জনপ্রতিনিধিরা যেখানে চাল চুরিতে ব্যস্ত, তিনি সেখানে চালের বস্তা নিজের মাথায় করে নিয়ে ত্রান পৌঁছে দিচ্ছেন অসহায়দের কাছে। কখনো বৃষ্টিতে ভিজছেন, কখনো বা কড়া রোদে পুড়ে ডিউটি দিচ্ছেন।

ইউনিফর্ম জবের সবচেয়ে বড় বিপদ এটা- একই পেশার কেউ কোনো খারাপ কাজ করলে তার দায় বর্তায় ঐ পেশার সবার ওপর। আর যেকোনো পেশার সবাই ভালো করবে না এটাই স্বাভাবিক। তবে পাবলিক সার্ভিসের ক্ষেত্রে ভালো না করলে সোজা বিপথে, যেখান থেকে ফিরে আসাটা সহজ হয় না।   

র‍্যাব কিংবা পুলিশ, এই বাহিনীর নাম শুনলে প্রথাগতভাবেই আমাদের ভ্রু কুচকে যায় অজানা আশংকায়। তবে বলতে দ্বিধা নেই, করোনার এই ক্রান্তিকালে তারা যেভাবে কাজ করে যাচ্ছে সেটা অবশ্যই প্রশংসার দাবীদার। এই আলোর মিছিলে তেমনই একজন আনোয়ার হোসেন। একদম ওয়ান ম্যান আর্মি।

মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন 

সোশ্যাল মিডিয়াতেও বেশ কিছুদিন ধরে দেখছি মানুষটার অমায়িক কিছু কাজ। আমাদের রক্ষাবাহিনীতে এই মানুষগুলো এখনও আছে দেখে ভরসাটা এখনও আছে তাদের প্রতি। বলছি আনোয়ার হোসেনের কথা। তিনি একজন বিসিএস ক্যাডার এবং র‍্যাবের কমান্ডার। এএসপি হিসেবে র‍্যাব-৯, সিলেটের শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পে কর্মরত আছেন।  

চাইলে নিজ অবস্থানকে কাজি লাগিয়ে কী কী করা যায় তা শুধু দেখিয়েই দিচ্ছেন না। চমৎকার দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন বাকীদের জন্য। জনপ্রতিনিধিরা যেখানে চাল চুরিতে ব্যস্ত, তিনি সেখানে চালের বস্তা নিজের মাথায় করে নিয়ে ত্রান পৌঁছে দিচ্ছেন অসহায়দের কাছে। কখনো বৃষ্টিতে ভিজছেন, কখনো বা কড়া রোদে পুড়ে ডিউটি দিচ্ছেন। হ্যাঁ, এটাই তার কাজ। কিন্তু নিজের কাজটাই নিষ্ঠার সাথে করে কয়জনা?

নিজ উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ করছেন 

দিনভর হাড়ভাঙা পরিশ্রম করছেন, ডিউটি থেমে নেই রাতেও। পাড়া-মহল্লা ঘুরে দেখছেন, যাচ্ছেন বাজারেও, নিশ্চিত করছেন মানুষের সুরক্ষা। নিজ উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণের ব্যবস্থা করছেন। খোঁজ নিচ্ছেন সবার। কোথাও কেউ বঞ্চিত হচ্ছে কিনা সেই খেয়ালও রাখছেন। শত শত মানুষকে বোঝাচ্ছেন নিরলস ধৈর্য্য নিয়ে। সেগুলোর ভিডিও বেশ ভাইরাল হচ্ছে।

নববর্ষ উদযাপন করেছেন এভাবেই, রোদে পুড়ে ডিউটি করে 

তার নিজের ভাষ্য অনুযায়ী- ‘অনেকেই জানতে চান, আমি একজন বিসিএস ক্যাডার অফিসার এবং র‍্যাবের কমান্ডার হওয়া সত্ত্বেও খাদ্যসামগ্রীর বস্তা নিজে বহন করি কেন? বোঝা নেওয়ার জন্য নিচের র‍্যাংকের লোকজন তো আছেই। আসলে এক্ষেত্রে আমার ভাবনাটা একটু ভিন্ন। আমি যদি আমার অধীনস্থ র‍্যাব সদস্যদেরকে বোঝা বহন করবার আদেশ দিয়ে নিজে খালি হাতে হাঁটতাম, তাহলে তারা হয়তো আমাকে স্বার্থপর একজন নেতা হিসেবেই চিহ্নিত করতো, যা তাদের কর্মস্পৃহা ও মনোবলকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতো নিশ্চিত।

তাই প্রতিটি ক্ষেত্রে অধস্তনদের সমান ভার নেওয়া, চাল-ডালের বস্তা মাথায়/হাতে নিয়ে সবার সামনে সামনে চলাই আমার নেতৃত্ব দানের স্টাইল। কাঁধের র‍্যাংক দেখে নয়, কাজের মাধ্যমেই প্রমাণ হোক এখানে কমান্ডার কোন জন। অফিসাররা বোঝা মাথায় নিলে জাত চলে যাবে, বোঝা বহন করা শুধু নিচের র‍্যাংকের লোকদের কাজ- এমন অমানবিক ও মধ্যযুগীয় চিন্তাধারা করোনা ভাইরাসের সাথে সাথে পৃথিবী থেকে বিদায় হোক।’

লকডাউনে রাস্তাঘাটে অযথা ঘুরে বেড়ানো মানুষগুলোকে বুঝিয়ে বাসায় পাঠাচ্ছেন 

এই হচ্ছে মানুষটার ভাবনা। লাঠি হাতে তুলে নিতে যার চরম অনীহা। তাই তুলে নিচ্ছেন ভালোবাসা দিয়েই নিজ কাঁধে তুলে নিচ্ছেন দায়িত্বের বোঝা। পথে পথে ঘুরে তাই পালন করছেন সেই দায়িত্ব। তার এই কাজগুলো দেখে মুগ্ধতার রেশ যেন কাটতে চায় না। এমন একজনের বলিষ্ঠ নেতৃত্বই তো দরকার প্রতিটা বাহিনীর প্রতিটা দলে। 

নিজে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন দরিদ্রে বাড়িতে

একজন কমান্ডার কোনদিন অর্ধশত বাজারে নিজে গিয়ে টহল দেয়, কোনোদিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে ট্রাফিক পুলিশের কাজ করে। এসব করে এসে ফের বাড়ি বাড়ি ঘুরে শত পরিবারে নিজ উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ করে। করোনার দিনগুলোতে এভাবেই একজন আনোয়ার হোসেন তার কর্তব্যরত এলাকার মানুষকে আগলে রাখছেন।

রাতের আঁধারে ত্রান বিতরণ করছেন অসহায় পরিবারে মাঝে 

শুধুমাত্র ধন্যবাদ নয়, এই মানুষটার ভালোবাসা, সম্মান, সহযোগিতা সবকিছুই প্রাপ্য। এমন একজনের ছোঁয়ায় যদি বদলাতে শুরু করে আমাদের রক্ষা বাহিনীর ইমেজ, তাতে উপকৃত হবো আমরাই। প্রিয় আনোয়ার ভাই, প্লিজ কোনোভাবেই আপনার এই কাজগুলো থামাবেন না। নিজ উদ্যোগে আপনি যে বিপ্লব শুরু করেছেন সেটা ছড়িয়ে পড়ুক পুরো দেশে। আমরা চাই ঘরে ঘরে এমন আনোয়ার হোসেনের জন্ম হোক। শুভকামনা ও ভালোবাসা অবিরাম।   

আরও পড়ুন- 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা