র্যাম্প মডেল থেকে ব্লকবাস্টার সিনেমার নায়ক: গল্পটা আরিফিন শুভ'র
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
'আরিফিন শুভ' নামটি তখন দর্শকদের কাছে নতুন ছিল না। র্যাম্প মডেল থেকে আসা ছয় ফুটের ও বেশি লম্বা এই সুদর্শন নায়ক টেলিভিশনের পরিচিত মুখ ছিলেন। শুরুর দিকে নিজের জায়গা অর্জন করতে অনেক পরিশ্রম করেছেন।
'আমি নিঃস্ব হয়ে যাবো জানো না,যখন তোমাকে পাবো না'- প্রায় অর্ধযুগ আগে সুপারহিট সিনেমা 'পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী' সিনেমায় চন্দন সিনহার এই গানটি শ্রোতাদের মুখে মুখে ফিরেছিল। বলা যায় গত দশকের অন্যতম সেরা জনপ্রিয় গান। পরে তো তিনটি শাখায় জাতীয় পুরস্কার পেয়ে গেল। সুপারস্টার শাকিব খানের একঘেয়ে সিনেমা, অনন্ত জলিলের হৃদপিন্ড বের করে আনা ট্রল, বাপ্পীর অভিনয়ের দূর্বলতার মাঝে বাংলা চলচ্চিত্রের নায়ক খরায় দর্শকদের হৃদয়ে বসন্তের হাওয়া নিয়ে এসেছিলেন জয়া আহসানের এই নায়ক। একে তো সিনেমার মূল নায়ক শাকিব খান,তাঁর চরিত্রটিও সঠিকভাবে বিকশিত হয় নি। তবুও অপূর্বের ছেড়ে দেয়া চরিত্রে অভিনয় করে এই এক গান আর নায়কোচিত লুকের জন্য বেশ আলোচনায় চলে আসলেন এই সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় নায়ক 'আরিফিন শুভ'।
'আরিফিন শুভ' নামটি তখন দর্শকদের কাছে নতুন ছিল না। র্যাম্প মডেল থেকে আসা ছয় ফুটের ও বেশি লম্বা এই সুদর্শন নায়ক টেলিভিশনের পরিচিত মুখ ছিলেন। শুরুর দিকে নিজের জায়গা অর্জন করতে অনেক পরিশ্রম করেছেন। এরপর বিজ্ঞাপন,নাটক করেছেন,জনপ্রিয় হয়েছে,টিভি পর্দায় ব্যস্ততা বেড়েছে। এত তারকার ভিড়ে 'ভালোবাসি তাই ভালোবেসে যাই' তাঁর চরিত্রটিই বেশি আলোচিত হয়েছিল,'ইজ ইক্যুয়াল টু' নাটকে অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছেন,ক্লোজআপ থেকে বাংলালিংক এর বিজ্ঞাপন করেছেন। তবে তাঁর স্বপ্ন ছিল সিনেমার নায়ক হবার,সেই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন।
প্রথম সিনেমা 'নমুনা' আজো মুক্তি পায় নি,আদৌ কখনো মুক্তি পাবে কিনা সন্দেহ। বন্ধুত্বের ছবি 'জাগো'তে অভিনয়ের পর বেশ বিরতি দিয়ে একেবারে সিনেমায় নেমে পড়েন 'পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী' দিয়ে। এর মাঝে 'ছায়া- ছবি' আগ্রহ জাগিয়েও আর মুক্তি পায় নি। এই সিনেমা যখন ই তাকে আলোচনার শীর্ষে নিয়ে এলেন ঠিক তখনই 'ভালোবাসা জিন্দাবাদ' এর মত অতি দূর্বল সিনেমায় অতি অভিনয়ে তিনি শুধু হতাশ ই করেন নি,যেই আশার সঞ্চার করেছিলেন তা ভেস্তেও দিয়েছিলেন।
তবুও এই দেশের দর্শকরা আশায় বুক বাঁধেন। নারীকেন্দ্রিক সুপারহিট ছবি 'অগ্নি'র পর 'তারকাঁটা'র প্রচারনার সুবাদে ঠিক যতটা আশা নিয়ে দর্শকরা সিনেমা হলে গিয়েছিলেন,ঠিক ততটা হতাশা নিয়ে ফিরেছিলেন। তবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছিল আরিফিন শুভর একাগ্রতা আর অভিনয়। কোরবানির ঈদে 'কিস্তিমাত' তো বলতে গেলে মুক্তির আগেই সুপারহিট হয়ে যায়,শাকিব খান তড়িঘড়ি করে নিজের সিনেমা সেন্সর করিয়ে ফেলেছিলেন এই গুঞ্জন ও আছে৷ তবে এইবারেও আশায় গুড়েবালি!
'ছুঁয়ে দিলে মন' ছিল জনপ্রিয় নাট্যনির্মাতা শিহাব শাহিনের প্রথম সিনেমা। আরিফিন শুভর ক্যারিয়ারে এই সিনেমাটি নিয়ে এসেছিল স্বস্তির সুবাস। বছরের সবচেয়ে আলোচিত সিনেমা হয়েও সুপারহিট হয় নি, গল্পেও বৈচিত্র্য ছিল না। তবু্ও শিহাব শাহিনের সুন্দর নির্মানে দর্শকরা এই সিনেমায় আরেফিন শুভকে অনেক পছন্দ করেছেন, গানগুলোও জনপ্রিয়তা পেয়েছিল৷ একই বছরের 'ওয়ার্নিং' ও নাম লিখিয়েছিল হতাশার খাতায়। মুসাফির, অস্তিত্ব, নিয়তি, প্রেমী ও প্রেমী, ধ্যততেরেকি- সব সিনেমাগুলোই নিয়ে দর্শকদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছিল। কেউ পছন্দ করেছেন, কেউবা অপছন্দ। তবে নির্মাতা আরেকটু সচেতন হলে 'মুসাফির' ছবিটি সমসাময়িক অনেক ছবি থেকেই বিশেষ হয়ে উঠতো। তুমুল সাড়া জাগানো 'আয়নাবাজি' তে স্বল্প সময়ে নির্ভরতার প্রতীক হয়েছেন।
পুলিশ থ্রিলার 'ঢাকা অ্যাটাক' এর বিশাল সাফল্যে ক্যারিয়ারের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হল। পুলিশের চরিত্রে নিজেকে ভাঙ্গলেন। যখন আবার তাকে নিয়ে আস্থা ও বিশ্বাসের প্রদীপ উদিত হচ্ছিল ঠিক তখনই একটি সিনেমার গল্প ও ভালো থেকোর মত দূর্বল সিনেমা যেন সেটা প্রায় নিভিয়েই দিচ্ছিল। এক সিনেমায় জ্বলে উঠেন তো আরেক সিনেমায় নিভে যান। কথিত আছে,আরিফিন শুভ সিনেমা নির্বাচন বেছে বেছে করেন অথচ এর মাঝেই বেশ সংখ্যক দূর্বল সিনেমা ক্যারিয়ারে ইতিমধ্যেই যুক্ত হয়ে গেছে। তবে তাকে নিয়ে সবচেয়ে সমালোচনা করা হয় দূর্বল অভিনয়ের কারনে।
টিভি নাটকে দক্ষ অভিনেতা না হলেও দূর্বল অভিনয় কখনোই চোখে পড়েনি। সিনেমায় এসে বিভিন্ন সিনেমায় অভিনয়ের তফাত পড়ে যায়। বিশেষ করে শেষ দুটি সিনেমায় তাঁর অভিনয় প্রতিভা নিয়ে রীতিমতো হতাশায় পরিনত হয়েছিল। দর্শকরা তাকে পছন্দ করেন, দুই দুইবার জনপ্রিয় শাখায় মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার পেয়েছিলেন, সমালোচক শাখাতেও পুরস্কার পেয়েছিলেন। 'ঢাকা অ্যাটাক' শুধু ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় হিট ছবিই নয়,এই সিনেমা তাকে এনে দিয়েছে জাতীয় পুরস্কারের মত সম্মান।
'আহারে'- নিজের দেশের সীমানা পেরিয়ে কলকাতায় ঋতুপর্ণার সঙ্গে করলেন এই সিনেমাটি৷ পুরো সিনেমায় এ যেন অন্য আরিফিন শুভ, যে দেখবে সেই প্রশংসা করবেই। এর মাঝে অপু হয়ে আসার কথা 'অভিযাত্রিক' সিনেমায়, কিন্তু দু:খজনক ভাবে হয় নি সেই কাজটা। 'বালিঘর' সিনেমাটিও আর হতে হতেও হলো না। ভাগ্য যেন সহায় হচ্ছে না, এই দুটি সিনেমা করতে পারলে নিজেকে আরো অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারতেন তিনি। প্রচলিত আছে,আরিফিন শুভর সিনেমা ভাগ্যের চেয়ে গান ভাগ্য খুবই ভালো। সেটার প্রমাণ মিলে নি:স্ব হয়ে যাবো, ছুঁয়ে দিলে মন থেকে ঢাকাই শাড়ি পর্যন্ত।
দেশীয় সিনেমায় প্রায় দেড় বছরের বিরতি কাটিয়ে ফিরেছেন 'সাপলুডু' সিনেমায়। গোলাম সোহরাব দোদুলের এই সিনেমায় তিনি ছিলেন প্রধান চরিত্রে। আলোচনায় এসেও ছবিটি আশানুরূপ ব্যবসাসফল হয় নি। সামনেই আসছে 'মিশন এক্সট্রিম', ঈদের উৎসবে তিনি আবার আছেন পুলিশের চরিত্রে, আবার সব বিপদ কে পাশ কাটিয়ে দেশরক্ষায় এগিয়ে আসবেন। এছাড়া শুটিং চলছে 'জ্যাম' এর। আপাতত আর কোন ছবির নাম এখন পর্যন্ত স্থির হয় নি। অভিনয়ে তিনি দুর্দান্ত নয়,তবে চেষ্টা করলে যে 'শুভ' হয়ে উঠেন সেটাই চলচ্চিত্রের এই ক্রান্তিলগ্নে খুব প্রয়োজন।
১৯৮২ সালের আজকের এইদিনে জন্মগ্রহণ করা এই জনপ্রিয় নায়ক আজ পেরোচ্ছেন জীবনের ৩৮ টি বছর,শুভকামনা রইলো। শুভ জন্মদিন..... আরিফিন শুভ