গ্রীনল্যান্ডের বরফ গলছে, মালদ্বীপ একসময় পুরোটাই ডুবে যাবে, তাতে আমাদের কী! আমরা তলিয়ে যাবো না। আমাদের ওপর আছে বিশেষ আশীর্বাদ।

হাসান মাহবুব: অস্ট্রেলিয়া আগুনে পুড়ছে, আমাজনও পুড়েছিলো, তবে আমাদের সুন্দরবন নিয়ে ভয় নেই। আমরা বাস করছি অলৌকিকতায় মোড়ানো এক রূপকথার দেশে। হাইতিতে, নেপালে ভূমিকম্প হয়,জাপানে সুনামি হয়, আমাদের এসব কিছুই হয় না, হবেও না। আমরা চাইলে পাহাড় কাটতে পারি, নদী দখল করতে পারি, বন উজাড় করতে পারি, প্লাস্টিক বর্জ্যে খাল-বিল ঢেকে দিতে পারি, এতে করে প্রতি বছর তাপমাত্রা একটু বাড়তে পারে, এর বেশি কিছু হবে না।

আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়বো। আমরা মহাকাশে নভোচারী পাঠাবো। আমরা জিডিপি প্রবৃদ্ধি ঘটিয়ে সবার হাতে প্রচুর টাকা তুলে দেবো, আর আরাম কেদারায় বসে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাব্যতা নিয়ে সৃষ্টিশীল মিম বানাবো। এই জাদুর দেশে কোন দুর্যোগ আসবে না। মানবসৃষ্ট বা প্রাকৃতিক, কোনটাই না।

আমরা সাজেককে লাস ভেগাস বানাবো। আদিবাসী তরুণীকে রাতের বেলা তাবুতে নিয়ে এসে নাচিয়ে সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করে আমোদ করবো। বান্দরবানের পাহাড়ী নদীর পাথর উত্তোলন করবো, বিনিময়ে উপহার দেবো চিপসের প্যাকেট আর বিয়ারের বোতল। ময়মনসিংহের বনে খোলা তার লাগিয়ে বানরদের ঝলসে দেবো। মহেশখালীতে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র বানিয়ে উৎখাত করবো বাতাস ও পাখিদের।

আমাদের এই পুতঃপবিত্র দেশে কারো অভিশাপ লাগবে না। আমাদের চাই আনন্দ। আমরা মাটির গভীর থেকে বিশুদ্ধ পানি তুলে এনে রিসোর্টের সুইমিংপুলে দেবো। দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতের শহরগুলিতে পানি বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে, মানুষ তৃষ্ণায় কাতর, ওসব না দেখলেও চলবে। আমাদের ওপর বিধাতা সন্তুষ্ট, ওসব আপদ দেবেন না।

গ্রিনল্যান্ডের বরফ গলছে, মালদ্বীপ একসময় পুরোটাই ডুবে যাবে, তাতে আমাদের কী! আমরা তলিয়ে যাবো না। আমাদের ওপর আছে বিশেষ আশীর্বাদ। ডোবা-মালা ভরাট করে বড় বড় বিল্ডিং বানাবো। সেগুলি টিকে থাকবে অনন্তকাল। ভূমিকম্প আমাদের তোয়াজ করে চলে। আমাদের রুখবে কে!

আমরা বিকেলে লেকের ধারে বেড়াতে গিয়ে প্লাস্টিক ফেলবো পানির বুকে। মাছগুলিকে তরতাজা করবো রাসায়নিক দিয়ে। পশুগুলিকে বন্দী করবো ফার্মে, বন জঙ্গলের কোন দরকার নেই। উচ্ছেদ করবো সেখানকার বাসিন্দাদের। আমরা একজন পিরেন স্নালের বুকে গুলি চালাবো। আমরা কল্পনা চাকমাকে গুম করে ফেলবো। কেড়ে নেবো পাহাড়, বুঁজে দেবো ঝর্ণা।

আমরা প্রচুর সন্তান জন্ম দিবো, এবং তারা কে কার দুধ-ভাই বোন হয়ে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যায়, এই আশঙ্কায় মিল্কব্যাংক বন্ধ করে দিয়ে দুধ না পাওয়া শিশুদের জীবন হুমকিতে ফেলে দেবো। আমরা কারো কর্মফল আমরা ভোগ করবো না। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের তরুণী ধর্ষণ, ছাত্র পেটানো আর কিছুদিন পরপর পুরান ঢাকায় কেমিক্যাল কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনা আমাদের দৈনন্দিন অভ্যস্ততার সঙ্গী হয়ে রবে। খবরের কাগজ পড়তে পড়তে আমরা পোহাবো সকালের রোদ।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা