দুপুর আড়াইটা! সম্ভবত এখন আমাদের সবচেয়ে আকাংক্ষিত সময় এটা।

২৪ ঘন্টার বাংলাদেশের সামারি শোনার জন্য আমরা টিভির সামনে বসি। কেউ বসি ফেসবুক লাইভে। বসে বসে লাশ গুনি। অথচ দুপুর আড়াইটা ছিল আমাদের শৈশব-কৈশোরের সবচেয়ে বড় বিনোদনের সময়। আমরা বিটিভির সামনে বসে থাকতাম। একটা বাংলা সিনেমা শুরু হবে। সাত ভাই চম্পা কিংবা কেয়ামত থেকে কেয়ামত। শাবনাজ কিংবা শাবানা। 

তারপর দুপুর আড়াইটার অপেক্ষা হয়ে এলো ডে নাইট ক্রিকেট ম্যাচ। আমাদের দেশের খেলা। ম্যাক্সিমাম হয়ত জিম্বাবুয়ের সাথেই ছিল। 

এখন দুপুর আড়াইটা আমাদের জানায় নতুন হটস্পটের কথা। নতুন ক্লাস্টারের খবর। দুপুর আড়াইটা আমাদের জানায় অন্য দেশে যে ভাইরাস বৃদ্ধদের মারছে, সে ভাইরাস আমাদের তরুণদেরও ছাড়ছে না। 

কোভিড নাইনটিন একটা রাফখাতার মতো। পৃথিবীর সবার ঘরেই আছে। এটার বিস্তার অংকের মতো, হিসেবে করে বের করা যায়। সেই হিসেবে দেখা যায় প্রথম ছয় সপ্তাহের স্ট্যাটিস্টিকসে আমরা অলরেডি পেছনে ফেলে দিয়েছি প্রায় সবাইকে। সবচেয়ে কম টেস্ট করেই আমরা ফার্স্ট হয়েই যাচ্ছি। টেস্ট বাড়লে কী হবে সেটা নিয়ে বিলাসী ভাবনা তাই আর ভাবতে হচ্ছে না। 

প্রতিদিন কেউ না কেউ সুস্থ হয়। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যায়। মাদারিপুরে এমন কয়েকজন বাড়ি ফিরে গিয়ে সুস্থ হওয়ার খুশিতে মিলাদ দিয়েছে। সেখান থেকে আবার নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে। 

একশোর মতো ডাক্তার আক্রান্ত। সাথে আছে নার্স, অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরাও। প্রায় কাছাকাছি সংখ্যায় আক্রান্ত পুলিশ। 

ডাক্তার বাবাকে ডিউটিতে যেতে দেবে না বলে পা জড়িয়ে ধরে থাকা ছোট্ট শিশুর ছবি দেখেছি আমরা। পুলিশ অফিসার এক মাস ধরে বাসায় যান না। বাসার সবাইকে রিস্কে ফেলে দিতে চান না। কী কঠিন তাদের সময়!

বন্যা আর মহামারী এক জিনিস না। পাবলিক সাপোর্ট, ভলেন্টিয়ারি দিয়ে নরমাল ডিজাস্টার মোকাবেলা করা গেলেও মহামারী মোকাবেলা করা যায় না। এসব শুধুই সাপোর্টিভ। ফুল সলিউশন না। প্যান্ডেমিক মোকাবেলা করতে হবে পুরোপুরি সরকারকে। পুরোপুরি রাষ্ট্রকে, তার এফোর্ট দিয়ে। তার প্রশাসন দিয়ে। তার প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী দিয়ে। জনপ্রতিনিধি দিয়ে। 

এজন্য এটা অনেক বড় সততার পরীক্ষা। এখানে সৎ না থাকলে আপনি হারবেন। বর্তমান আপনাকে ক্ষমা করবে না। ইতিহাসও না। 

এক আওয়ামীলীগ নেতার জানাজায় হাজারের বেশি লোক সমাগম হয়েছে। পরে জানা গেছে তিনি পজেটিভ ছিলেন। আইন মানা ঘর থেকেই শুরু করতে হবে। 

বাহ্মণবাড়িয়ার জানাজার ছবিটা চোখের মধ্যে লেগে থাকবে অনেকদিন। জীবন মরণের প্রশ্নের সময়ে আমরা বর্গা দেয়া মাথার হাজিরা দিতে গিয়েছিলাম। আহারে!

সরকার সবই দেখছে আবার দেখছে না। সবকিছু নিয়ে কথা বলছে না। লকডাউন শব্দটাও শক্তভাবে উচ্চারণ করছে না। প্যান্ডেমিক নিয়ে তারা কেন এত প্রোএকটিভ আমি বুঝি না। সবকিছু হয়ে যাওয়ার পর ডিসিশন নিয়ে কী লাভ হয় তখন!

একজন ওসি অসহায়ের মতো কেন এসে বলবেন, আমাদের কিছুই করার ছিল না। কিছু করতে না পারলে সরকারে ইউজ কী তাহলে? এসব কে থামাবে? জনগণ?

আপনি যে দেশের সরকার, সে দেশের মানুষ কেমন এটা আপনাকেই জানতে হবে। কালকে কী হবে সেটা থামানোর অ্যাকশন আজকে নিতে হবে। ইভেন আরও আগে নিতে হবে। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নকল N95 সাপ্লায়ারকে চিঠি দিয়ে বকে দিয়েছেন। নিউজে এসেছে তিনি নিজেই আবার এসবের সিন্ডিকেট। অথচ এই মাস্ক ছাড়া ডাক্তাররা এক্সপোজড হচ্ছেন প্রতিনিয়ত, রিস্ক বাড়ছে। স্বয়ং জাতীয় কমিটিতেই ব্যবসা আর ধান্দা চলে এসেছে। 

এটিএন নিউজে এক রোগী কুর্মিটোলা হাসপাতাল থেকে লাইভে এসে দেখালেন পরিস্থিতি। সেসব দেখলে অন্তত সবার ভয় হওয়া উচিত। কোন ধরণের সাপোর্ট যেখানে নাই, সেখানে অন্তত ঘরে থেকেই বেঁচে থাকার চেষ্টাটা করা উচিত।

আইসিইউ, ভেন্টিলেটর এসব হয়ত ১২ দিনে যোগাড় করা যায় না কিন্তু ১২ বছরেও তো কিছু হয় নাই কোথাও। বিভিন্ন টিভির রিপোর্টে বের হয়ে আসছে আগের টার্মের খবর। এবারেরটা তো চোখের সামনেই।

আমি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাই না। এই পুরা সিস্টেমের চেঞ্জ যেখানে কখনও হবে না সেখানে মন্ত্রী মিনিস্টার কেউ ইস্যু না। সবাই আপনাকে একই আউটপুট দেবে। একজন জাহেদ মালেকের বদলে আমরা অন্য কাউকে পেলে তিনি হয়ত একটু ভালোভাবে রিডিং পড়তে পারবেন। এর বেশি কিছু না...


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা