মদিনায় মডেলদের ফটোশুট নিয়ে কেন এত আলোচনা?
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
নিত্যনতুন পরিবর্তনে চমকে উঠছে সৌদি আরব, প্রতিদিনই। সেই পরিবর্তনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেই সম্প্রতি ঘটেছে এমন একট ঘটনা, যাতে নড়েচড়ে বসেছেন অনেক মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষজন। সমালোচনার ঝড় বইছে অনলাইনে অফলাইনে।
২০১৭ সালে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সৌদি আরবের সংস্কৃতিগুলো কেমন যেন পরিবর্তিত হচ্ছে নিয়মিতই। ধর্মের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা, বেড়ে ওঠা এই ভূখণ্ডতে ধর্মীয় বিধিবিধান, সংস্কার, নারী পুরুষের অবস্থান- সবকিছু পরিবর্তনের মহান ক্রুসেডে যেন তিনি নেমেছেন। সৌদি আরব তেল নির্ভর অর্থনীতি থেকে বের হয়ে তাদের দেশের কর্মপরিধি বিস্তৃত করতে চাচ্ছে আশেপাশে যতদূর পারা যায়, একারণেই ক্রমশ দেশটি পশ্চিমা 'পেখম' এ সজ্জিত হচ্ছে, এমনটাই মতামত অনেকের। পরিবর্তনের প্রভাবে সিনেমাহল খুলেছে, নারী পুরুষের মেলামেশার রক্ষনশীলতা শিথিল হয়েছে, নারীরা পাচ্ছেন ড্রাইভিং লাইসেন্স, খুলেছে চটকদার বীচ। সে দেশেই সম্প্রতি ঘটলো একটি বিতর্কিত ঘটনা।
সৌদি আরবের পর্যটন মন্ত্রনালয় সম্প্রতি 'ভোগ' নামের ট্যাবলয়েডকে অনুমতি দিয়েছে পবিত্র মদিনা প্রদেশের আল উলা অঞ্চলে বিদেশি নারী মডেলদের দিয়ে ফটোশ্যুট করার জন্যে। এবং সেটি নিয়েই শুরু হয়েছে তীব্র নিন্দা। প্রথমে আল উলা অঞ্চলটির একটুখানি পরিচয় দেয়া দরকার। আল উলা অঞ্চলটি পবিত্র মদিনা নগরী থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি প্রাচীন ঐতিহাসিক জায়গা। মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষদের কাছে মদিনার পাশাপাশি এই জায়গাটিও পবিত্র। এবং ইউনেস্কো এই অঞ্চলটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবেও ঘোষণা দিয়েছে। পাথর কাটা দালান, ভাস্কর্য এবং অদ্ভুত সুন্দর সব ভবনের এই শহরটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত জাদুঘর হিসেবেও স্বীকৃত।
যেখানে মদিনা শহরের সাথে আল উলার দূরত্ব খুব বেশি না মোটেও, সেখানে কীভাবে ইসলামী সংস্কৃতির পরিপন্থী পোষাক, রুচিবোধের ফটোশ্যুটের অনুমতি দেয়া হতে পারে, সে নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন অনেকেই। তাছাড়া এই ফটোশ্যুটে মডেলরা খোলামেলা এবং ইসলামী সংস্কৃতিবিরুদ্ধ পোশাকে যে ফটোশ্যুট করেছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে তা ছড়িয়ে পড়েছে সৌদি আরবের প্রায় সবখানেই। এবং একারণেই মানুষ ক্ষুব্ধ হচ্ছেন অনেক বেশি। এই সুযোগে মোহম্মদ বিন সালমান এবং তার প্রশাসনেরও মুণ্ডুপাত করতে বাদ রাখেননি কেউই।
তবে কেউ কেউ আবার বলছেন, পবিত্র মদিনা থেকে জায়গাটি অনেকটাই দূরে, প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে। সেখানে করা একটি ফটোশ্যুটকে এতটা কট্টরভাবে দেখতে নারাজ তারা। তাছাড়া তাদের মতে, সংস্কৃতি এতটাও পলকা না যে, কোনো একটা ফটোশ্যুটেই তা ভেঙ্গে যাবে। একারণেই তারা এই বিষয়টিকে দেখছেন ইতিবাচক হিসেবে। তবে এ মানসিকতার মানুষের সংখ্যা নেহায়েতই কম। অধিকাংশ মানুষই এই ঘটনায় সংক্ষুব্ধ।
তবে যেটাই হোক না কেন, এই ঘটনাটি মোহাম্মদ বিন সালমান এবং তার প্রশাসনের কার্যকলাপকে আবার লাইমলাইটে তুলে দিয়েছে। সমালোচনা হচ্ছে তার বিভিন্ন সময়ের নেয়া সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে। সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হচ্ছে 'ভিশন ২০৩০' নিয়ে। কারণ এই 'ভিশন ২০৩০' এর আওতায় সৌদি আরবের প্রাচীন অনেক সংস্কারেরই বিলোপ ঘটবে পুরোপুরিভাবে। ধর্মীয় বিধি-নিষেধের কড়াকড়ি কমবে, রাস্তাঘাটে নারীদের ঐতিহ্যবাহী 'আবায়া' পড়ার যে নিয়ম আছে বাতিল হবে এটিও। নারী পুরুষের প্রকাশ্যে মেলামেশাতেও থাকবে না কোনো বিধিনিষেধ।
এতসব পরিবর্তনকে সৌদি আরবের বেশিরভাগ মানুষ যে ভালোভাবে নিচ্ছে না, তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু পশ্চিমাদের নেক নজরে আরো পাকাপোক্ত আসন গাঁড়ার জন্যে, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্যে প্রিন্স সালমান আর কী কী ভেলকিবাজি দেখাবেন, এখন সেটিই জানার বিষয়, দেখার বিষয়।
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন