নাহিনকে কবর দিয়ে আসার কিছুদিন পেরিয়ে গেলেও, তার পালিত কুকুরছানা টাইগার শুয়ে থাকে সে কবরের পাশে। কবরের পাশ থেকে কুকুরছানাটিকে সরানো যাচ্ছে না। তাকে কিছুতেই বোঝানো যাচ্ছে না যে নাহিন আর ফিরবে না।

হাচি: এ ডগ টেল। শুরু করছি এ সিনেমাটি দিয়ে। ২০০৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এ সিনেমার গল্প আবর্তিত হয়েছে বাস্তব ঘটনাকে কেন্দ্র করে। ১৯২৪ সালে টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন হদেসাবুরো উয়েনো। তিনি আকিতা জাতের একটি কুকুরছানা দত্তক নেন। নাম রাখেন হাচিকো। জাপানি ভাষায় হাচি অর্থ আট, কো অর্থ আদুরে। পুরো নামটার অর্থ দাঁড়ায়, বাবা মায়ের খুবই আদুরে অষ্টম সন্তান। আট সংখ্যাটিকে জাপানে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। হাচিকো প্রতিদিন অধ্যাপকের সাথে ট্রেন ষ্টেশনে এগিয়ে দিতে যেত এবং শিক্ষকতা শেষে অধ্যাপক যখন বাড়ি ফিরতেন, হাচিকো ট্রেন স্টেশনে গিয়ে তার অপেক্ষা করতো। তারপর তারা একসাথে বাড়ি ফিরতো। এভাবেই তাদের দিন কেটে যাচ্ছিলো।

হাচিকো ও তার ব্রোঞ্জের মূর্তি

১৯২৫ সালে অধ্যাপক উয়েনো ব্রেন স্ট্রোক করে মারা যান। তার প্রায় ১০ বছর পর মারা যায় হাচিকো। কিন্তু মাঝখানের এই সময়টাতে প্রতিদিন হাচিকো শিবুয়া ট্রেন ষ্টেশনে যেয়ে বসে থাকতো তার মনিবের ফেরার অপেক্ষায়। কেউ তাকে বোঝাতে পারেনি তার মনিব আর ফিরবে না। হাচিকো অপেক্ষা করেছিলো তার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। আর এভাবেই একদিন হাচিকোও মারা যায়।

পরবর্তীতে, শিবুয়া ট্রেন স্টেশনের গেইটে হাচিকোর ব্রোঞ্জ মূর্তি স্থাপন করা হয়। যেখানে হাচিকো বসে অপেক্ষা করতো সেই জায়গার নাম এখন হাচিকো গুচি (হাচিকো প্রবেশপথ)। হাচিকোর স্মরণে সেখানে প্রতিবছর ৮ই মার্চ হাচিকোর মৃত্যুদিবস পালিত হয়।

নাহিনের কবরের পাশে তার কুকুরছানা 'টাইগার'

এতোদূর পড়ে আপনি হয়তো ভাবছেন, এমন গল্প শুধু বিদেশী গল্পের সিনেমাতেই সম্ভব। যদি বলি আমাদের দেশেই হাচিকোর মতোই একটি ঘটনা ঘটে গেছে? বিশ্বাস হবে? না হবারই কথা। প্রাণীদের কল্যাণে কাজ করে যাওয়া নন-প্রফিটেবল সংগঠন ‘Care For Paws’ এ এমনই একটি ঘটনার কথা জানিয়ে পোস্ট করেন নোহাইন ইসলাম মোহাম্মদ। গত ৩১ ডিসেম্বর তার পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য আপন ছোট ভাই নাহিন ইসলাম আরদি আকস্মিকভাবে ইলেক্ট্রিক শক খেয়ে মৃত্যুবরণ করে। নাহিনকে কবর দিয়ে আসার কিছুদিন পেরিয়ে গেলেও, তার পালিত কুকুরছানা টাইগার শুয়ে থাকে সে কবরের পাশে। কবরের পাশ থেকে কুকুরছানাটিকে সরানো যাচ্ছে না। তাকে কিছুতেই বোঝানো যাচ্ছে না যে নাহিন আর ফিরবে না।

উল্লেখ্য, কুকুরছানাটিকে নাহিনের কবর চেনানো হয়নি। সে নিজে থেকেই সেটা খুঁজে বের করেছে। এবং সেখান থেকে কিছুতেই সরে আসতে চাইছে না। আসলে বোবা প্রাণীগুলোর ভালোবাসা এমনই হয়। তারা অভিনয় করতে জানে না। বন্ধুত্বের মর্ম বোঝে। আজীবন বয়ে বেড়ায় সে বন্ধুত্বের স্মৃতি। হয়তো আমরাই বুঝি না বন্ধুত্বের অর্থ। আমাদের ব্যস্ত জীবনে এভাবেই হারিয়ে যায় মধুর সম্পর্কগুলো।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা