ভালোবাসাকে কখনোই কোনো দিনে বন্দী করা যায় না। খুব সম্ভবত আবেগ ছাড়া ভালোবাসার পরিমাপের একক নেই আর। আর বই হচ্ছে আবেগ প্রকাশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। আর তাই পাঠকদের এমন ৫টি বিশেষ বইয়ের কথা বলতে চাই, যেখানে রোজকার জীবনের ভালোবাসার ছোট ছোট গল্পগুলো মলাটবন্দী হয়েছে।
ভালোবাসা দিবস এর ব্যাপ্তি কি কেবলই একদিনের? অবশ্যই না। আর তাই পাঠকদের এমন ৫টি বিশেষ বইয়ের কথা বলতে চাই, যেখানে রোজকার জীবনের ভালোবাসার ছোট ছোট গল্পগুলো মলাটবন্দী হয়েছে। বাংলা সাহিত্যেরও শ্রেষ্ঠ প্রেমের উপন্যাসের তালিকা করা হলে, এই বইগুলোর নাম সামনের দিকেই থাকবে। আপনার ভালোবাসার মানুষ ভালো থাকুক এবং আপনার ভালোবাসায় থাকুক বাংলা সাহিত্য, বাংলা বইও। যে পাঁচটি প্রেমের উপন্যাসের নাম জানাতে চাই বিশেষভাবে, নিশ্চয়ই আপনার রুচির সাথেও মিলে যাবে এই বইগুলো!
মেঘ বলেছে যাব যাব- হুমায়ূন আহমেদ
অনেকদিন আগে এই বইটি পড়েছিলাম। একদমই নিখাদ হুমায়ূনীয় ঢঙে লেখা, প্লটও মধ্যবিত্ত পরিবারকে কেন্দ্র করে। উপন্যাসটির কেন্দ্রীয় চরিত্র হাসান। মধ্যবিত্ত পরিবারের এই তরুণের সাথে ভাব ভালবাসা আছে তিতলি নামক একজন তরুণীর। কিন্তু, ভাগ্য কি তাদের এক সূত্রে মেলায় নাকি মধ্যবিত্ত টানাপোড়েনে বদলে যায় ভালবাসার গন্তব্য? উপন্যাসটির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র রীনা ভাবীর জীবনের দ্বন্দ্বও আপনাকে ভাবাবে নিশ্চিতভাবে। আমাদের নাগরিক জীবনের ভালবাসার হাহাকার কিংবা অভিলাস ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে৷ ভালবাসা দিবসে এই বইটি তাই যাদের পড়া আছে তারা আরেকবার পড়ে সেই ভালবাসার ভুবনে হারিয়ে যেতে পারেন, যাদের পড়া নেই, তারা সংগ্রহে রাখতে পারেন অদ্ভুত সুন্দর এই প্রেমের উপন্যাসটি।
শবনম- সৈয়দ মুজতবা আলী
"আমার বিরহে তুমি অভ্যস্থ হয়ে যেও না, আমার মিলনে তুমি অভ্যস্থ হয়ে যেও না।" অভ্যস্ত হয়ে গেলে সেখানে কি ভালবাসা একটু গৌণ হয়ে যায় না? কে জানে? কিন্তু 'শবনম' সৈয়দ মুজতবা আলীর এমনই এক অনবদ্য সৃষ্টি যে, আপনি এর পরতে পরতে এমন সব লাইনের দেখা যাবে যা আপনার চিরআকাঙ্ক্ষিত ভালবাসার অনুভূতিকে স্পর্শ করে যাবে। এই উপন্যাসকে একটা চলমান কাব্য বললেও ভুল হবে না। প্রতিটি পাতায় পাতায় কাব্যের ঝংকারে ফুটে উঠে ভালবাসার কাব্যগাঁথা। শবনম-মজনুনের এই কাব্যিক প্রেমের ভুবনে আপনাকে স্বাগতম। খুব কম উপন্যাস সম্পর্কে নিশ্চয়তা দেয়া যায়, এই বইটি আপনার ভাল লাগবে। কিন্তু, শবনম সম্পর্কে এইটুকু বলতে পারি এই বইটি আপনার মুগ্ধতার সীমাকে ছুঁয়ে যাবে! কারণ, প্রেম বলতে আমাদের যে চিরন্তণ টিপিক্যাল ধারণা তার চেয়েও অনেক উর্ধ্বে এই বই।
কবি- তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়
বাংলা সাহিত্য জগতে যে কজন লেখক বিশ্বমানের লেখা উপহার দিয়েছেন তার মধ্যে তারাশঙ্করের নাম বারবার প্রাসঙ্গিক। এই লেখকের অমর সৃষ্টি ‘কবি’। এই উপন্যাসের একটা লাইনে যেন আমাদের সবার জীবনেরই আক্ষেপ, বুক হু হু করে উঠা প্রেমের আকুল অনুভূতি ফুটে ওঠে – ‘ভালবেসে মিটলো না আশ, কুলাল না এ জীবনে। হায়! জীবন এত ছোট ক্যানে,এ ভুবনে?’ ডোম বংশের নিতাই চরণ বাপ দাদার পেশা ডাকাতি ছেড়ে কবিয়াল জীবন বেছে নেয়৷ ভালবেসে ফেলে ঠাকুরঝিকে। কিন্তু সমাজ তো এই প্রেম মানবে না। নিতাই কি করবে তাহলে? এই উপন্যাসের কবিতাগুলোতে প্রেমের বিভিন্ন পর্যায়ের আকুলতা প্রকট হয়ে আন্দোলিত করে পাঠকমনকে।
তিথিডোর - বুদ্ধদেব বসু
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সামাজিক প্রেক্ষাপটকে তিনি চোখের সামনে দেখেছেন। দেখেছেন মধ্যবিত্ত জীবন। নিজের ব্যক্তিগত জীবনটা কাটিয়েছেন একপ্রকার নিঃসঙ্গতায়। এই সব কিছুই কি এসেছে এই উপন্যাসে? হতে পারে। তিথিডোরকে অনেকেই বলেন বুদ্ধদেব বসুর শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। এখানে প্রেম এসেছে, নিঃসঙ্গতা এসেছে। লেখকের ফ্যাসিবাদবিরোধী সত্ত্বাও ফুটে উঠেছে। কিন্তু উপন্যাস আবর্তিত হয়েছে সেইসময়কার মধ্যবিত্তজীবনের চালচিত্রকে কেন্দ্র করে। সৌখিন রাজেনবাবুকে পাওয়া যায় উপন্যাসের শুরুতে। তার সর্বকনিষ্ঠ কন্যা সন্তান স্বাতী একসময় উপন্যাসের মূল কেন্দ্রে চলে আসে। স্বাতীর সাথে একধরণের সম্পর্ক গড়ে উঠে কলেজ শিক্ষক সত্যেন রায়ের। কিন্তু আজন্ম একটু মুখচোরা, অমিশুক স্বাতীর জীবনে চলে আসে আরেকজন মানুষ, তার দাদার বন্ধু প্রবীর মজুমদার। স্বাতী বিভ্রমে ভুগে। সম্পর্কের গন্তব্য তবে কোন স্টেশনে থামবে? দারুণ সহজিয়া, সাবলীলতায় বুদ্ধদেব বসুর উপন্যাসটি পড়লেই জানা যাবে বাকিটুকু!
শেষের কবিতা- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাউকে প্রেমের উপন্যাসের কথা জিজ্ঞেস করলেই সবাই চোখ বন্ধ করে যে বইটার কথা সবার আগে বলে তার নাম শেষের কবিতা। কারো কারো কাছে এটি বাংলার সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রেমের উপন্যাস। এই বইটি সম্পর্কে নতুন করে কি আর বলার থাকতে পারে? এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় দুই চরিত্র অমিত রয় এবং লাবণ্য এতটাই পরিচিত যে, উপন্যাস না পড়লেও এদের সবাই চেনে। কিন্তু দূর্ঘটনায় দেখা হওয়া এই দুটি মানুষের প্রেমও কি শুধুই একটা দূর্ঘটনা? রবীন্দ্রনাথের চেয়ে মানুষের মনের দূর্গমতম জায়গা আর কে ছুঁয়েছে? এই উপন্যাসে তিনি যেমন প্রেম দিয়েছেন অমিত-লাবণ্যকে, দিয়েছেন চিরায়ত মানসিক দ্বন্দ্বও। শেষের কবিতা হলেও এই উপন্যাসটির আসলে শেষ নেই, এক অসমাপ্ত প্রেম-বিরহ কিংবা দ্বন্দ্বের উপন্যাস এটি। যারা পড়েননি, তারা হয়ত দারুণ কিছু থেকে বঞ্চিত রয়ে যাবেন, তাই বইটি সংগ্রহ করে পড়ে ফেলতে পারেন খুব দ্রুতই।