চলমান বৈশ্বিক বৈরিতার মাঝেও গতকাল এই বাংলাদেশে নতুন একটি রাজনৈতিক দলের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। এই দলটিই বোধহয় বিশ্বে লকডাউনের মাঝে পয়দা হওয়া একমাত্র রাজনৈতিক দল। দলটির নাম শুনে প্রথমে ঠাহর করতে পারিনি কী হতে পারে এই নামের পূর্ণরূপ। সদ্যোজাত ফুটফুটে তুলতুলে এই দলটির সংক্ষিপ্ত নাম এবি পার্টি।
পত্রিকার শিরোনামে 'এবি পার্টির অনাড়ম্বর আবির্ভাব' দেখে প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো এলআরবি ব্যান্ডের অন্ধ ভক্তরা প্রয়াত মিউজিক মায়েস্ত্রো আইয়ুব বাচ্চুর নামে ইফতার পার্টির আয়োজন করতে যাচ্ছে, আমার মতো ভিখিরি লেখকদেরকে দিতে যাচ্ছে দুটো ভালোমন্দ ইফতারসামগ্রী। কিন্তু আদতে তা হলো না। বাংলাদেশে 'জননেত্রী পরিষদ' নামে একটা ভুঁইফোঁড় সংগঠন আছে, যার সভাপতি এবি সিদ্দিকি (ওরফে আবু বকর সিদ্দিকি) শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য প্রায়শই বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করে থাকেন।
২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত পাওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই পেশাদার মামলা-শিল্পী বিএনপি-নেতাদের বিরুদ্ধে মোকদ্দমা দায়ের করেছেন সাকুল্যে ষোলোটি, যার পাঁচটিই খোদ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। শিরোনামে 'এবি পার্টি' দেখে কিছুক্ষণের জন্য ভেবেছিলাম ঐ এবি সিদ্দিকিই হয়তো নিজ নামে আলাদা একটি রাজনৈতিক দোকান খুলে বসেছেন। এবি ব্যাংকের কর্মচারীরা এবি পার্টি নাম দিয়ে কোনো আনন্দ আয়োজন করে থাকতে পারেন মর্মেও মস্তিষ্কে একটা মৃদু ধারণা গজিয়েছিল।
সব ধারণা ধূলিসাৎ হলো, যখন জানতে পারলাম— আইয়ুব বাচ্চু পার্টিও নয়, আবু বকর পার্টিও নয়, নয় আরব-বাংলাদেশ পার্টিও; দলটির পুরো নাম আসলে 'আমার বাংলাদেশ পার্টি'। একটা রাজনৈতিক দলের নাম এত দুর্বল হতে পারে, চিন্তাও করতে পারিনি। যার ডাকনাম কবিতা, তার পুরো নাম কিছুতেই কবিতা বেগম বা মোসাম্মৎ কবিতা আক্তার হতে পারে না; তেমনি যে দলের নামের শেষে পার্টি আছে, তার পুরো নাম 'আমার বাংলাদেশ পার্টি' হতে পারে না। শব্দগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ না, শব্দত্রয় মিলে কোনো সার্থক ব্যঞ্জনা তৈরি করে না।
বিনামূল্যে আমি বিভিন্ন সময়ে বহু বাচ্চার নাম রেখে দিয়েছি; রেখে দিয়েছি বহু ক্লাব, ম্যাগাজিন, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম। আইন বিভাগের জনৈক অনুজ তার জুসবারের (রস তরঙ্গ) নাম নির্ধারণ করে দেওয়ায় একবার অবশ্য আমাকে তৎকালীন প্রেমিকাসহ শঙ্করে ডেকে বারের সর্বপ্রকার জুস এক গ্লাস করে খাইয়ে হাজার পাঁচেক টাকার টাটকা খামও দিয়েছিল। যতজনের যতকিছুর নামই রেখে দিই না কেন, এমন মহাপ্রাণ মালিকের দেখা মেলা ভার, লেখকের মেধা সবাই মাগনা ব্যবহার করতেই অভ্যস্ত। কোনো রাজনৈতিক দল আমার কাছে নাম চাইলে আমি অবশ্য খুব একটা বেশি টাকা নিতাম না। অবশ্য দলটার যা চরিত্র দেখলাম, তাতে টাকার অঙ্ক ছাদ ছুঁলেও তাদের দলের নাম নির্ধারণে সহযোগিতা করতাম কি না, সন্দেহ। তবু বিনামূল্যে বলি— এই দুঃসহ মহামারিকালে সিজারিয়ান অপারেশন সাপেক্ষে জন্ম দেওয়া দলটির নাম এবি পার্টি না হয়ে হতে পারত 'সিভি পার্টি' তথা 'করোনাভাইরাস পার্টি'।
দলটির ২২২ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটিতে যারা আহ্বায়ক (আমির) ও সদস্যসচিব (সেক্রেটারি জেনারেল) হিশেবে আছে, তারা দুজনই জামায়াত-ফেরত। সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু এককালে ছিল ছাত্রশিবিরের সভাপতি। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে রাজাকার-আলবদর নেতাদের আইনজীবী হিশেবে কাজ করে যাওয়া আবদুর রাজ্জাক, তাজুল ইসলাম, জোবায়ের ভুঁইয়াও আছে এই কথিত রাজনৈতিক দলে। এই গতায়ু রাজ্জাক আর উদীয়মান মঞ্জু নাকি জামায়াতের অভ্যন্তরে সংস্কার চেয়েছিল, তারা নাকি জামায়াতের শীর্ষনেতাদেরকে বলেছিল একাত্তরের ভূমিকার জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে এবং এই দাবির কারণে জামায়াত নাকি মঞ্জুকে বহিষ্কারও করেছিল, আর দল থেকে রাজ্জাক নাকি করেছে পদত্যাগ। রাজ্জাক-মঞ্জুদের এই কথিত রাজনৈতিক দলটির অন্যতম মূল স্তম্ভ নাকি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, তারা নাকি মুক্তিযুদ্ধ ও ধর্মকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে রেখে রাজনীতি করতে চায়!
কিন্তু ইতিহাস বলে ভিন্ন কথা। জামায়াতে ইসলামি লিগ-বিএনপি-জাপার মতো বোকা দল নয়। ১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত দলটি উপমহাদেশের কোথাও কখনও এককভাবে ক্ষমতায় যেতে না পারলেও, অবিভক্ত পাকিস্তানে আইয়ুব খান কর্তৃক একবার এবং স্বাধীন বাংলাদেশে শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ধর্মভিত্তিক অন্য দলগুলোর সাথে যৌথভাবে আরেকবার নিষিদ্ধ হওয়ার পরও দলটি আট দশক ধরে বহাল তবিয়তে টিকে আছে কেবল বুদ্ধির জোরে। জামায়াতের একজন রোকনের মাথায় যে পরিমাণ কূটবুদ্ধি আছে, আওয়ামি লিগ-বিএনপির দশজন করে জেলাসভাপতির মাথায় সম্মিলিতভাবে সেই পরিমাণ বুদ্ধি নেই। জামায়াতের চেইন অব কমান্ড অত্যন্ত শক্তিশালী। দলটায় অভ্যন্তরীণ বিরোধ নেই বললেই চলে। জামায়াতের মধ্যে অন্য কোনো দলের কোনো গুপ্তচর নেই, কিন্তু বাংলাদেশের অন্য প্রত্যেকটি দলে জামায়াতের ভূরি-ভূরি গুপ্তচর আছে। জামায়াতের অভ্যন্তরীণ কোনো তথ্য বাইরে যায় না, অন্য সব দলের বাড়ি-হাঁড়ি-নারীর সব খবর অদৃশ্য সাবমেরিন কেবল বেয়ে মগবাজারে চলে যায়। রাজ্জাকের মতো গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতাকে জামায়াত পদত্যাগ করতে দেবে কিংবা জানপ্রাণ দিয়ে রাজাকারদের পক্ষে আইনি লড়াই লড়ে যাওয়া রাজ্জাক একাত্তরের ভূমিকার জন্য দলের অন্য নেতাদেরকে ক্ষমা চাইতে বলবে— এ অসম্ভব, এই অসম্ভবকে সম্ভব করা ম্যানচেস্টার-ফেরত বিচিত্র চিত্রনায়ক আনান্তা সিআইপি ওরফে আবদুল জলিল তালুকদারের পক্ষেও সম্ভব নয়।
নামবদল জামায়াতের পুরোনো রাজনৈতিক কৌশল। জামায়াতের যে ছাত্রসংগঠনের এখনকার নাম ইসলামি ছাত্রশিবির, একাত্তরে এরই নাম ছিল ইসলামি ছাত্রসংঘ। চৌদ্দই ডিসেম্বরের বুদ্ধিজীবীহত্যার অন্যতম রূপকার পাকিস্তানি জেনারেল রাও ফরমান আলি খান তার 'বাংলাদেশের জন্ম' বইয়ে বলেছিল— একাত্তরে খুন-ধর্ষণ-অগ্নিসংযোগ-লুটতরাজ ও বুদ্ধিজীবীহত্যায় কিছু-কিছু ক্ষেত্রে ছাত্রসংঘ ছিল পাকবাহিনীর চাইতেও বেশি নৃশংস। অর্থাৎ নৃশংসতা-নির্মমতা-নরহত্যা যজ্ঞে অগ্রগামিতায় ছাত্রসংঘ ছিল পাকিস্তানি জেনারেল কর্তৃকই পাকবাহিনী অপেক্ষা বেশি আগ্রাসী মর্মে সনদপ্রাপ্ত। ছাত্রসংঘের ব্যাপারে জনমনে এতটাই ঘৃণা ও আক্রোশ ছিল যে, একাত্তরের জামায়াত নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল ছাত্রসংঘের আর কোনো রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নেই এবং কোনোক্রমেই এই নামে সংগঠন আর চলবে না।
বাংলাদেশ যাতে পাকিস্তানের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার পর ভবিষ্যতে কখনও বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে, সেজন্য জামায়াত-ছাত্রসংঘেরই নীলনকশায় বিজয়ের মাত্র দুদিন আগে এ দেশে সংঘটিত হয় নজিরবিহীন বুদ্ধিজীবী-হত্যাকাণ্ড। কেবল বুদ্ধিজীবীহত্যার উদ্দেশ্যেই, নরহত্যায় পারঙ্গম চৌকস কর্মীদেরকে বাছাই করে, ছাত্রসংঘ গঠন করেছিল কিলিং স্কয়াড— আল বদর। বিশ্বনবি হজরত মুহম্মদের (সা.) নেতৃত্বে ইসলামের প্রথম যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল যে বদর ময়দানে, সেই ঐতিহাসিক বদর নামটিকেই ছাত্রসংঘ বেছে নিয়েছিল নিজ দেশের সূর্যসন্তানদেরকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে গঠিত গুপ্তঘাতকদলের নাম হিশেবে। এই আল বদরের শীর্ষনেতা ছিল দুই তারকা যুদ্ধাপরাধী রাজাকার মতিউর রহমান নিজামি ও রাজাকার আলি আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ।
যুদ্ধকালে জামায়াত ছাত্রসংঘের চাইতে অপেক্ষাকৃত কম নৃশংস ছিল। শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর জিয়াউর রহমানের সবুজ সংকেত পেয়ে জামায়াত তাই স্বনামেই রাজনীতি করতে পেরেছিল, কিন্তু করেনি বা করতে পারেনি নৃশংস ছাত্রসংঘ। এজন্য ১৯৭৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে (অর্থাৎ দলীয় স্বার্থসিদ্ধির জন্য পবিত্র মসজিদ ব্যবহার করা ওদের পুরোনো ঐতিহ্য) ছাত্রসংঘ নাম পালটে ছাত্রশিবির নাম ধারণ করে এবং নরঘাতক হিশেবে পরিচিতি পেয়ে যাওয়া নিজামি-মুজাহিদকে নেতৃত্বে না এনে সভাপতির পদে বসায় অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত ছাত্রসংঘ-নেতা মির কাশেম আলিকে। মির কাশেমের ঘাড়ে বন্দুক রেখে ইসলামি ছাত্রশিবির নাম ধারণ করে বাংলাদেশে আবারও জাল বিস্তার করে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত পরিত্যক্ত-অভিশপ্ত ইসলামি ছাত্রসংঘ। ইতিহাস এতটাই নির্মম যে, ছাত্রসংঘের বিংশ শতাব্দীর দুই পালের গোদা নিজামি-মুজাহিদকে একবিংশ শতাব্দীতে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলতে হয়েছে, একই কাষ্ঠে ঝুলতে হয়েছে ছাত্রসংঘকে ছাত্রশিবিরে রূপ দেওয়া মির কাশেমকেও। মির জাফর, মির কাশেমদের জন্য ইতিহাস কখনোই ইতিবাচক কোনো পরিণতি বরাদ্দ করেনি।
নামবদলের কৌশল জামায়াতের রাজনীতিতে নতুন কিছু নয়। তেতাল্লিশ বছর পর জামায়াত আরো একবার নামবদলের আশ্রয় নিল। যুদ্ধাপরাধের দায়ে শীর্ষ পাঁচ নেতার মৃত্যুদণ্ড ও দুই নেতার আমৃত্যু কারাদণ্ড কার্যকর হয়ে যাওয়ার পর স্বনামে জামায়াতের রাজনীতি বাংলাদেশে এখন কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। একাত্তরের ভূমিকার জন্য মৃত্যুর আগমুহূর্তেও ঐ পাঁচ নেতা ক্ষমা চেয়ে যায়নি বলে এই ইশুতে দলীয়ভাবে ক্ষমা চাওয়াও এখন দলটির পক্ষে কার্যত সম্ভব না। বাংলাদেশে এখন এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে যে, স্বাধীনতাবিরোধী কোনো দলের এখন রাজনীতি করাই রীতিমতো অসম্ভব। ইন্টারনেটে ইতিহাসের সহজলভ্যতার কারণে বর্তমান তরুণ তুর্কিরা জামায়াতকে এখন আগের মতো বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়েও দিচ্ছে না। ওদিকে নির্বাচন কমিশনও বাতিল করে দিয়েছে জামায়াতের নিবন্ধন, যে কারণে বিগত সাধারণ নির্বাচনে জামায়াত-নেতাদেরকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়েছে বিএনপির ধানের শিষ প্রতীক নিয়ে; যা জামায়াতের জন্য রাজনৈতিক পরাজয় আর বিএনপির জন্য চূড়ান্ত রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা।
পঁচাত্তরপরবর্তী বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন বেকায়দায় জামায়াত কখনোই পড়েনি এবং নাম পরিবর্তন করে, একাত্তরের বিতর্কিত নেতাদেরকে পর্দার আড়ালে রেখে, একাত্তরের পরে জন্ম নেওয়া পরিষ্কার ভাবমূর্তির নেতাদেরকে শীর্ষপদে বসিয়ে নতুন বোতলে পুরোনো মদ্য পান করা ছাড়া জামায়াতের সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই। এবি পার্টিকে জামায়াত মাঠে নামিয়েছে পরীক্ষামূলক প্রকল্প হিশেবে, এই প্রকল্প সফল হলে পুরোনো দলকে পর্যায়ক্রমে বিলুপ্ত করে জামায়াত পুরোপুরি এবি পার্টিতে একাকার হয়ে একদিন অনানুষ্ঠানিকভাবে বিলীন হয়ে যাবে। ছাত্রসংঘ থেকে ছাত্রশিবিরে বিলীন হয়ে যাওয়ার ১৯৭৭ সালের কৌশল এবং জামায়াতে ইসলামি থেকে এবি পার্টিতে বিলীন হয়ে যাওয়ার ২০২০ সালের কৌশল হুবহু এক। ভুলে গেলে চলবে না— এবি পার্টির পুরো নাম 'আমার বাংলাদেশ পার্টি' এবং গোলাম আজমের লেখা একটা বইয়ের নামও 'আমার বাংলাদেশ'। অর্থাৎ 'আমার বাংলাদেশ পার্টি' নামের আড়ালে এবি পার্টি মূলত আল বদর পার্টিই। অদূর ভবিষ্যতে এই পার্টির নায়েবে আমির হবে সাইদির ফুটফুটে ফটোকপি মিজানুর রহমান আজহারি, জামায়াত মিজানকে সেভাবেই গড়ে তুলেছে।
অনেকেই হয়তো এই এবি পার্টির ব্যাপারে বিভ্রান্ত আছেন। তারা ভেবেছেন এবি পার্টির নেতারা জামায়াতের বিরাগভাজন, এরা জামায়াতকে পরিশুদ্ধ করতে চেয়েছিল, এরা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি। কেউ-কেউ ভেবেছেন সংস্কারের দাবি তুলে জামায়াত থেকে বহিষ্কৃত হয়ে আসা তরুণ মঞ্জুরাই বুঝি বাংলাদেশ, এই মঞ্জুদেরকে দিয়ে বাংলাদেশবিরোধী বা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কিছু করানো সম্ভবই হবে না। তাদের ভাবনা ভুল। সাপের ডিম ফুটে সাপই বেরোয়, কাঠবিড়ালি না।
দশবছরের এক ছেলে একবার ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে আদালতের কাঠগড়ায় উঠল। ওর পক্ষের নারী আইনজীবী সম্ভাব্য সব রকমের সাফাই গেয়ে বললেন— মাত্র দশবছরের একটা বাচ্চার কোনো যৌন তাড়নাই নেই; এই বয়সের কোনো ছেলের পক্ষে ধর্ষণ দূরে থাক, সঙ্গম করাও অসম্ভব, ওর উত্থানই হবে না; পূর্বশত্রুতার জের ধরে এই ছেলের বাবার শত্রুরা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ওকে এই মামলায় ফাঁসিয়েছে। বিচারককে নির্বিকার দেখে অতি-উত্তেজিত হয়ে আসামির হাফপ্যান্ট খুলে পুংদণ্ডটি হাতে ধরে নাড়াতে-নাড়াতে উকিলটি বললেন— 'আপনিই বলুন, ইয়োর অনার! এত ছোট্ট একটা পুরুষাঙ্গ দিয়ে ধর্ষণ করা সম্ভব? আমরা কেন এত বিবেকহীন হয়ে পড়েছি? কেন কোমলমতি একটা শিশুকে আমাদের সমাজ কাঠগড়ায় এনে দাঁড় করাল?' বাচ্চাটা মহিলা উকিলের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল— 'আস্তে নাড়েন, আপা। বেশি জোরে নাড়লে কেস কিন্তু হেরে যাবেন।'
যুদ্ধাপরাধীদের দোসর রাজ্জাক-তাজুল-মঞ্জুদেরকে নিয়ে যাদের প্রভূত প্রত্যাশা, যারা ভাবছেন এবি পার্টি বাংলাদেশের রাজনীতিতে উন্মোচন ঘটাবে নবদিগন্তের, ভাবছেন এরা সমুন্নত রাখবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা; আবহাওয়া ও আদালতের পূর্বাভাস বলে— জোরে নাড়ানো থেকে বিরত থেকে আস্তে না নাড়ালে তারা অচিরেই কেস হেরে যাবেন।