৫০ টাকা হয়তো আমার-আপনার কাছে কিছুই না। কিন্ত এই টাকায় ৩২৯ পৃষ্ঠার একটা ম্যাগাজিন পাচ্ছেন আপনি, যেখানে লিখেছেন দুই বাংলার জনপ্রিয় লেখকেরা। তার চেয়ে বড় কথা, পুরো টাকাটাই চলে যাবে করোনায় দুর্গতদের সাহায্যের জন্য...

করোনার ক্রান্তিকালে একদিকে যেমন ত্রাণের চাল চুরির মচ্ছবের খবর আসছে, মানুষের মন থেকে মানবতা হারিয়ে যাওয়ার অজস্র নজির তৈরী হচ্ছে, তারই বিপরীতে একদল আবার মন ভালো করে দেয়ার হাজারো গল্প লেখার মিশনে নেমেছেন। তাদের মধ্যে ডাক্তার আছে, পুলিশ আছে, ক্রিকেটার বা শিল্পপতি আছে, আছে আরও নানা পেশাজীবি। তারা সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, চেষ্টা করছেন সাহায্য করার। সেই তালিকায় এবার নাম লিখিয়েছেন লেখকেরাও, দুই বাংলার ৮৩ জন লেখকের লেখা নিয়ে অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে একটি ম্যাগাজিন, যেটির শুভেচ্ছা মূল্য রাখা হচ্ছে পঞ্চাশ টাকা। এই ম্যাগাজিন বিক্রি করে প্রাপ্ত টাকার পুরোটাই চলে যাবে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপে দুর্গত অসহায় মানুষের সাহায্যার্থে। ম্যাগাজিনের বিপণন ও অসহায়দের সাহায্যের পুরো প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করবে অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান লাইটার ইউথ ফাউন্ডেশন। 

ম্যাগাজিনের উদ্যোগটা নিয়েছিলেন রম্য লেখক সোহাইল রহমান। ফেসবুকে নিজের ব্যাঙ্গাত্মক লেখনীর কারণে দারুণ জনপ্রিয় এই তরুণ প্রথম ভেবেছিলেন, এই প্ল্যাটফর্মে যারা আছে, তাদের সবাইকে নিয়ে কিছু একটা করা দরকার করোনার এই সময়ে। সেখান থেকেই পিডিএফ ম্যাগাজিনের ভাবনাটার জন্ম। পরিকল্পনা করা হলো, অনলাইনে এই ম্যাগাজিন বিক্রি করে প্রাপ্ত টাকার পুরোটাই সাহায্য হিসেবে খরচ করা হবে অসহায় মানুষের জন্য। 

ম্যাগাজিনের নাম নিয়ে খানিকটা ঝামেলায় পড়তে হয়েছে, যা মাথায় আসে কোন কিছুই পছন্দ হয় না। শেষমেশ এই ম্যাগাজিনের নাম দেয়া হয়েছে 'অত্রিক', সেটাও সোহাইলেরই দেয়া। এবার লেখা সংগ্রহ করতে হবে, ভয়ে ভয়ে ফেসবুকের পরিচিত জনপ্রিয় লেখকদের মেসেজ দেয়া শুরু করলেন তিনি। ভেবেছিলেন, অনেকেই হয়তো পাশ কাটিয়ে যাবে, অনেকে হেসে উড়িয়ে দেবে। অথচ দেখা গেল, প্রত্যাশার চেয়েও বেশি সাড়া মিলছে! 

যাদের লেখা দিয়ে সাজানো হয়েছে 'অত্রিক'

সবার লেখা নেয়ার পর দেখা গেল, দুই বাংলা মিলিয়ে মোট লেখকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৩-তে! এই মূহুর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক সাদাত হোসাইন যেমন অত্রিকের জন্য লিখেছেন, তেমনই লিখেছেন ওপার বাংলার জনপ্রিয় ইউটিউবার কিরণ দত্তও। আছে ওবায়েদ হক, কাসাফাদ্দৌজা নোমান, ইশতিয়াক আহমেদ, নাজিম উদ দৌলা, জয়নাল আবেদীন, কিশোর পাশা ইমন, সৈয়দ নাজমুস সাকিব, মেহেদী হাসান মুন, মাহরীন ফেরদৌস, তানভীর মেহেদী, সোহাইল রহমান সহ আরও অনেকের লেখা। ৩২৯ পৃষ্ঠার বিশাল এই ম্যাগাজিনে ঠাঁই পেয়েছে ১৪টি কবিতা, ৫টি ফিচার, ৫টি হরর গল্প, ১৩টি রম্য গল্প, ১২টি থ্রিলার সহ মোট ৫২টি গল্প! 

লেখকেরা নিজেদের কাজ করেছেন, উদ্যোগ নিয়েছেন, লেখা সংগ্রহ করেছেন, ম্যাগাজিন তৈরী করেছেন, ফেসবুকে প্রচারণাও চালিয়েছেন। কিন্ত ম্যাগাজিন বিক্রি করে প্রাপ্ত টাকাগুলো করোনায় দুর্গত মানুষের জন্যে খরচ করাটা তো তাদের কাজ নয়, এই কাজের জন্যে স্বেচ্ছাসেবী কোন সংগঠনের দরকার, যাদের রুট লেভেলে মানুষের জন্যে কাজের অভিজ্ঞতা আছে। তখন এগিয়ে এসেছে লাইটার ফাউন্ডেশন। অলাভজনক এই প্রতিষ্ঠানটি দায়িত্ব নিয়েছে ম্যাগাজিন বিক্রি এবং সেই টাকা করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ব্যয় করার। 

২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি বরাবরই মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছে, যে কোন দুর্যোগে ছুটে গেছেন সংগঠনের ভলান্টিয়াররা। মিশন-২১ প্রোজেক্টের মাধ্যমে তারা কয়েকটি স্কুলে শহীদ মিনার বানিয়ে দিয়েছে। মিশন-৭১ নামের একটি প্রোজেক্ট এখনও চলমান, সেটির মাধ্যমে অসহায়-দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করা হয়। কাউকে হয়তো দোকান বানিয়ে দেয়া হয়েছে, কারো ঘর বানিয়ে দেয়া হয়েছে, কাউকে কিনে দেয়া হয়েছে নৌকা। নীলফামারীর আলসিয়াপাড়ায় তারা গড়ে তুলেছে মডেল ভিলেজ, সেই গ্রামের প্রত্যেকটা মানুষকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা তাদের লক্ষ্য। সেটা পূরণ হলে বাংলাদেশের ছিয়াশি হাজার গ্রামকেই আলিসিয়াপাড়ার মতো করে গড়তে চায় লাইটার ইউথ ফাউন্ডেশন। 

অত্রিক- এ লিখেছেন সাদাত হোসাইন

করোনায় দুর্গতদের জন্য লেখকদের এই 'অত্রিক' ম্যাগাজিনের উদ্যোগের কথা শুনে তারা পাশে দাঁড়িয়েছে। এই ম্যাগাজিনের শুভেচ্ছা মূল্য ধরা হয়েছে পঞ্চাশ টাকা। কেউ চাইলে এর চেয়ে বেশিও দিতে পারেন, কারণ টাকাটা চলে যাবে অসহায় মানুষের সাহায্যে। লাইটারের ওয়েবসাইটে গিয়ে কেনা যাবে অত্রিক, দেশের ভেতর থেকে পেমেন্ট করা যাবে বিকাশ এবং রকেটের মাধ্যমে, আর দেশের বাইরে কেউ কিনতে চাইলে পেমেন্ট করতে হবে পেপ্যালের মাধ্যমে। নির্ধারিত তথ্য দিয়ে টাকা পরিশোধ করলেই ইমেইলের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়া হবে ম্যাগাজিনের পিডিএফ ফাইল। ম্যাগাজিন বিক্রি করে কত টাকা আয় হলো, কত ব্যয় হলো- সেসবের বিস্তারিত সব আপডেটই দেয়া হবে। 

পঞ্চাশ টাকা আমাদের অনেকের জন্য কোন টাকাই না হয়তো। কিন্ত আপনার এই ছোট্ট কন্ট্রিবিউশনটাই হাসি ফোটাতে পারে কারো মুখে। এই বইটা যদি বইমেলায় প্রকাশিত হতো হার্ডকপি হিসেবে, কয়েকশো টাকা মূল্য হতো এটার। অসহায় মানুষকে সাহায্য করার জন্যেই কেউ একটা পয়সাও সম্মানী না নিয়ে পিডিএফ ম্যাগাজিন প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে, পাঠক হিসেবে সেই উদ্যোগটাকে সম্মান জানানোটা আমাদের কর্তব্য। মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোটাও আমাদের অবশ্য কর্তব্য। এক ঢিলে দুই পাখি মারার এই সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত হবে না কারো জন্যেই... 

অর্ডার করতে হবে এই লিংকে

কারো যদি ইনস্ট্রাকশন বুঝতে অসুবিধে হয়, সরাসরি লাইটারের ফেসবুক পেজের ইনবক্সে নক করলেই হবে।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা