কিছুদিন আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বিদেশি কোচ একটা কথা বলেছেন, কেউ দেখছি তার কথার খুব একটা বিশ্লেষণ করছে না! এই কোচ বলেছেন- "বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের কারও সেই অর্থে খেলায় মনোযোগ নেই। এরা জানেই না এদের লক্ষ্য কী!

আমার ধারণা আমরা বাংলাদেশিরা জগতের সকল কিছু করি ভালো একটা বিয়ে করার জন্য! বিষয়টা একটু অদ্ভুত এবং এটি নিয়ে লিখতে আমার সঙ্কোচ বোধ হচ্ছে! আমার মতো মানুষের হয়তো উচিত হচ্ছে না এই নিয়ে লেখা। কারণ এর কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই কিংবা বৈজ্ঞানিক কোনো ব্যাখ্যা আছে কিনা অন্তত আমার জানা নেই এবং অতি অবশ্য'ই এটি স্রেফ আমার ধারণা। এরপরও লিখছি- কারণ বাস্তব জীবনে যা দেখি কিংবা শুনি সেটারও তো নিশ্চয়ই মূল্য আছে।

এই যে কিছুদিন আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বিদেশি কোচ একটা কথা বলেছেন, কেউ দেখছি তার কথার খুব একটা বিশ্লেষণ করছে না! এই কোচ বলেছেন- "বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের কারও সেই অর্থে খেলায় মনোযোগ নেই। এরা জানেই না এদের লক্ষ্য কী! এরা খেলে স্রেফ পরবর্তী ম্যাচে চান্স পাবার জন্য! তাই ৩০-৪০ রান করলেই এরা খুশি হয়ে যায়!"

এখন প্রশ্ন হচ্ছে- এরা কেন জানে না এদের লক্ষ্য আসলে কী? আমার অবশ্য উল্টো মনে হয়! আমার ধারণা এরা সবাই জানে এদের লক্ষ্য কী! যে করেই হোক পরের ম্যাচে চান্স পেতে হবে। কয়েক বছর জাতীয় দলে খেলতে হবে! এতে করে টাকা পাওয়া যাবে। সেই সঙ্গে পরিচিতি। ওই পরিচিতি ব্যাবহার করে ২০ বছর কিংবা ২২ বছর বয়েসে 'ভালো' একটা বিয়ে করে ফেলতে হবে! এরপর খেলতে টেলতে না পারলে সমস্যা নাই! ভালো একটা বিয়ে তো করা গেল। সেই সঙ্গে কিছু নগদ টাকা তো জাতীয় দল আর বিপিএল খেলে কামিয়ে নেয়া গিয়েছে! এরপর না হয় একটা রেস্টুরেন্ট বিজনেস কিংবা এই টাইপ কোনো বিজনেস দিয়ে বাদ বাকী জীবন চালিয়ে নেয়া যাবে। যেমনটা বলছিলাম- এটি অতি অবশ্যই আমার ধারণা। সত্যি নাও হতে পারে।

তবে কী, ২০ বছরের ছেলে মেহেদী মিরাজ বিয়ে করে হারিয়ে যেতে বসেছে! মুস্তাফিজ বিয়ে করে বসে আছে এবং তাকে খেলার মাঠে এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না! সাব্বির কিংবা এমন আরও হাজারটা উদাহরণ দেয়া যাবে। আমি কিন্তু অতি অবশ্যই বলছি না বিয়ে করা খারাপ। বিয়ে তো অবশ্যই করা যাতে পারে। এতে আপত্তি থাকার কথা না। আমার আপত্তির জায়গাটা হচ্ছে মানসিকতায়।

আমাদের যদি মানসিকতা টুকুই হয় এমন- যাই করছি; ভালো একটা বিয়ে করার জন্য করছি! তাহলে তো খুব স্বাভাবিকভাবে বিয়ের পর আর তেমন কিছু করা যাবে না। মানে সামনে এগুনো যাবে না! আপনার যা করার সেটা তো আপনি করে বসে আছেন!

ভালো একটা বিয়ে করেছেন- ব্যাস শেষ! আপনি তো বিজয়ী! আপনাকে কি আর এগুতে হবে নাকি! এইবার বিশাল একটা ভুঁড়ি বের করে পাড়ার মোড়ে দিনভর আড্ডা দিলেই তো চলছে! আর সেই সঙ্গে বউ-বাচ্চা পালা! সেটাও যদি ঠিক মতো হতো! আজকাল তো পরিবারগুলো কিংবা সম্পর্ক গুলোও ঠিক মতো টিকছে না। ব্রেক আপ কিংবা ডিভোর্স রেট তো অনেক বেড়ে গিয়েছে আমাদের সমাজে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- কেন বেড়ে যাচ্ছে?

আমি নিজে তো শিক্ষক। ছাত্র-ছাত্রীদের যখন জিজ্ঞে করি- পড়াশুনা করছ কেন? উত্তরে এরা বলে- ভালো একটা বিয়ে করার জন্য। এই হচ্ছে অবস্থা! আপনি পড়াশুনা করছেন ভালো বিয়ে করার জন্য। অর্থাৎ পড়াশুনা করে আপনি বিসিএস ক্যাডার হবেন, বড় চাকরী করবেন, বিদেশে যাবেন ইত্যাদি ইত্যাদি! আর এইসব দেখিয়ে আপনি ভালো একটা বিয়ে করবেন! সেটা ছেলে হোক কিংবা মেয়ে! এর মানে আসলে কী? আপনি কি মানুষটাকে ভালবাসছেন কিংবা বিয়ে করছেন নাকি তার চাকরী, অর্থ-সম্পত্তিকে?

আপনি যদি চাকরী, টাকা, অর্থ-সম্পত্তি এইসব দেখে প্রেম করেন কিংবা বিয়ে করেন; তাহলে একটা সময় যখন এর কোনো একটা কিছুর অভাব দেখা দিবে তখন তো ভালোবাসা জানালা দিয়ে উড়ে পালাবে; এটাই তো স্বাভাবিক! আমাদের সমাজে যে এতো ব্রেক আপ কিংবা ডিভোর্স হচ্ছে এখন; এর কারন কিন্তু এটাই।

ভালো বিয়ে করার জন্য আপনি জগতের সব কিছু করে বেড়াচ্ছেন! বিয়ের পর আর করতে ইচ্ছে হচ্ছে না। স্বাভাবিক ভাবেই তখন হিসেবগুলো আর মিলবে না! আপনি তো মানুষটাকে ভালবাসবেন কিংবা বিয়ে করবেন। তার হাঁটা চলা, কথা-বার্তা, চাল-চলন, চোখের চাহনি কিংবা নড়াচড়া এইসব'ই না আপনার ভালো লাগা উচিত। স্রেফ মানুষটাকে। সেটা না করে আমরা কিনা ভালবাসছি সব বস্তুগত জিনিস পত্রকে! বিদেশিরা তো আর এমনি এমনি এসে বলছে না- এদের কোনো লক্ষ্য নাই! এরা এগুবে কীভাবে!

লক্ষ্য তো আসলে আছেই- ভালো একটা বিয়ে করা! একটা আস্ত জাতি প্রজন্মের পর প্রজন্ম কাটিয়ে দিচ্ছে- ভালো একটা বিয়ে করার জন্য! কী অবাক কাণ্ড!


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা