শাকিব খানের বেফাঁস কথামালা ও আব্রাহামের অনিশ্চিত ভবিষ্যত!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
আব্রাহাম একদিন জানতে পারবে, জন্মদাতা পিতা তার জন্মের ঘটনাটাকে 'একটা আবেগতাড়িত দুর্ঘটনা' ছাড়া আর কিছুই ভাবেন না! কাউকে বলে দিতে হবে না, সব প্রমাণ থরে থরে সাজানো থাকবে অনলাইনেই।
শাকিব খানের সাক্ষাৎকার পড়লাম পত্রিকায়। অপু বিশ্বাসের সঙ্গে নিজের বিয়ের ব্যাপারে শাকিব সেখানে বলেছেন- 'অপু বিশ্বাসের সঙ্গে আমার সম্পর্ক একটি আবেগতাড়িত দুর্ঘটনা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। একসঙ্গে অনেক কাজ করতে গিয়ে তাকে চিনতে ভুল করেছিলাম। সেই ভুল থেকে যথেষ্ট শিক্ষা নিয়েছি। আর ভুল করতে চাই না।' এই ইন্টারভিউটা, শাকিবের মুখে বলা লাইনগুলো অন্তর্জালে থেকে যাবে, আজ থেকে বিশ-ত্রিশ বা একশো বছর পরেও খুঁজে বের করা যাবে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে শাকিব কি বলেছিলেন।
আব্রাহাম খান জয়ের জন্যে মাঝেমধ্যেই আমার আফসোস হয় ভীষণ। তার বাবা বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়ক, তার মা'ও একটা সময়ে নাম্বার ওয়ান নায়িকা ছিলেন, মিডিয়ার ফোকাস তাদের ওপর সারাক্ষণ থাকে, আব্রাহাম হিসু করলে সেটাও খবর হয়ে যায়। এখন হয়তো আব্রাহাম কিছু বোঝে না, তাকে বা তার বাবা-মা'কে ঘিরে হওয়া আলোচনাগুলো ওর মাথায় ঢোকার কথা নয় এখন। কিন্ত এই ছেলেটা একদিন বড় হবে, সবকিছু বুঝতে শিখবে, সমাজে দশজনের সঙ্গে চলবে, বন্ধুবান্ধব হবে ওর- তখন এই তিতকুটে সত্য, আর বিচ্ছিরি অতীতগুলো এসে বারবার কি ওকে আঘাত করবে না?
আব্রাহাম একদিন জানতে পারবে, জন্মদাতা পিতা তার জন্মের ঘটনাটাকে 'একটা আবেগতাড়িত দুর্ঘটনা' ছাড়া আর কিছুই ভাবেন না! কাউকে বলে দিতে হবে না, সব প্রমাণ থরে থরে সাজানো থাকবে অনলাইনেই। সেগুলো কি আব্রাহামের চোখে পড়বে না কখনও? সে কি জানবে না, তার জন্ম দেয়ার জন্যে কি সংগ্রামটাই না করতে হয়েছিল তার মা অপু বিশ্বাসকে? সে জানবে, সন্তানের স্বীকৃতি আদায়ের জন্যে তাকে কোলে নিয়ে তার মা হাজির হয়েছিলেন একটা টিভি চ্যানেলে, লাইভ অনুষ্ঠানে কেঁদেকেটে বলেছিলেন, এটা শাকিব আর আমার সন্তান।
আজ থেকে কয়েক বছর পরে পত্রিকার আর্কাইভে গেলে বা গুগলে নিজের নাম লিখে সার্চ দিলেও আব্রাহাম জানতে পারবে, তার বাবা বুক ফুলিয়ে দাবী করেছিলেন- 'ছেলে আমার, কিন্ত অপু আমার বউ নয়!' কিংবা 'আজ পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছি, কাল দশ লাখ দিয়েছি, সারা জীবন দিয়ে যাব' টাইপের সংলাপগুলো কি চাইলেও মুছে ফেলা যাবে পত্রিকার পাতাগুলো থেকে? সেগুলো দেখে আব্রাহাম কি ভাববে? বাবার প্রতি তীব্র ঘৃণা জন্ম নেবে তার? নাকি নিজেকেই অপবাদ দেবে সে?
এই পৃথিবীতে বাবা মায়ের কাছে সন্তান হচ্ছে সবচেয়ে বড় উপহারের নাম, সবচেয়ে বড় আশীর্বাদও। সেই আশীর্বাদকে শাকিব খান উল্লেখ করেছেন 'আবেগতাড়িত ভুল' হিসেবে। আব্রাহাম ভাবতেই পারে, এই পৃথিবীতে ওর আগমনটা না ঘটলেই বোধহয় ভালো হতো। এত জলঘোলা হতো না শাকিব-অপুর সম্পর্ক নিয়ে, জন্ম নিতো না হাজারটা অসুস্থ আর নোংরা বাক্যের।
আমার ভয় হয়, এই বাচ্চা ছেলেটার জন্যে বাংলাদেশে ভয়াবহ একটা ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে। এদেশে পান থেকে চুন খসলেও বুলিংয়ের শিকার হতে হয়, কারো গায়ের রঙ কালো হলে, দেখতে একটু অন্যরকম হলে, কিংবা স্বাস্থ্যটা মোটার দিকে হলেও কটুকথা শোনা লাগে। সেখানে আব্রাহাম খান তো যে কারো জন্যেই একটা হট টপিক, তাকে শিকার বানানোর এমন সহজ মওকা কেউ কি ছাড়বে? আমার মনে হয় না। কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিতে, খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করতে আমাদের কোন জুড়ি নেই, মানুষের দুর্বল জায়গাটায় আঘাত হানতে আমরা পৈশাচিক আনন্দ অনুভব করি। আমাদের হাত থেকে এত সহজ শিকার হাত ফসকে বেরিয়ে যাবে- এটা হতেই পারে না!
আমি মনেপ্রাণে চাই, অপু বিশ্বাস তার ছেলেকে নিয়ে দেশ ছেড়ে চলে যাক, দূরে কোথাও, যেখানে কেউ শাকিব খানের নাম জানে না, আব্রাহাম খানের পরিচয় নিয়ে যেখানে কেউ নাক গলাবে না। অসুস্থ একটা পরিবেশে নিত্য কটুবাক্যের শিকার হয়ে এই ছেলেটা বেড়ে উঠুক, এটা কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না। আব্রাহামের জন্মদাতা যেসব কাণ্ডকীর্তি করে গেছেন, এখনও করছেন, যা যা বলছেন- সেগুলো আব্রাহামের ভবিষ্যতকে আঘাত করবে খুব মারাত্মকভাবে। শাকিব খানের সেটুকু বোঝার মতো মগজ না থাকলেও, আমাদের আছে...