১৯৬৬ সালের ৭ই জুন। আজকের এই দিনে বাংলাদেশে ঘটে এক ঐতিহাসিক ঘটনা, যার ফলে এক বিপ্লবী চেতনার উন্মেষ ঘটে। বোনা হয়ে যায় স্বাধীনতার বীজ।
১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা ঘোষণা দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর এই ছয় দফা হয়ে ওঠে বাঙালির প্রাণের দাবি। আইয়ুব খানের নির্যাতন-নিপীড়নের পটভূমিতে যখন ছয় দফা পেশ করা হয় তখন অতি দ্রুত জনসমর্থন বাড়তে থাকে। বঙ্গবন্ধু তখন একের পর এক জেলায় জনসমর্থন করতেন। আর সভা শেষে তাঁকে প্রায়ই গ্রেপ্তার করা হতো। দুই মাসে আটবার গ্রেপ্তার হন।
১৯৬৬ সালের ৮ মে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় ফেরার পরদিন ৯ মে তাকে আবার গ্রেফতার করা হয়। এরই প্রতিবাদে এবং ৬ দফার প্রতি সমর্থন জানাতে ৭ জুন ঢাকায় হরতাল ডাকা হয়। শুরু হয় এক নতুন দিন।
এবারই প্রথম হরতালে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক রাস্তায় নেমে আসে। পাক বাহিনী সেদিন পিকেটারদের ওপর গুলি চালায়। তেজগাঁওয়ের শ্রমিক মনু মিয়াসহ ১১ জন নিহত হন। আর ইতিহাস বাঁক বদল করে স্বাধীনতার দিকে।
আজ ৭ জুন। শহীদ মনু মিয়াসহ নিহত সবার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। আফসোস ৬ দফার হাত ধরে স্বাধীনতা আসলেও যে স্বপ্নে লাখো মনুমিয়া শহীদ হয়েছিলেন সেই স্বপ্নের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ আজও হয়নি। বরং করোনা ভাইরাস এই সময় আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থার অনেক দুর্বলতা উম্মুক্ত করে দিয়েছে।
আমি সব সময় বলি বাংলাদেশ কখনোই ব্যর্থ রাষ্ট্র ছিল না, বরং সব সময় ছিল একটি সম্ভাবনাময় রাষ্ট্র। একদল ক্ষমতাশালী ও দুর্নীতিবাজ লোক সম্ভাবনা এই রাষ্ট্রকে বারবার পিছিয়ে দিয়েছে। করোনার এই সংকটকালীন সময়টা শুধু স্বাস্থ্য না, সব খাতই সেই সুশাসনের দাবিই আবার প্রতিধ্বনী করছে।
আমাদের যে সম্পদ ও সক্ষমতা আছে, আমি বিশ্বাস করি শুধু সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে তা নিয়েই এই দেশটা বদলে যাবে। আর সেটা করতে পারলেই মনু মিয়াসহ সব শহীদের আত্মা শান্তি পাবে। অর্জিত হবে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ। সুন্দর ও বহু আকাঙ্ক্ষিত সেই বাংলাদেশের স্বপ্নে বেঁচে আছি। শুভ সকাল সবাইকে। ভালো থাকুক প্রিয় বাংলাদেশ।