শিখ ধর্মাবলম্বীদের ধন্যবাদ জানাতে পাগড়ি পরে বিয়ের আসরে মুসলমান বর
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
আগ্রহ জাগাটা স্বাভাবিক- মুসলিম বর কেন শিখদের মতো পাগড়ি পরে বিয়ে করবেন? তার বন্ধুরাই বা একই রকম পাগড়ি মাথায় চাপাবেন কেন? ঘটনাটা কী?
ইসলাম ধর্ম মতে বিয়ে পড়ানো হচ্ছে, পাত্র-পাত্রী দুজনেই মুসলমান। কিন্ত একটা জিনিস বেখাপ্পা- পাত্রের মাথায় পাঞ্জাবী শিখদের মতো করে পাগড়ি বাঁধা। শুধু বরই নয়, তার কয়েক বন্ধুর মাথায়ও সেই পাগড়ি, শিখরা যেটাকে 'টারবান' বলে। আগ্রহ জাগাটা স্বাভাবিক- মুসলিম বর কেন শিখদের মতো পাগড়ি পরে বিয়ে করবেন? তার বন্ধুরাই বা একই রকম পাগড়ি মাথায় চাপাবেন কেন? ঘটনাটা কী?
দুটো ধর্মের মানুষের বন্ধুত্বের বহিঃপ্রকাশ বলা যায় এটাকে, কিংবা বলে পারেন কৃতজ্ঞতা স্বীকারও। দিল্লির হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সময় আক্রান্ত মুসলমানদের সাহায্যার্থে যেভাবে শিখ ধর্মাবলম্বী মানুষজন এগিয়ে এসেছে, সাহায্য করেছে মুসলিমদের জায়গা দেয়ার জন্যে নিজেদের ধর্মীয় প্রার্থনাগৃহ গুরদ্বার খুলে দিয়েছে, সেটা ছিল অনন্য এক নজির। ব্যক্তিগতভাবেও শিখ সম্প্রদায়ের মানুষজন মুসলমানদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, শিখ অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে তারা কড়া পাহারা দিয়েছেন, যাতে মন্দির বা মসজিদ কোথাও এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঢেউ এসে লাগতে না পারে।
উন্মত্ত দাঙ্গাবাজরা যখন হামলা চালিয়েছে, দিল্লির গোকলপুরি এলাকার মহিন্দর সিং এবং তার ছেলে ইন্দরজিত সিং মিলে তাদের পাড়ায় আটকে পড়া ৬০/৭০ জন মুসলমানকে নিরাপদে পৌঁছে দিয়েছেন মুসলমান অধ্যুষিত এলাকায়। নিজেদের মোটরসাইকেলে করে, প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে হামলাকারীদের নাকের ডগার ওপর দিয়ে এতগুলো মানুষকে পার করেছেন তারা, প্রাণ রক্ষা করেছেন নারী-শিশু আর বৃদ্ধ সবার। দিল্লি দাঙ্গার ভয়াবহতার মধ্যেও এই গল্পগুলো রূপকথার মতোই বেঁচে আছে।
শিখ সম্প্রদায়ের এই সাহায্যের স্বীকৃতি হিসেবেই তাদের ছোট্ট একটা ধন্যবাদ দেয়ার জন্যে পাঞ্জাবের তরুণ আবদুল হাকিম একদম আলাদা একটা রাস্তা বেছে নিয়েছেন। নিজের বিয়ের আসরে তিনি উপস্থিত হয়েছেন মাথায় শিখদের মতো করে পাগড়ি বেঁধে। ফতেহগড় সাহিব এলাকার বাসিন্দা হাকিমের বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল মার্চের ১ তারিখে। হবু স্ত্রী, শ্বশুর আর যে কাজী বিয়ে পড়াবেন, তাদের সবার সঙ্গে আগেই কথা বলে নিয়েছিলেন হাকিম, তাদের অনুমতি নিয়েই বিয়ের আসরে টারবান মাথায় দিয়ে এসেছেন, যে ঘটনাটা এখন টক অফ দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে।
শুধু বর হাকিমই নন, পরিকল্পনা শোনার পরে তার বন্ধুরাও এই পাগড়ি পরার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। সাধারণত বিয়েতে যেমন সবাই এক রঙের বা এক ডিজাইনের পাঞ্জাবী পরতে চায়, এখানেও ব্যাপারটা সেরকমই দাঁড়িয়েছে, বর আর বরের বন্ধুরা সবাই মিলে একই রকমের পাগড়ি পরে গেছেন কনের বাড়িতে। দাঙ্গার সময়টায় দিল্লির শিখ সম্প্রদায়ের মানুষেরা যেভাবে মুসলমানদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, তাদের আশ্রয় দিয়েছেন, খাবার দিয়েছেন- সেই অবদানটাকে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার সঙ্গে স্মরণ করেছেন তারা, বিয়ের আসরের মাঝেই উঠে এসেছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অসাধারণ বার্তা।
আবদুল হাকিমের শ্বশুর কিন্ত নিজের মেয়ে জামাইয়ের এমন কাজে দারুণ খুশি। প্রেমের বিয়ে হওয়াতে শুরুতে আপত্তি করেছিলেন তিনি, কিন্ত মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রাজী হয়েছিলেন বিয়েতে। এখন তার মনে হচ্ছে, এমন জামাই পাওয়াটা রাজার ভাগ্য! এলাকার লোকজন এসে তাকে সাধুবাদ জানাচ্ছে, দূর-দূরান্ত থেকে ফোনে উড়ে আসছে ভালোবাসার বার্তা- তার মুগ্ধতা এখনও কাটেনি পুরোপুরি।
এত কিছুর মূল হোতা যিনি, সেই আবদুল হাকিম কিন্ত মিডিয়ার সামনে আসেননি, কোন বক্তব্যও দেননি। লাজুক স্বভাবের এই তরুণ আড়ালে থাকতেই পছন্দ করেন বলে জানিয়েছেন তার স্বজনেরা। তবে ভালোবাসার প্রকাশ এবং ধন্যবাদ জানানোর জন্যে যে পন্থা আবদুল হাকিম বেছে নিয়েছেন, সেটা যে অনন্য তাতে কোন সন্দেহই নেই। হানাহানির এই পৃথিবীতে ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়াটা খুব জরুরী, নইলে ধর্ম আর জাতপাতের নাম করে মানুষ শেষ হয়ে যাবে একদিন, সেটা থেকে আমাদের বাঁচাতে পারে কেবল ভালোবাসাই...