আতিকুলের সঙ্গে থাকা কর্মীদের কাছে চা কেমন হয়েছে জানতে চাইলে তারা বলেছেন, "চা মজা হয়েছে।"

মোশাররফ করিমের একটা টিভি কমার্শিয়াল ছিল এরকম- চা দোকানদার থেকে ওয়ার্ড কমিশনার নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন তিনি। ভাই-ব্রাদারদের নিজের হাতে চা বানিয়ে খাওয়াচ্ছেন মোশাররফ করিম, আর ডায়লগ দিচ্ছেন- এক কাপ চা'ই যদি বানাইয়া খাওয়াইতে না পারি, কমিশনার হওয়ার পরে কী করমু? 

ঢাকা উত্তরের সদ্যসাবেক মেয়র এবং সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী আতিকুল ইসলামের প্রমোশনাল টিম সম্ভবত এই টিভি কমার্শিয়ালকে বেশিই সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছেন। আর তাই প্রচারণা চালাতে গিয়ে আতিকুল ইসলাম চায়ের দোকানদারকে হঠিয়ে নিজেই গদিতে বসে চা বানানোর কাজে লেগে গিয়েছেন, টিভি নাটকের উদ্ভট চা-ওয়ালার মতো হাঁকডাকও শুরু করেছেন!

ঘটনাটা ঘটেছে ঢাকার আফতাবনগরে, গতকাল। প্রচারণা চালাতে সেখানে গিয়েছিলেন আতিকুল। সেখানেই ইয়াসিন নামের এক চা বিক্রেতার দোকানে হঠাৎ ঢুকে পড়ে নিজেই চা বানানোর কাজে লেগে গেলেন তিনি। পরনে জিন্স-টিশার্ট, বাইরে শ'খানেক কর্মী সমর্থক, আনাড়ি হাতে দুধ-চিনি নিয়ে নাড়াচাড়া করছেন আতিকুল, অদ্ভুত একটা দৃশ্য! 

চা বানানো শেষ হলে আবার ‘এই চা হবে, চা...চা..., চা খাবেন চা...’ বলে হাঁকডাকও করেছেন আতিকুল! ঢাকা শহরে স্টল নিয়ে বসা কোন চা বিক্রেতা 'এই চা হবে চা চা চা...' বলে চা বিক্রি করে কীনা জানা নেই, আতিকুল ইসলামকে দেখেই জানা হলো ব্যাপারটা! আতিকুলের সঙ্গে থাকা কর্মীদের কাছে চা কেমন হয়েছে জানতে চাইলে তারা বলেছেন, "চা মজা হয়েছে।" 

মজার ব্যাপার হচ্ছে, নিজের হাতে চা বানিয়ে, খেয়ে ও খাইয়ে আতিকুল ইসলাম আট কাপ চায়ের জন্য দোকানি ইয়াসিনকে ৮০০ টাকা দিয়েছেন। প্রতি কাপ চায়ের দাম পড়েছে একশো টাকা। ঢাকা শহরে নিজের হাতে চা বানিয়ে খেয়ে বিক্রেতাকে কেউ প্রতি কাপ চায়ের বিল একশো টাকা দিয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। যাই হোক, মেয়র-কমিশনাররা বড় বড় লোকজন, তারা প্রতি কাপ চায়ের পেছনে একশো কেন, আরও বেশি টাকা খরচ করতে পারেন, সেটা তাদের ব্যাপার।

চা বানাচ্ছেন আতিকুল ইসলাম

যাই হোক, এসব পলিটিক্যাল স্ট্যান্টবাজী, প্রচারণার সময় কমবেশি সবাই এটা করে থাকে। আতিকুল ইসলাম এর আগেও এরকম স্ট্যান্টবাজী করেছেন, সড়ক দুর্ঘটনায় আবরার নামের এক ছাত্র নিহত হবার পরে সেখানে তার নামে ওভারব্রীজ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন, বলেছিলেন, আবরারের বাবাকে দিয়ে ওভারব্রীজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করাবেন! সমস্যার সমাধানের চেয়ে তার কাছে তাৎক্ষনিক প্রচারণাটা প্রাধান্য পায়, আনিসুল হকের উত্তরসূরির কাছে এমন আচরণ মোটেই কাম্য নয়। 

ঢাকা শহরে যেসব চা দোকানদারেরা ব্যবসা করেন, তাদের প্রত্যেককেই চাঁদা দিয়ে ব্যবসা করতে হয়। স্থানীয় রাজনীতিবিদেরা এই চাঁদাবাজীটা করেন। এমন নয় যে সেটা আতিকুল ইসলাম জানেন না। ইয়াসিনের দোকানে বসে চা বানানোর চেয়ে তিনি যদি ঘোষণা দিতেন যে, ইয়াসিনের মতো কোন ব্যবসায়ীকে চাঁদাবাজীর শিকার হতে হবে না, অন্তত তার এলাকায় যাতে চাঁদার জন্যে কাউকে হয়রানি করা না হয়, সেটা তিনি দেখবেন- তাহলে আমরা সাধুবাদ জানাতে পারতাম। 

ঢাকার চা দোকানগুলো ছাত্র আর কর্মজীবি মানুষের অন্যতম প্রধান গন্তব্যস্থল। অথচ প্রতিটা চা দোকানের সামনের পরিবেশ থাকে নোংরা। বেশিরভাগ জায়গাতেই ময়লা ফেলার কোন নির্দিষ্ট ঝুড়ি বা বাক্স নেই, যার যেখানে খুশি কলার খোসা থেকে সিগারেটের উচ্ছিষ্ট- সবকিছু ফেলছে। আতিকুল ইসলাম যদি ঘোষণা দিতেন, প্রতিটা চা দোকানের সামনে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে ময়লার ঝুড়ি বসানো হবে, সেটা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হবে চা দোকানদারকে- তাহলে ব্যাপারটা যুক্তিযুক্ত হতো। 

কিন্ত সেসব না করে তিনি সস্তা প্রচারণার পথে হাঁটলেন, হাসির খোরাক যোগালেন, মানুষ বিনোদন পেলো। কিন্ত বিনোদন দেয়াটা মেয়রের কাজ নয়, শুধু বিনোদন দিয়ে শহরটা সুন্দর হবে না, পরিচ্ছন্ন হবে না, বসবাসের উপযোগী হয়ে উঠবে না। ঢাকাকে বসবাসের উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্যে আমাদের কার্যকরী মেয়র দরকার, হাস্যরসের যোগান দেয়া জোকারের দেখা তো টিভি খুললেই পাওয়া যায়...


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা