার নিয়ে। সারা পৃথিবীতেই এখন চলছে বিভিন্ন রকম ট্যুর এর মহোৎসব। উপমহাদেশও পিছিয়ে নেই এই প্রসঙ্গে। এই যেমন সেদিন জানলাম, দিল্লী থেকে লন্ডন যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিলাসবহুল বাস। আগামী বছরের মে মাস থেকে শুরু হচ্ছে তাদের যাত্রা। বাংলাদেশেও নেয়া হচ্ছে পরিকল্পনা। ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ডের ক্রুজশিপ অথবা বিলাসবহুল জাহাজ নামবে কক্সবাজারে। যে জাহাজে করে ঘুরে আসা যাবে কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন!
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী শিপবিল্ডার্স লিমিটেড জাপান থেকে ‘সালভিয়া মারু’ নামের ক্রুজশিপটি কিনেছে, যেটির নাম বাংলাদেশে এসে হয়েছে ‘এমভি ওয়ান বে।' শেষমুহুর্তের কিছু কাজকর্ম চলছে। সব ঠিকঠাক থাকলে হয়তো আগামী অক্টোবর থেকেই যাত্রার জন্যে প্রস্তুত হয়ে যাবে এই প্রমোদ জাহাজ।
বিলাসের জন্যে যা যা দরকার, এখানে আছে প্রায় তার সবই। যাত্রীদের জন্যে আছে দুই হাজার প্রেসিডেন্ট স্যুট, বাংকার বেড কেবিন, টুইন বেড কেবিন, ইকোনমিক-বিজনেস ক্লাসের চেয়ার। ফুড কোর্ট, প্লেগ্রাউন্ড, ঝর্ণা... আছে এগুলোও। এ প্রসঙ্গে একটি বিষয় জানিয়ে রাখি, ঢাকা থেকে যেসব লঞ্চ দেশের দক্ষিনাঞ্চল অর্থাৎ বরিশাল-পটুয়াখালী এসব জায়গাতে যায়, সেসব লঞ্চেও বেশ ভালো ভালো বিলাসব্যসনের উপকরণ যুক্ত হয়েছে গত দুই এক বছর ধরে। ফোয়ারা, লিফট, এসি ভিআইপি রুম... লঞ্চের মধ্যেই নানারকম তাক লাগানো বিষয়। সামুদ্রিক জাহাজের ক্ষেত্রে বিলাসবহুল কোনো সুবিধা এতদিন ছিলো না। 'এমভি ওয়ান বে' এর মাধ্যমে এই অভাবটিই পূরণ হতে যাচ্ছে সবার।
সাধারণত এসব ক্রুজশিপে ওঠার আগে যে জিনিসটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি চিন্তা হয়, সেটি অবশ্যই মানিব্যাগ। যেহেতু প্রিমিয়াম কোয়ালিটির লাক্সারি অফার করছে তারা, সেহেতু খরচও যে একটু চড়া হবে, সে আর নতুন কী! এখানেও একই বিষয়। দুই হাজার টাকা থেকে শুরু করে বিশ-পঁচিশ হাজার পর্যন্তও ভাড়া গুনতে হতে পারে যাত্রীদের, বিভিন্ন ক্যাটাগরির আসনের সুবিধার জন্যে। তবে আরামদায়ক ভ্রমণের ইচ্ছে মাথায় থাকলে, খরচ নিয়ে ভাবা উচিত না! সৈয়দ মুজতবা আলী তো বলেই গিয়েছেন-
ভ্রমণের জন্যে কপর্দকশূন্যও যদি হতে হয়, তবে তা-ই সই।
সবচেয়ে ভালো লাগছে যে বিষয়টি, আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ডের ক্রুজশিপ কনসেপ্টটি বাংলাদেশে আগে কখনো ছিলো না। আমরা ভিনদেশের ক্রুজশিপ দেখেই ক্রমাগত হাপিত্যেশ করেছি। সেখান থেকে সরে এসে নিজেদের দেশেই যখন এরকম ক্রুজশিপ চালু হচ্ছে, এটা নিঃসন্দেহে আমাদের জন্যে তৃপ্তির বিষয়। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কীভাবে কতটুকু নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, সেটাই এখন দেখতে হবে। সেখানেই সার্থকতার বিষয়টি পুরোপুরি উঠে আসবে।
নতুন রকম এ উদ্যোগের জন্যে শুভকামনা রইলো।
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ 'Launch Vessel Finder's Bangladesh' ফেসবুক পেজ
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন