
বায়ুদূষণের কারণে শিশু বয়সেই ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধীর মুখোমুখি হচ্ছে শিশুরা। গর্ভবতী নারী ও তার গর্ভস্থ সন্তানের জন্য বায়ুদূষণ অত্যন্ত ক্ষতিকর।
বৈশ্বিক উষ্ণতা দিনকে দিন বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে ঘনবসতি। এই দুইয়ের সরাসরি প্রভাব পড়ছে আমাদের জীবন যাপনে। যে বাতাসে আমরা নিশ্বাস নিচ্ছি, সেটির দূষণও পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে। পৃথিবীর প্রতি দশজনের নয়জনই বর্তমানে দূষিত বাতাসে নিশ্বাস নিচ্ছে। এই বায়ু দূষণের কবলে পড়ে প্রতি বছর মারা যাচ্ছেন অন্তত ৭০ লক্ষ মানুষ। মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর বায়ুদূষণের প্রভাব অত্যন্ত ভয়াবহ। স্ট্রোক, ফুসফুস ক্যান্সার ও হৃৎপিণ্ডের নানা সমস্যায় বিশ্বব্যাপী যত মানুষ মারা যাচ্ছেন, তার এক তৃতীয়াংশের কারণ বায়ুদূষণ। বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব ধুমপান ও অতিরিক্ত লবন খাওয়ার সমতুল্য।
দূষিত এলাকায় থেকে দূষণ এড়িয়ে চলা অসম্ভব। বাতাসে ভাসমান ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তুকণা শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যুহ ভেদ করে শ্বাসতন্ত্রে ঢুকে যেতে পারে এবং আমাদের ফুসফুস, হৃৎপিণ্ড এবং মস্তিস্কের ক্ষতিসাধন করতে পারে।
বায়ুদূষণ দুই প্রকার। বাসার বাইরে মুক্ত জায়গার বায়ুদূষণ এবং বাসার ভেতরের বায়ুদূষণ। গৃহস্থালির বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ যেমন কয়লা, কাঠ কিংবা কেরোসিন, কিংবা সংকীর্ণ বাতাস চলাচলের জায়গায় আগুন বা স্টোভ জ্বালালে বাসার ভেতরের বায়ুদূষণ হতে পারে। ইনডোর এবং আউটডোর, উভয় বায়ুদূষণই মানুষের জন্য যথেষ্ঠ ক্ষতিকর।
এশিয়া ও আফ্রিকায় ইনডোর বায়ুদূষণ সবচেয়ে বেশি। এই দুই মহাদেশে গৃহস্থালি বায়ুদূষণের কারণে প্রতি বছর অন্তত ৪০ লক্ষ মানুষ মারা যায়। নারী এবং শিশুরা যেহেতু বেশি সময় ধরে ঘরে থাকে, তাই ইনডোর বায়ুদূষণের সবচেয়ে বেশি শিকার তারাই। উল্লেখ্য, গ্যাস কুকার থেকে নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড এবং ফসিল ফুয়েল থেকে সালফার ডাইঅক্সাইড নিঃসরণ হয়।
শিশুদের ওপর বায়ুদূষণের প্রভাব ব্যাপক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, ৫-১৮ বছর বয়সী ১৪ শতাংশ শিশুর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার জন্য বায়ুদূষণ দায়ী। প্রতি বছর বায়ুদূষণজনিত শ্বাসকষ্টের কারণে ৫ বছরের কম বয়সী ৫ লাখ ৪৩ হজাার শিশু মারা যাচ্ছে। বায়ুদূষণের কারণে শিশুবয়সেই ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধীর মুখোমুখি হচ্ছে শিশুরা। গর্ভবতী নারী ও তার গর্ভস্থ সন্তানের জন্য বায়ুদূষণ অত্যন্ত ক্ষতিকর।
বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব
যে দূষিত বাতাসে আমরা নিঃশ্বাস নিচ্ছি, আমাদের স্বাস্থ্যে তার সরাসরি প্রভাব আছে।
- দূষিত বাতাসে শ্বাস নিলে অ্যাজমা ও শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়া ঝঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।
- বিজ্ঞানীরা বলেছেন, দিনে ৬-৭ ঘন্টা ওজন গ্যাসের সংস্পর্শে থাকলে ফুসফুসের কার্য়ক্ষমতা কমে যায় এবং রেসপিরেটরি ইনপ্ল্যামেশনে ভোগার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- দূষিত বায়ুতে অধিক পরিমাণে ক্যান্সারজনিত পদার্থ (carcinogens) থাকে, ফলে ক্যান্সারঝুঁকি বেড়ে যায়।
- কাশি এবং জোরে জোরে নিশ্বাস নেওয়া খুবই স্বাভাবিকে পরিণত হয়।
- মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি এবং রিপ্রোডাকটিভ সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
- বাতাসে ভাসমান অতিরিক্ত ক্ষুদ্র বস্তুকণার কারণে হৃৎপিন্ডের নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এমনকি মস্তিস্ক, লিভার ও কিডনির দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিও হতে পারে।
- দূষিত বাতাসে সালফার ডাইঅক্সাইড থাকে, যা মাথাব্যাথা, চোখ ও গলা জ্বালাপোড়ার প্রধান কারণ।
- দূষিত এলাকায় বসবাসের ফলে গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভপাত ও মৃত শিশু প্রসবের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যেতে পারে। এসব এলাকার দূষিত বায়ু এবং পানির কারণে তার নিজের এবং গর্ভের শিশুর স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
- শিশুদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ও স্নায়ুর ক্ষতি হতে পারে।

এর বাইরে পরিবেশের ওপর প্রভাব তো আছেই। বায়ুদূষণের ফলে পানি এবং গাছপালাও দূষিত হয়, প্রাণীরা সেই দূষিত গাছ ও ফল খায়, মানুষ আবার এসব প্রাণীর মাংস খায়। তাই এর প্রভাব পুরো খাদ্যপ্রক্রিয়ার ওপরই বিন্যস্ত।
চলবে...
(ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ে হ্যান্ডিমামার অ্যাওয়ারনেস ক্যাম্পেইনের দ্বিতীয় পর্ব এটি। আগামী পর্বগুলোতে বায়ুদূষণ মানসিক স্বাস্থ্যে কেমন প্রভাব ফেলতে পারে এবং কীভাবে বায়ুদূষণকে মোকাবেলা করা যায়- সেসব বিষয়ে আলোকপাত করা হবে।)
প্রথম পর্ব পড়ুন এই লিংকে ক্লিক করে