দুইশো ত্রিশ বছরের ইতিহাসে মাত্র একবারই ডেমোক্র্যাট বা রিপাবলিকানদের বাইরে থেকে প্রেসিডেন্ট পেয়েছিল আমেরিকা। তাহলে হাজারো প্রতিযোগী কেন অংশ নেন হোয়াইট হাউজের দৌড়ে? প্রাপ্তিটা কি তাদের?

আমেরিকার হাই-ভোল্টেজ নির্বাচন যতই সামনে আসছে, বিভিন্ন প্রসঙ্গে মানুষের আগ্রহও সমানতালে বাড়ছে। এই যেমন একটা প্রশ্ন খুব জোরেসোরেই শুনতে পাওয়া যাচ্ছে এখন, আমেরিকার নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক-রিপাবলিকান দের বাইরে কোনো প্রার্থীর নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু? উত্তর হচ্ছে, নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা শূন্য। কারণ গত ২৩০ বছরে আমেরিকার নির্বাচনে মাত্র একবারই এই দুই দলের বাইরে থেকে একজন হয়েছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। তাঁর নাম- জর্জ ওয়াশিংটন। আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট। 'স্বতন্ত্র প্রার্থী' ছিলেন তিনি। এরপর আর আসেননি কেউই। বিশ্বাস না হলে ঘেঁটে দেখতে পারেন নথিপত্র।

প্রশ্ন আসতেই পারে, এত এত বছর ধরে নির্বাচন হচ্ছে, সেখানে কেন এই দুই দলের বাইরে কেউ নির্বাচিত হচ্ছে না? প্রশ্ন উঠতে পারে, এই দুই দলের বাইরে কেউ কী দাঁড়ায়না নির্বাচনে? কারণ, ডেমোক্র্যাট বা রিপাবলিক না হলে নির্বাচনে জেতা যাবে না, তা তো এক রকম নিশ্চিত। তাহলে তো এই নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে নির্ঘাত অপমানিত হবার  কোনো মানে হয় না।

মজার ব্যাপার হলো, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ২৩০ বছরের ইতিহাসে দাঁড়িয়েছেন ডেমোক্রেটিক- রিপাবলিকানদের বাইরেও অনেক প্রার্থী৷ সংখ্যার হিসেবে সংখ্যাটা প্রায় ১,২১৬ জন। কিন্তু কেন নিয়মিত নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন তারা? যেখানে না জেতা দিনের আলোর মতই ধ্রুবসত্য, সেখানে কেন ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াচ্ছেন তারা? আরেকটি সমস্যাও আছে, ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকানদের বাইরে যেসব প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়ান, তাদের নামও কিন্তু সব স্টেটের ব্যালট পেপারে থাকে না। স্টেটের নিয়ম অনুসারে কিছু স্টেটের ব্যালট পেপারে তাদের নাম থাকে। বাকি স্টেটগুলোর ক্ষেত্রে  তাদের নাম থাকে 'রাইট ইন' প্রার্থী হিসেবে। অর্থাৎ ব্যালট পেপারের শুন্য বক্সে তাদের নাম লিখে চাইলে কোনো প্রার্থী ভোট দিতে পারেন। আর না দিতে চাইলে, সে তো বোঝাই যাচ্ছে।

তবুও এত বছর ধরে এত মানুষ স্রোতের বিপরীতে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন প্রার্থী হয়ে। কিন্তু কেন? সেখানেও রয়েছে বৈচিত্র্য। একেক জন দাঁড়িয়েছেন একেক উদ্দেশ্য নিয়ে। কেউ প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন স্রেফ জনপ্রিয় হওয়ার জন্যে। কেউ দাঁড়িয়েছেন আসলেই মানুষের সেবা করার জন্যে। আপনি যদি ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হন, আপনি আমেরিকার সব অসঙ্গতি চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে পারবেন না। আবার আপনি যদি রিপাবলিকান হন, তাহলেও আপনি আমেরিকার সব অসঙ্গতি নিয়ে কথা বলতে পারবেন না। কারণ এগুলো নিয়ে কথা বলতে গেলে নিজ নিজ দলের কিছু নীতিগত অসঙ্গতি নিয়েও কথা বলতে হবে আপনাকে। তাই এই দুই দলের প্রার্থীরা একটু নিরাপদে থেকেই স্ব স্ব দলের প্রচারণা চালান বরাবরই। একজন 'স্বতন্ত্র প্রার্থী'কে এসব নিয়ে না ভাবলেও চলে। সে নিরপেক্ষভাবে রাষ্ট্রের সব অসঙ্গতি নিয়ে কথা বলতে পারে। এ কারণে অনেকেই 'স্বতন্ত্র প্রার্থী' হিসেবে দাঁড়িয়ে দেশের সমস্যাগুলো তুলে ধরতে চান তাদের মত করে। তারা জানেন, তারা নির্বাচিত হবেন না। তবু দেশের সঠিক চিত্র তুলে ধরে জনসাধারণের সমর্থন পাবার মিরাকল এর আশা তারা করেন। সেটাও একটা কারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার।

হোয়াইট হাউজ বলতে গেলে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের একচেটিয়া সম্পত্তি হয়ে গিয়েছে! 

প্রথমেই বলেছি, আমেরিকায় এই দুই দলের বাইরে থেকে কারো কখনো নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই শূন্য। এর পেছনে প্রথম কারণ- এই দুই দলের সমর্থকগোষ্ঠি সময়ের ব্যবধানে এতটাই বিশাল পরিমাণে দাঁড়িয়েছে, সেটিকে ডিঙ্গিয়ে যেতে গেলে একটা নতুন দলের যে সময় বা যে পরিমাণে কারিশমা দেখানো দরকার, সেটা অসম্ভবের চেয়েও কঠিন। দ্বিতীয় কারণ- মিডিয়া ফুটেজ। আমেরিকার বহু রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এমনও হয়েছে, একজন প্রার্থী, যিনি ডেমোক্রেটিক বা রিপাবলিকান না, কিন্তু খুবই যোগ্য, তাকে মিডিয়া গোনাতেই ধরে নি। রীতিমতো উপেক্ষা করেছে। যেখানে মিডিয়া এসব মানুষদের নিয়ে আগ্রহী না, সেখানে সাধারণ মানুষের অজ্ঞাতসারেই রয়ে যান এসব যোগ্য প্রার্থীরা। মিডিয়া স্রেফ আড়ালে রাখে তাদের। তৃতীয় কারণ, টাকা। এক নির্বাচনে আপনি যদি একশো মিলিয়ন ডলার খরচ করতে না-ই পারলেন, আপনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার সাহস দেখান কী করে? ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকানদের জনবল বেশি, অর্থবল বেশি... এই দুই কারণে তাদের থেকে সম্মানজনক দূরত্বে থাকারও সৌভাগ্য হয়না অন্য কোনো দলের প্রার্থীর। তারা অর্থবলে ও জনবলে পিছিয়ে পড়ে যোজন যোজন দূরে।

বাংলাদেশে, ভারতে যেমন নির্দিষ্ট দুই দলের বাইরে খুব কম মানুষকেই আমরা দেখেছি মসনদে, আমেরিকার গণ্ডিও সেরকমই। অথচ ভিন্নমতের, ভিন্ন চিন্তাভাবনার মানুষের রাষ্ট্রব্যবস্থার শীর্ষপদে নিয়মিত পদচারণা হলে কতই না ভালো হতো! কিন্তু কে শুনবে কার কথা! কে বুঝবে নিজের ভালো!

এভাবেই হ-য-ব-র-ল হয়ে এগোচ্ছে সব। এবং এভাবেই আগামীতেও হবে সব। পরিবর্তন আসবে না মোটেও। 

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা