মান্না: ক্রিমিনালি আন্ডাররেটেড যে অভিনেতা!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

আন্ডাররেটেড আর ওভাররেটেড এর পাশাপাশি আরেকটা টার্ম আছে- ক্রিমিনালি আন্ডাররেটেড। বাংলাদেশের সবচেয়ে আন্ডাররেটেড অভিনেতা কে? অনেকেই এই প্রশ্নের উত্তর হিসেবে হুমায়ুন ফরীদি, চঞ্চল চৌধুরী- ইত্যাদি নাম বলেন। কিন্তু ক্রিমিনালি আন্ডাররেটেড অভিনেতার তালিকা করলে আমি যার নাম নিবো, তিনি হচ্ছেন- মান্না।
আবির আহম্মেদ পিয়াস: অনেক অভিনেতা বা চলচ্চিত্রের ভাষায় নায়ক যারা আছেন, তাদের জীবনে একটা চলচ্চিত্র থাকে যা তাদের অমর করে ফেলে। এই তালিকায় "কালো বন্দুক মারুফ" সাহেবও আছেন তাঁর ইতিহাস চলচ্চিত্র নিয়ে, আবার একই হিসেব করলে এমন চলচ্চিত্র শাকিব খানের আবার নেই। তবে তিনি যখন উঠতি নায়ক, ফেরদৌস রিয়াজদের সাথে সিনেমায় দ্বিতীয় নায়ক হিসেবে কাজ করতেন, তখন তার কিছু পারফরমেন্স আছে, যেগুলো দেখে আমি হা হয়ে ভেবেছিলাম, এইটা শাকিব খান?
এই জায়গায় মান্না আলাদা। বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা কমার্শিয়াল চলচ্চিত্রটি তার দখলে, আম্মাজান যার নাম। এই চলচ্চিত্রটা দেখে আমি ছোটবেলায় কেঁদেছি। তখন দর্শকদের কান্না করাতেন অভিনেত্রীরা, অভিনেতাদের এই কাজে খুব একটা দেখতে পাওয়া যেতো না। আনোয়ারা ম্যাডাম ছিলেন, উনি অভিনয় করতেন, ব্যাকগ্রাউন্ডে ভায়োলিনের সুর বাজতো, আর টপটপ করে চোখের পানি পড়তো। শাবানা ম্যাডামও দক্ষ ছিলেন।
এই কাজটা মান্না অনায়াসে করতেন। তিনি কান্নাভরা কন্ঠে ডায়লগ বলতেন, মনে হতো এই লোকের বুক ভরা কষ্ট। আমি এখনও মনে করি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে তাঁর মতো অভিনেতা নায়ক হয়ে আর কেউ আসেনি এখন পর্যন্ত। তাঁর নামের পাশে ভালো-খারাপ চলচ্চিত্র অনেক আছে, কিন্তু আমার মনে হয় না খারাপ অভিনয় তিনি করেছেন কোনোটাতে।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র একটা সুতোর মধ্যে ঝুলে ছিল, সেই সুতো ছিলেন মান্না। তিনি মারা যাওয়ার পরপরই আমি মনে করি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের কবর হয়ে গেছে। তাঁর জায়গায় কেউ তো আসতে পারেনইনি, উল্টো অনেক অযোগ্য ব্যক্তি নায়ক হয়ে এফডিসিতে ঢুকে গেছে।
তবে মান্না অনেকদিন সার্ভিস দিয়েছেন, জীবদ্দশায় অনেক কাজ করে যেতে পারলেন না- এমন আফসোস তাঁর নেই। অনেক চলচ্চিত্রেই তিনি নায়ক হিসেবে কাজ করেছেন, আর অভিনয় দিয়ে মাতিয়েছেন দর্শকদের।

আজকাল মৃত অভিনেতাদের জন্মদিন-মৃত্যুদিন আসলেই তাঁদের মনে করা হয়, দুঃখজনকভাবে মান্নাকে সেভাবে কেউ মনে করেন না। মানুষজনের হাবভাব দেখে মনে হয় তিনি কখনো ছিলেনই না। এটা খারাপ লাগে। লোকটা ম্যাস অডিয়েন্সের কাছে প্রকৃত বিনোদনটাই দেয়ার চেষ্টা করেছেন আর বেশিরভাগ জায়গাতেই তিনি সফল। মানুষ মান্নাকে নায়ক হিসেবে জানে ঠিক, কিন্তু অভিনেতা হিসেবে তিনি ঠিক কী ছিলেন, তা মানুষ বুঝতে পারেনি। এটা চলচ্চিত্র জগতে বিশাল আফসোসের ব্যাপার। তাঁর অগণিত ভক্ত আজও তাকে স্বরণ করে ঠিক, কিন্তু সেটা খুবই কম মনে হয় আমার কাছে।
জনপ্রিয়তার শিখরে থেকে তিনি চেষ্টা করেছেন ভালো চলচ্চিত্র, ভিন্নধারার চলচ্চিত্রে কাজ করার, যা এফডিসির ভিতরে দেখা যায় না। সেখানে সব কমার্সিয়াল ফিল্মের কাজ, তার মধ্যে মান্না ভিন্নধারার গল্পের কাজও করেছেন বেশ কয়েকটি। এফডিসির একটা চেইন ব্রেক হতো যদি উনি আরও কয়েক বছর সার্ভিস দিতে পারতেন। হয়তো বাংলা চলচ্চিত্র আবার সুদিন ফিরে পেতো। আমরা আজও ধরতে পারিনি, মান্না মারা যাওয়ায় বাংলা চলচ্চিত্রের কত বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। এর চেয়ে বড় আফসোস আর নেই!