জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, দিনরাত ২৪ ঘন্টা, করবেন কি এই অভিশপ্ত কাজ?
ধরুন, আপনি একটি ইমার্জেন্সি সার্ভিসে আছেন। যেখানে রয়েছে জীবনের ঝুঁকি। দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। নেই কোনো টাইমটেবিল, সাপ্তাহিক ছুটি। ২৪ ঘন্টা অন ডিউটির নিয়ম। ১২ থেকে ১৮ ঘন্টা পর্যন্ত খাটতে হচ্ছে গাঁধার মতো। জনবল নেই। সাপ্তাহিক ছুটি চেয়েও পাচ্ছেন না, কারণ কাজের বিধানে সেই ছুটির ব্যবস্থাও নেই।
কর্মক্ষেত্রে কাজের পরিবেশ নেই। কাজে উলটাপালটা করবেন তো হয়ে যাবেন বদলি। ডিউটি শেষে বাড়ি ফেরার পর জানলেন, তখনই আবার ডিউটিতে যেতে হবে। তারপরেও কোনো ওভারটাইমের ব্যবস্থা নেই। রোদ, ঝড়, বৃষ্টি, ঠান্ডা-গরমের বালাই নেই। যেকোনো আবহাওয়াতেই আপনাকে থাকতে হবে অলটাইম স্ট্যান্ডবাই। এর উপর রয়েছে অজশ্র অভিযোগের তীর। উচ্চপদস্থ হলেও এই দায়িত্ব খুব একটা এড়ানো যাবে না। পাবেন না কোনো পারিবারিক সময়, থাকবে না কোনো ব্যক্তিগত জীবন।
অন্যের দোষে আপনিও গাল খেতে পারেন, শুধুমাত্র ইউনিফর্মের জন্য। আর যতোই ভালো কাজ করেন না কেন, প্রশংসা পাবেন না কখনো। শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকতে হবে অধিকাংশ সময়। অবকাঠামোগতভাবেও খুব একটা সাহায্য পাবেন না কর্মস্থল থেকে। একটা সময় মনে হতে পারে, দেশের সকল দায়ভার যেন আপনার একার। এই একাকীত্বের ভিড়ে, কোথাও কেউ নেই যে কিনা আপনাকে সহমর্মিতা দেখাবে।
লড়াইটা যদিও পেশাগত দায়িত্ব, তবুও শুধু আপনি একা না, আপনার পরিবারও ভুগবে আপনার সাথে। ইউনিটভেদে সুযোগ সুবিধার কিছুটা তারতম্য থাকলেও, কষ্টের কমতি নেই। তবে রয়েছে অগণিত দুর্নীতি ও বীরত্বের সুযোগ। এখন আপনি কোন সুযোগ গ্রহণ করবেন সেটা নির্ভর করছে আপনার উপর।
হয়তো অভাবে নয়তো স্বভাবেই দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়লেন। সমষ্টিগতভাবে নিজের পেশাকে গাল খাওয়ালেন। তবে, এই ঢালাও দুর্নীতির প্যাঁচগোচ থেকে বেড়িয়ে এসে একটু ভাবুন। আপনিও তো মানুষ, আপনারও তো ভালো-মন্দ লাগা থাকতে পারে। শুধুমাত্র মানবিক দিক বিবেচনা করে হলেও, একটু সহমর্মিতা তো আপনি পেতেই পারেন। তাই না?
কিন্তু না! ওসব কিচ্ছু পাবেন না। আপনার জন্য রয়েছে অন্তরের অন্তস্থল থেকে অভিশাপ। আর এই অভিশাপের বোঝা মাথায় নিয়েই আপনাকে বাঁচতে হবে আজীবন। রিটায়ার্ড হয়েও নিস্তার পাবেন না। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অভিশাপ পেতে পেতে টায়ার্ড হয়ে যাবেন একদম। জমে থাকা কষ্টের নোনাজলে যদি এডিস মশাও ডিম পারে, তবুও মন খুলে কারো কাছে কিছু বলতে পারবেন না।
গঠণতন্ত্র অনুযায়ী, আদি ও আসল জঘন্য রীতিতেই আপনার দায়িত্ব পালন করতে হবে। কারণ যে কাজটি আপনি করছেন তার নিয়মকানুন প্রায় ২০০ বছর পুরোনো। ঠিক কী অনুভূতি হবে আপনার? ধরে রাখতে পারবেন মেজাজ? নাকি রাগে খিটমিট করবে পুরো দেহ ও মন? অবার বাঁকা চোখের চাহনি এড়িয়ে, সেই সময়ে পারবেন কি ঠিকমতো আপনার দায়িত্ব পালন করতে? আচ্ছা থাক সেসব কথা। আজ রবিবার, ৫ই জানুয়ারি, ২০২০। আজ থেকে শুরু হচ্ছে পুলিশ সপ্তাহ।