আমরা আশায় বুক বাঁধতেই পারি, তবে বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক কেমন হতে যাচ্ছে সেটা ঠিক করে দেবে এর চিত্রনাট্য, নির্মাণ ও কলাকুশলীদের পারফর্মেন্স। বিশাল প্রেক্ষাপট, অসীম সম্ভাবনা।
আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনও আসেনি। ধারণা করা হচ্ছে, মুজিবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জীবনকাহিনী নির্ভর সিনেমার ঘোষণা আসবে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে। বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ প্রযোজনায় সিনেমাটি নির্মাণ হওয়ার গুঞ্জন রয়েছে।
ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো বিশ্বস্ত সূত্র উল্লেখপূর্বক সংবাদ প্রকাশ শুরু করেছে। সে সংবাদ অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করবেন বাংলাদেশের চিত্রতারকা আরিফিন শুভ। জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর ভূমিকায় আরিফিন শুভর নাম চূড়ান্ত হওয়ার পরই তিনি গতকাল সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ভারতের মুম্বাইতে উড়ে গিয়ে সিনেমার পরিচালক শ্যাম বেনেগালের উপস্থিতিতে চুক্তিপত্রেও সই করেছেন। আর তাতেই জল্পনা-কল্পনা, আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে অনলাইন-অফলাইন সিনেমাপাড়ায়।
এমনিতে আরিফিন শুভ ভীষণ আকর্ষণীয় দেখতে, সেটা তার নিন্দুকেও স্বীকার করবে। রোমান্টিক বা অ্যাকশন হিরোর ইমেজ ছেড়ে একদমই আলাদা একটা মূর্তি এখানে। বঙ্গবন্ধুর মতো প্রভাব বিস্তারকারী ব্যক্তিত্বকে ধারণ করা যে বেশ কঠিন হবে সেটা খুব সহজেই অনুমেয়। তার নিজেরও সচেতন থাকাটা খুব দরকার এসব জায়গায়। স্ক্রিপ্ট পছন্দের ব্যাপারটা যে কোন অভিনেতাকে চূড়ায় ওঠাতে পারে, আবার খাদেও নামিয়ে ফেলতে পারে। কথায় আছে, বেটার লেট দ্যান নেভার- তবে তাই হোক! গল্পটা ঘটে যাওয়া, গল্পটা আমাদের, গল্পটা প্রেডিক্টেবল, সেটাকেই ভিন্ন আঙ্গিকে পরিবেশনের একটা অন্যরকম একটি চেষ্টা। তৈরির দক্ষতা ও পরিবেশনার জোরে সাধারণ ডালভাতও দারুণ মুখরোচক খাবার হয়ে উঠতে বাধ্য, আর এখানে বাঙালি জাতির স্থপতির গল্প। বিশাল প্রেক্ষাপট, অসীম সম্ভাবনা।
র্যাম্প, রেডিও, ছোট পর্দা হয়ে এসে চলচ্চিত্রে পদার্পন করেছেন আরিফিন শুভ। রাতারাতি আজকের অবস্থানে আসেননি, আবার অভিনয়ে বিশাল পারদর্শী হয়েও যাননি। শুধু তাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, নতুন একটা এক্সপেরিমেন্ট হতে যাচ্ছে, যেটা আমাদের দেশের নির্মাতারা এর আগে তাকে নিয়ে করেননি কখনও। দুর্দান্ত অভিনেতা হওয়ার চাইতেও যেটা বেশি জরুরী, সেটা হচ্ছে চিত্রনাট্য বাছাইয়ের বেলায় পারদর্শী হওয়াটা। ভালো অভিনেতা বা ভালো পরিচালক নন, সিনেমার গুণাগুণ ঠিক করে চিত্রনাট্য। ভালো সিনেমা আর খারাপ সিনেমার মধ্যে এটাই পার্থক্য গড়ে দেয়। আমরা আশায় বুক বাঁধতেই পারি, তবে সিনেমাটি কেমন হতে যাচ্ছে সেটা ঠিক করে দেবে এর চিত্রনাট্য, নির্মাণ ও কলাকুশলীদের পারফর্মেন্স।
বাংলাদেশি তারকা আরিফিন শুভ এর আগে ‘ছুঁয়ে দিলো মন’, ‘ঢাকা অ্যাটাক’, ‘অস্তিত্ব’র মতো অনেক বাণিজ্য-সফল ছবি করেছেন। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর সঙ্গে তার ছবি ‘আহা রে’ বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ, সীমান্তের দুই পাশেই সমাদৃত হয়েছে। এরপরেও কথা থেকে যায়।
যে অভিনেতা অভিনয় করবেন এবং যার চরিত্রে অভিনয় করবেন, উভয়ের সাথে চেহারায় মিল থাকাটা এখানে মূখ্য নয়। আবার কোনো বিশেষ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য বানিজ্যিকভাবে সফল হওয়া কোন মাপকাঠি নয়। ক্যারেক্টার রোল প্লে করা কিংবা মেথড অ্যাক্টিং সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি ব্যাপার। সিনেমার ইতিহাসে যারাই সেরা বায়োগ্রাফিকাল পিকচার বা বায়োপিকের কেন্দ্রীয় অভিনয় করেছেন, তারা উতরে গিয়েছেন মেধা দক্ষতায়। শক্ত চিত্রনাট্যের সাথে দক্ষ অভিনয়, দুটোই প্রয়োজন।
বহির্বিশ্বের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি থেকে দারণ সব বায়োপিক বানানো হয়। আমাদের সিনেমার সোনালী অতীত থাকলেও, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তেমন কোনো সাফল্য নেই। পুরো দেশ ও জাতি মুখিয়ে আছে নিজেদের গর্বের ইতিহাস সিনেমার পর্দায় দেখার জন্য। আমাদের সেই আশা কি পূরণ হবে আদৌ?
এই বায়োপিকে বঙ্গবন্ধুর মা সায়রা বানুর চরিত্রের জন্য আগেই চূড়ান্ত হয়েছেন দেশের অন্যতম জ্যেষ্ঠ অভিনেত্রী দিলারা জামান। খন্দকার মোশতাকের চরিত্রে ফজলুর রহমান বাবু এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর চরিত্রে অভিনয় করার বিষয়ে চূড়ান্ত হওয়ার খবর মিলেছে অভিনেতা-নির্মাতা তৌকীর আহমেদের। বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেসার চরিত্রে অভিনয় করতে যাচ্ছেন জ্যোতিকা জ্যোতি, সেই কথাবার্তা নাকি চলছে। এই তালিকায় বাংলাদেশের শিল্পীরা সংখ্যায় অনেক বেশি হলেও ভারতেরও কয়েকজন অভিনেতা-অভিনেত্রী থাকছেন। জানা গেছে, বাংলা ভাষায় নির্মিত হচ্ছে সিনেমাটি। তবে পর্দায় হিন্দি সাবটাইটেল থাকবে।
বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনার এই চলচ্চিত্রটির জন্য বাজেট নির্ধারিত হয়েছে ৩৫ কোটি টাকা। এই বাজেটের ৬০ ভাগ দিচ্ছে বাংলাদেশ ও ৪০ ভাগ ভারত। বায়োপিকটি নির্মাণে শ্যাম বেনেগালের সহযোগী পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন দয়াল নিহালানি। চিত্রনাট্য করেছেন অতুল তিওয়ারি ও শামা জায়েদি। শিল্প নির্দেশনার দায়িত্ব পেয়েছেন নীতিশ রায়। কস্টিউম ডিরেক্টর হিসেবে আছেন শ্যাম বেনেগালের মেয়ে পিয়া বেনেগাল।
এই সিনেমায় উঠে আসবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় থেকে পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের নির্মম ট্র্যাজেডি। তারুণ্য থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং পরবর্তী সময়ের বঙ্গবন্ধুর দেখা দেখা মিলবে এই বায়োপিকে। চলতি বছরের ১৭ মার্চ শততম জন্মবর্ষে পদার্পণ করবেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শুরু হবে মুজিববর্ষ। জানা গেছে, সেদিন থেকে শুরু হবে এই সিনেমার শুটিং। এই মুজিববর্ষেই অর্থাৎ ২০২১ সালের ১৭ মার্চের আগেই আন্তর্জাতিকভাবে মুক্তি দেওয়া হবে সিনেমাটি। আসলে সিনেমাটা দেখলেই বোঝা যাবে, ভিন্নধর্মী এই নিরীক্ষা কতটা সফল হলো।