স্বয়ং বিল গেটস গুণমুগ্ধ যে বাংলাদেশি বাবা-মেয়েকে নিয়ে!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
এই প্রশংসা করবার আগেও তাদের নিয়ে তেমন কোনো উচ্চবাচ্য ছিলো আমাদের মধ্যে। হয়তো কেউ কেউ তাদের নাম জেনেছেন শুধু। অথচ জনসাধারনের জন্যই কাজ করে চলেছেন তারা। কিছু শুকনো সম্মান ও ভালোবাসা ছাড়া আমরা হয়তো কিছুই দিতে পারবো না তাদের। তবে দেশের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের ক্ষমতাবানেরা তো এগিয়ে আসতেই পারেন সাহায্য নিয়ে। তাদের এই পথচলা আরো দীর্ঘ হোক, সে শুভকামনেই থাকবে সবসময়।
তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে নবজাতক ও শিশু মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পায় রহস্যজনক রোগের কারণে। রহস্যজনক বলার কারণ হচ্ছে, এসব রোগকে সঠিকভাবে শনাক্ত করা হয়ে ওঠে না। আমরা শুধু রোগের নামটাই জানি, কী কারণে এমন রোগ ছড়াচ্ছে বা ঐসব রোগের ব্যাখ্যা আমাদের কাছে নেই। আর এই জানা অজানায় আক্রান্ত হচ্ছে অগণিত শিশু।
এমনই এক সংকট নিরুপনে এগিয়ে এসেছেন বাংলাদেশের মেয়ে সেঁজুতি সাহা। তিনি পেশায় একজন অনুজীববিজ্ঞানী। তার গবেষণায় শিশু প্রাণঘাতী রোগগুলোর রহস্য উন্মোচিত হচ্ছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশে শিশুদের মধ্যে মেনিনজাইটিসের সংক্রমণ হঠাৎ করেই বেড়ে যায়। তাৎক্ষনিকভাবে এর কোনো কারণ খুঁজে বের করা যাচ্ছিলো না।
ঠিক সেসময়ে, সেঁজুতি উদ্ভাবন করেন যে চিকুনগুনিয়ার বিস্তারের কারণেই মেনিনিজাইটিসের প্রকোপ বৃদ্ধি পায় এবং সে ভাইরাস ছড়ায় মশার মাধ্যমে। বিস্তারিত জানার জন্য তার গবেষণার নমুনা যুক্তরাষ্ট্রে পাঠান। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই দরিদ্র দেশসমূহে রোগ নির্নয়ের জন্য সল্পমূল্যের উপকরণের তৈরি করেন অনুজীববিজ্ঞানি সেঁজুতি সাহা। এই গবেষণা শুধু বাংলাদেশই নয়, বরং সাহায্য করেছে দক্ষিণ এশিয়ার মতো দরিদ্র দেশসমূহে।
সেঁজুতির বাবা ড. সমীর সাহা অণুজীববিজ্ঞানের অধ্যাপক। গড়ে তুলেছেন শিশু গবেষণা ফাউন্ডেশন (সিএইচআরএফ), সাথে তিনি ঢাকা শিশু হাসপাতালের অনুজীব বিভাগেরও প্রধান। বিশ্বজুড়ে শিশু প্রাণঘাতী অন্যতম দুটি রোগ হচ্ছে নিউমোনিয়া ও মেনিনজাইটিস। এই দুটি রোগ থেকে উত্তরণের পথ সহজ করে দিয়েছেন সমীর সাহা। উন্নত বিশ্বের দেশসমূহে সহজলভ্য হলেও, তারই তথ্য উপাত্তের উপর ভিত্তি করেই বাংলাদেশে এ দুই রোগের টিকা চালু হয়েছে। ইতিমধ্যেই অগণিত শিশুমৃত্যু রোধ করেছে এসব টিকা। বাবার প্রভাবেই মূলত এ বিষয়ে আগ্রহী হন সেঁজুতি।
স্বল্পোন্নত দেশসমূহে স্বল্প খরচে রোগ নির্ণয়ের সর্বাধুনিক পদ্ধতি ও তার সংক্রমণ প্রতিরোধে এ বাবা-মেয়ে যুগলের অবদান অনস্বীকার্য। বর্তমানে তারা বিশ্বস্বাস্থ্য খাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ নাম। সম্প্রতি, বিল গেটস তার ব্লগ 'গেটসনোটস'-এর সিরিজ ‘হিরো অফ দ্যা ফিল্ড’ এ সমীর সাহা এবং সেঁজুতি সাহার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
এই প্রশংসা করবার আগেও তাদের নিয়ে তেমন কোনো উচ্চবাচ্য ছিলো আমাদের মধ্যে। হয়তো কেউ কেউ তাদের নাম জেনেছেন শুধু। অথচ জনসাধারনের জন্যই কাজ করে চলেছেন তারা। কিছু শুকনো সম্মান ও ভালোবাসা ছাড়া আমরা হয়তো কিছুই দিতে পারবো না তাদের। তবে দেশের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের ক্ষমতাবানেরা তো এগিয়ে আসতেই পারেন সাহায্য নিয়ে। তাদের এই পথচলা আরো দীর্ঘ হোক, সেই শুভকামনাই থাকবে সবসময়।