আনোয়ার হোসেন: বাংলা চলচ্চিত্রের মুকুটহীন সম্রাট!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

নবাব সিরাজউদ্দৌলার মতো ডাকাবুকো চরিত্রে অভিনয় করা মানুষটাই নব্বই দশকে ম্লান হতে থাকেন, একেবারেই ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করতে থাকেন, হয়তো সেটা আর্থিক কারণেই...
"বাংলার আকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা, কে দেবে আশা কে দেবে ভরসা!" এই সংলাপেই মনে পড়ে যায় বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার কথা, আর এই চরিত্রে অভিনয় করে যিনি দর্শকদের মধ্যে চিরতরে ঠাঁই করে নিয়েছেন তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের মুকুটহীন সম্রাট খ্যাত কিংবদন্তি অভিনেতা আনোয়ার হোসেন।
বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অভিনেতা হিসেবে অগ্রগণ্য, নিজের অভিনয়ে প্রতিভায় সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন নিজেকে, পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেও নিজেকে কখনো ম্লান হতে দেননি। প্রথমদিকে বেশ কয়েকটি সিনেমায় নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেছেন। প্রথম সিনেমা 'তোমার আমার'। বর্নাঢ্য ক্যারিয়ারে সেরা সিনেমা হিসেবে বিবেচিত 'নবাব সিরাজউদ্দৌলা'তে অভিনয় করেছেন ১৯৬৭ সালে, এই সিনেমার পরপরই তিনি দর্শকদের মনে স্বতন্ত্র ভাবে আসন পেতে নেন, খেতাব পান মুকুটহীন সম্রাট হিসেবে।
বাংলা চলচ্চিত্রের বেশকিছু 'প্রথম' এর সঙ্গে তিনি জড়িত আছেন। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা 'মানুষের মন' এর অন্যতম অভিনেতা তিনি, প্রথম অ্যাকশনধর্মী সিনেমা 'রংবাজ' এরও অন্যতম অভিনেতা তিনি।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী প্রথম সিনেমা নারায়ন ঘোষ মিতার 'লাঠিয়াল' সিনেমায় প্রধান চরিত্রে অভিনয় করে তিনিই প্রথম সেরা অভিনেতা হিসেবে ১৯৭৫ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে আনোয়ার হোসেনই প্রথম একুশে পদক অর্জন করেন, সেটা ১৯৮৮ সালের কথা। দেশের অন্যতম সেরা প্রেক্ষাগৃহ বলাকা সিনেওয়ার্ল্ডে প্রদর্শন করা প্রথম সিনেমা ছিল তার অভিনীত 'দুই দিগন্ত'।
বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে জহির রায়হানের পরিচালনায় অভিনয় করেছেন 'কাঁচের দেয়াল' ও 'জীবন থেকে নেয়া' সিনেমায়। একজন স্বাধীনতাকামীর চরিত্রে অভিনয় করে সমুজ্জ্বল হয়ে আছেন জীবন থেকে নেয়া সিনেমাতে, মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা 'অরুণোদ্বয়ের অগ্নিসাক্ষী' তে তিনি নিজ চরিত্রেই অভিনয় করেন। সরকারী অনুদান প্রাপ্ত সিনেমা 'পেনশন' এ একজন অবসর প্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তার চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের চোখ ভিজিয়ে এনেছিলেন। নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছাড়াও ঐতিহাসিক চলচ্চিত্র শহীদ তিতুমীর, ঈশা খাঁ থেকে ভাওয়াল রাজার ঐতিহাসিক মামলা খ্যাত রাজা সন্ন্যাসীতেও অভিনয় করেছেন।
'আছেন আমার মোক্তার, আছেন আমার ব্যারিস্টার'- বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা গান। বিখ্যাত চলচ্চিত্র 'গোলাপী এখন ট্রেনে' ব্যবহৃত জাতীয় পুরস্কারজয়ী এই গানে তিনিই অভিনয় করেছিলেন, পাশাপাশি অর্জন করে নেন সহ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। পরবর্তীতে 'দায়ী কে' সিনেমার জন্যেও তিনি এই পুরস্কারে ভূষিত হন। সর্বশেষ ২০১০ সালে 'আজীবন সম্মাননা'য় ভূষিত করা হয় তাকে। বাংলা চলচ্চিত্রে আরেক যুগান্তকারী গান 'হায়রে মানুষ রঙিন ফানুশ'ও তার লিপেই ব্যবহৃত হয়েছিল।

এছাড়া ষাট, সত্তর ও আশির দশকে মুক্তি পাওয়া অন্যান্য চলচ্চিত্রের মধ্যে অরুণ বরুন কিরনমালা, এতটুকু আশা, আরাধনা, পালঙ্ক, নয়ন মনি, ভাত দে, রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত, দ্বীপ নেভে নাই, নীল আকাশের নীচে- এসব দারুণ সিনেমার অংশ ছিলেন আনোয়ার হোসেন। তবে পরিতাপের বিষয় নব্বই দশক থেকেই তিনি ম্লান হতে থাকেন, একেবারেই ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করতে থাকেন। হয়তো সেটা আর্থিক দিক বিবেচনা করেই। উনার অভিনীত সর্বশেষ চলচ্চিত্র 'ঘানি'।
২০১৩ সালে এই কিংবদন্তি অভিনেতা মৃত্যুবরণ করেন, আজ তার জন্মদিন, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রইলো তার জন্যে...
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন