ব্রুনাইয়ের 'উন্মাসিক' রাজপুত্রের বিলাসী জীবন ও করুণ এক অন্তিম পরিণতি!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

তিনি ছিলেন ব্রুনাইয়ের রাজপুত্র, লণ্ডনে কাটাতেন বিলাসী জীবন। মাইকেল জ্যাকসন, পামেলা অ্যান্ডারসন- সব সেলিব্রেটির সাথেই ছিলো তার ওঠাবসা। অঢেল অর্থবিত্তের এক জীবন ছিলো তার। সে জীবনটাই পাল্টে গেলো হঠাৎ!
এই ডিজিটাল যুগে 'ঠাকুরমার ঝুলি' চলে এসেছে কিন্ডল এ। প্রগতির গুতোয় ধুলোমলিন হচ্ছে সব প্রাচীন ঐতিহ্যই৷ হলদেটে ঠাকুরমার ঝুলির রাজা, রাজপুত্র, রাজকন্যারাও আজ প্রয়াত। তবুও মাঝেমধ্যে দুয়েকজন রাজা-বাদশার খবর আমরা পাই। তারা অবশ্যই আগের সময়ের মত জবরজঙ না। সময়ের সাথে সাথে পাল্টেছে তাদের হাবভাবও। এরকমই একজন ব্রুনাইয়ের রাজপুত্র আবদুল আজিম। গোটা জীবদ্দশায় তার বিলাসী জীবনযাপনের খবর জানলে আমোদিত হবেন যে কেউই। লন্ডনের এবং হলিউডের বিনোদন জগতের সব সেলিব্রেটির সাথে তার ওঠাবসা,আনন্দ, ফূর্তি। আধুনিক এক রাজপুত্রের জীবনযাপন যেরকম হওয়া উচিত, সেরকমই ছিলো তার জীবনযাত্রা।
ব্রুনাইয়ের প্রচণ্ড বিত্তশালী সুলতান হাসান-আল বলকিয়াহের দ্বিতীয় ছেলে আবদুল আজিম। সুলতান তাকে ব্রুনাই তে না রেখে লণ্ডনে পাঠিয়েছিলেন দুটি কারণে। প্রথম কারণ- সুলতানের ছোটভাই অর্থাৎ আজিমের চাচা, জেফ্রি, খুব অল্পবয়স থেকেই উচ্ছৃঙ্খল জীবনে অভ্যস্ত ছিলেন। সুলতান চাচ্ছিলেন না, তার ছোটভাইয়ের মতন তার ছোট ছেলেটাও বখে যাক। তাই তিনি ছেলেকে পাঠিয়েছিলেন লন্ডনে। দ্বিতীয় কারণ, সুলতানের বড় ছেলে ব্রুনাইয়ের ক্রাউন প্রিন্স বিল্লাহ অক্সফোর্ডের ম্যাগডালেন কলেজে ইসলামিক স্টাডিজে পড়াশোনা করে বেশ কৃতিত্বের সাক্ষরই রেখেছেন। সুলতান তাই চাচ্ছিলেন, ছোট ছেলেও বিল্লাহ'র দেখানো পথ অনুসরণ করুক।
রাজপুত্র আবদুল আজিম ব্রুনাই ছেড়ে লন্ডনে এসে পেয়ে যান এক মুক্ত জীবন। বাবা যদিও প্রথমে রয়েল মিলিটারি একাডেমিতে পড়াশোনা জন্যে পাঠিয়েছিলেন আজিমকে। কিন্তু সেখানে এক সপ্তাহ থেকেই বের হয়ে আসে সে। বাবা অঢেল টাকা পাঠাচ্ছে। সে টাকাতেই ছেলের প্রচণ্ড বিলাসী জীবন শুরু হয় তখন। একটি ঘটনা বললেই বোঝা যাবে কতটা জাঁকজমকের জীবন ছিলো তার।
লন্ডনের ব্রমলি'র চার্চিল থিয়েটারের সামনে একদিন মানুষের বিশাল হট্টগোল। দামী দামী সব গাড়ি নিয়ে আসছেন একের পর এক সেলিব্রেটি। ঘটনা কী! এলাকাবাসীর চক্ষু চড়কগাছ। হচ্ছে কী এখানে! জানা গেলো চার্চিল থিয়েটারে বন্ধুবান্ধবকে নিজের প্রিয় পাপেট শো 'সিন্ডারেলা' দেখাবেন আবদুল আজিম। এ কারণে পুরো থিয়েটারই বুক করে নিয়েছেন তিনি। এবং সেখানে বাড়াবাড়ি রকমের পার্টির ব্যবস্থাও হয়েছে। রাতভরই চলেছে সেখানে পার্টি!

ইসলামপন্থী দেশ থেকে এলেও আবদুল আজিমের কাজকর্মে তার ছিটেফোঁটাও ছিলো না। তার ফ্যান্টাসি-কিংডমে কোনো ধর্মের কোনো অনুশাসনেরই লেশমাত্র ছিলো না। মাদক, নারী, নগ্নতা... সেসব তো ছিলোই। আজিমের সমকামী বন্ধুও ছিলো বিস্তর। অথচ ব্রুনাই'তে তখন সমকামের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড! এভাবেই ক্রমশ এগোচ্ছিলো রাজপুত্র আবদুল আজিমের গল্প। তিনি হতে চেয়েছিলেন সিনেমা প্রযোজক। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের নাম গর্বের সঙ্গে আজিম বলকিয়াহ বলেও জাহির করতেন তিনি।কিছু সিনেমার প্রযোজনার সাথেও যুক্ত ছিলেন তিনি। ইউ আর নট ইউ, দ্য হ্যাপি প্রিন্স এর মত সিনেমাগুলোতে অর্থলগ্নি করেছিলেন তিনি।
তার বন্ধুত্ব ছিলো অনেক সেলিব্রেটির সাথেও। মাইকেল জ্যাকসন, পামেলা এন্ডারসন, নাওমি ক্যাম্পবেল, এলিজাবেথ হার্লি, জেড গুডি অনেকের সাথেই খাতির ছিলো তার। রাজপুত্র আজিমের পার্টিতে তাদের অনেককে দেখাও যেতো নিয়মিত।

ব্রুনাইয়ের সেই রাজপুত্র, যিনি পুরো জীবনে অঢেল টাকাপয়সা উড়িয়ে মারাত্মক বিলাসী জীবন যাপন করেছেন, তিনি সম্প্রতি মারা গিয়েছেন। নিজ দেশ ব্রুনাইতে। অনেক দিন থেকেই রোগে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। দুঃখের বিষয়, এতদিন ধরে যারা তার বন্ধু (!) ছিলো, তাদের কাউকেই দেখা যায় নি তার মৃত্যুর পরে। কোনো সেলিব্রেটিকেই দেখা যায়নি আসতে। জীবদ্দশায় যিনি ছিলেন সব আসরের মধ্যমনি, মৃত্যুর পরে তিনি পরিবারের কিছু সদস্য ছাড়া কাউকেই পান নি। হয়তো এটাই আয়রনি। হয়তো তিনি জীবদ্দশায় 'দুধের মাছি'দের সাথেই ছিলেন সবসময়। হয়তো এটাই ছিলো ব্রুনাইয়ের যুবরাজের অন্তিম পরিণতি! কে জানে!
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন