বুশ-ওবামা হারেননি, ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারবেন ট্রাম্প?
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
বিল ক্লিনটন, জর্জ ডাব্লিউ বুশ, বারাক ওবামা- প্রত্যেকেই দুইবার করে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন। হাড্ডাহাড্ডি এই লড়াইয়ে শেষমেশ ট্রাম্প হেরে গেলে লজ্জাজনক পরাজয়ের নতুন এক ইতিহাসই লিখবেন তিনি...
ডোনাল্ড ট্রাম্প নাকি জো বাইডেন? হাতি নাকি গাধা? রিপাবলিকানদের সাম্রাজ্য ধরে রাখা, নাকি ডেমোক্র্যাটদের প্রত্যাবর্তন? এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত, এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আমেরিকার নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে, চলছে গণনা। শুরুর দিকে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন বড়সড় ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও, লড়াইয়ে ফিরে এসেছেন ট্রাম্প। ব্যবধান কমিয়ে এনেছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট, সুইং স্টেট হিসেবে যে রাজ্যগুলোকে ধরা হচ্ছে, সেগুলোতেও ভোটের সংখ্যায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবার খবরই আসছে। আরও কয়েক ঘন্টা লেগে যাবে ফলাফলের পরিষ্কার চালচিত্র পেতে, তবে নির্বাচন পূর্ববর্তী সমীক্ষায় যেভাবে ট্রাম্প পিছিয়ে ছিলেন, লড়াইয়ের ময়দানে সেরকমটা দেখা যাচ্ছে না একদমই।
ট্রাম্প অবশ্য কিছুক্ষণ আগেই নিজেকে জয়ী হিসেবে ঘোষণা করে দিয়েছেন। এখনও ভোটের বিশাল একটা অংশ গণনা বাকী থাকলেও, তিনি নিশ্চিত, জয় তারই হবে। ডেমোক্র্যাটরা নির্বাচন চুরির চেষ্টায় আছে- এরকম টুইট করে বিতর্কও উস্কে দিয়েছেন। টুইটার কর্তৃপক্ষ তাকে সতর্কও করেছে। ফ্লোরিডা, ওহাইও, টেক্সাস সহ বড় কিছু রাজ্যে ইতিমধ্যেই জয় নিশ্চিত হয়েছে রিপাবলিকানদের। ক্যালিফোর্নিয়া- যেখানে আমেরিকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইলেক্টোরাল ভোট (৫৫টি)- সেই রাজ্যে জয় পাচ্ছেন জো বাইডেন, নিউইয়র্কও ডেমোক্র্যাটদের দখলে গেছে- এরকমটাই জানা যাচ্ছে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল ভোটের মধ্যে বাইডেনের ঘরে গেছে ২৩৮টি ভোট, আর ট্রাম্প পেয়েছেন ২১৩টি ভোট। জয় নিশ্চিত করার জন্য অন্তত ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোট পেতে হবে। অনেকগুলো স্টেটের ফলাফল আসতে আসতে শুক্রবার পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে, তাছাড়া করোনা পরিস্থিতির কারনে এবার বিরাট সংখ্যক ভোটার ঘরে বসে ডাকযোগে ভোট দিয়েছেন। সেই ভোটগুলো গণনা করতেও সময় লাগবে। কাজেই এবারের নির্বাচনের পরিস্কার ফল পাবার জন্য আরও দুয়েক দিন অপেক্ষা করতেই হবে আমেরিকার মানুষকে।
সুইং স্টেটগুলোতে ট্রাম্প আধিপত্য ধরে রেখেছেন, এটা অনেককেই অবাক করেছে। সুইং স্টেট সম্পর্কে যারা জানেন না, তাদের জন্য জানিয়ে রাখি- বাংলাদেশে যেমন গোপালগঞ্জ আওয়ামী লীগের ঘাঁটি, বগুড়া বিএনপির ঘাঁটি, সেরকম আমেরিকাতেও কিছু স্টেট থাকে যেগুলো ডেমোক্র্যাট বা রিপাবলিকানদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এগুলোকে ব্লু স্টেট বা রেড স্টেটও বলা হয়। যেসব রাজ্যে ডেমোক্র্যাটদের ভোট বেশি, সেগুলো ব্লু স্টেট, যেসব রাজ্যে রিপাবলিকানদের ভোট বেশি সেগুলো রেড স্টেট। এর বাইরে কিছু রাজ্য থাকে, যেগুলোর ভোটারেরা চলমান ইস্যুর ওপর ভিত্তি করে ভোট দেন। নির্দিষ্ট কোন দলের প্রতি অনুরক্ত নন। মূলত এই রাজ্যগুলোর ফলাফলই ঠিক করে দেয় কে জিতবেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে। এবার সুইং স্টেটগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ফ্লোরিডা- সেই রাজ্যে ট্রাম্পের জয় নিশ্চিত হয়েছে ইতিমধ্যেই।
তবে এই নির্বাচনে ট্রাম্প যদি শেষমেশ হেরে যান, সেটা তার জন্য লজ্জাজনক পরাজয়ই হবে। কারন একবিংশ শতাব্দীতে যারাই আমেরিকান প্রেসিডেন্ট হয়েছেন, সবাই দুই মেয়াদ পূর্ণ করেই দায়িত্ব ছেড়েছেন, পুরো আট বছরই তারা হোয়াইট হাউজের বাসিন্দা ছিলেন। ট্রাম্পের পূর্বসূরি জর্জ ডাব্লিউ বুশ এবং বারাক ওবামা- দুজনেই ডাবল টার্ম প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এর আগে বিল ক্লিনটনও দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯২ সালে সবশেষ রিপাবলিকান প্রার্থী বুশ সিনিয়র তার প্রথম মেয়াদের পর দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও হেরে গিয়েছিলেন। তবে বুশের ছেলে জর্জ ডাব্লিউ বুশ ঠিকই দুইবার প্রেসিডেন্ট হয়েছেন।
১৯৯২ সালে শেষবার দ্বিতীয় নির্বাচন হেরেছিলেন বুশ সিনিয়র। সিনিয়র বুশ ক্ষমতায় এসে গাল্ফ ওয়ার বা উপসাগরীয় যুদ্ধ শুরু করেছিলেন। উপসাগরীয় যুদ্ধ নিয়ে মার্কিন জনতার মনে দেশপ্রেম জাগলেও অর্থনৈতিকভাবে সেই সময় অ্যামেরিকার মানুষ খুব বাজে পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল। অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, শেয়ার বাজারেও হয়েছিল ক্রামগত দরপতন। ধারনা করা হয়, সে কারণেই দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফিরতে পারেননি তিনি। আমেরিকা এখন পর্যন্ত তিনবার এমন নজির দেখেছে, যেখানে রানিং প্রেসিডেন্ট দ্বিতীয় দফায় নির্বাচন করে হেরে গিয়েছেন। ট্রাম্প হেরে গেলে সেটা হবে মাত্র চতুর্থ নজির!
বারাক ওবামা এবং বিল ক্লিনটন- দুজেনেই দুবারই নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছিলেন, কিন্ত জর্জ ডাব্লিউ বুশকে দ্বিতীয় দফায় নির্বাচিত হতে গিয়ে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হয়েছিল। আফগানিস্তান ইরাক যুদ্ধের পর বুশ তো নিজের দেশেই প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন, জাতীয়তাবাদের মূলো দেখিয়েও ভোট টানতে পারেননি ঠিকমতো। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী আল গোর মোট ভোটের ব্যবধানে তাকে পেছনে ফেলেছিলেন, কিন্ত বুশকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল ইলেক্টোরাল স্টেটের হিসেব নিকেশ। ইলেক্টোরাল ভোট বেশি পাওয়ায় আরেকবার ক্ষমতায় আরোহন করেছিলেন তিনি, কিন্ত সেই নির্বাচনের ফল গড়িয়েছিল আদালত পর্যন্ত।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাগ্যে কি আছে, সেটা জানা যাবে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই। কিংবা দুয়েক দিনও লেগে যেতে পারে ফলাফল পেতে পেতে। লড়াইটা যেহেতু সেয়ানে সেয়ানে হচ্ছে, তাই বাইডেন এগিয়ে থাকলেও, আগে থেকেই কিছু বলার জো নেই। একটা বা দুটো স্টেটের ফলাফলই এখনও পুরো নির্বাচনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। ট্রাম্প যেমন এগিয়ে যেতে পারেন বাইডেনের চেয়ে, তেমনই নির্বাচন থেকে ছিটকেও যেতে পারেন। ট্রাম্প কি সিনিয়ির বুশের পরিণতি বরণ করবেন, নাকি জুনিয়র বুশের মতো শেষ মুহূর্তে বিজয় নিয়ে ভি সাইন দেখিয়ে বেরিয়ে আসবে- সেটা জানার জন্যে তাই অপেক্ষা করতেই হচ্ছে...
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন