বসন্ত আর ভালোবাসা দিবসের সঙ্গে আজ কিন্ত স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবসও
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

আজ বসন্ত দিবস, ভ্যালেন্টাইন দিবস আর স্বৈরাচার প্রতিরোধের শহিদ দিবসও। এই রক্তঝরা দিনের সুবিধাভোগী আমরাও।
এরশাদের আমলে প্রণীত কুখ্যাত আব্দুল মজিদ শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে এই দিন রাজপথে প্রাণ হারান জয়নাল, দীপালিসহ ১০ জনের বেশী শিক্ষা অধিকার কর্মী।
এই রক্তঝরা দিনের সুবিধাভোগী আমরাও। নইলে হয়তো অধিকাংশ মধ্যবিত্ত- নিন্মবিত্ত ফ্যামিলির ছেলেমেয়েরা উচ্চশিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হতো। এরশাদের এই কুখ্যাত মজিদ শিক্ষানীতির মূল বক্তব্য ছিল- ইন্টার পাশ অবধি আপনার দায়িত্ব নিবে সরকার। এরপর উচ্চশিক্ষা নিতে চাইলে- বিশ্ববিদ্যালয় আপনার পেছনে যে খরচ করবে; তার অর্ধেক খরচ বহন করার সামর্থ্য আপনার ফ্যামিলির থাকতে হবে।
তবেই আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবেন।
যেমন, গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রের পেছনে এক বছরে সরকারের খরচ হয়েছে ১ লক্ষ ১২ হাজার টাকার মতোন প্রায়। এরশাদের এই শিক্ষানীতি অনুযায়ী, তার অর্ধেক খরচ মানে ৫০ হাজার টাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিবছর ফ্যামিলি থেকে দেয়ার সামর্থ্য থাকলেই আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারতেন।।
আমি সাস্টে পড়তে গেলে প্রতিবছর ৩৬ হাজার টাকা টিউশন খরচ দেয়া লাগতো আমার ফ্যামিলির। (৭২ হাজার টাকা মাথাপিছু খরচের অর্ধেক)।।
এই হঠকারী-ও জনবিদ্ধেষী শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে প্রগতিশীল কিছু মানুষ রক্ত দিয়েছিলেন বলেই; আজ দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আসা নিম্নবিত্ত আর নিম্নমধ্যবিত্তের ছেলে-মেয়েরা উচ্চ শিক্ষায়তনে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে।
দেখা যাবে আমাদের ফ্যামিলি হিস্ট্রি হিসেব করলে- ৬০/৭০ শতাংশ মফস্বলি মাস্টার, প্রবাসী, কৃষক, ছোট চাকুরিজীবীর সন্তান- এরকম অনেকেই যারা আজ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পান। সবাই ওই এরশাদ বিরোধী সেই ছাত্র আন্দোলনের সুফল ভোগ করছি আমরা। কিছু মানুষ ফাগুণ রাংগা সেই দিনে রাজপথে রক্ত দিয়েছিলেন, কেউ কেউ কারাবাস করে পংগুত্ব বরণ করেছেন। আর তাদের ত্যাগের বিনিময়েই আমাদের পড়ালেখার এই সুলভ সুযোগ।
যে কোন মেনীমুখো শুয়োর ছাত্র-আন্দোলন দমাতে কোন চেতনা বা ভাবগাম্ভীর্যের ছুতো ব্যবহার করেন। এরশাদও এই আন্দোলন ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা করাচ্ছে এমন কাহিনী রটাতে চেষ্টা করেন। কেননা, শিক্ষানীতিতে জুড়ে দেয়া হয়েছিল- ক্লাস ওয়ান থেকে বাধ্যতামূলক কোরআন ও আরবী শিক্ষা। প্রচারণা চালানো হলো- ওই ধর্মীয় শিক্ষার বিরোধীতা করতেই ভারতের সহায়তায় হিন্দুত্ববাদীরা এই আন্দোলন চালাচ্ছে। যদিও শহিদের তালিকায়, কারাবাসের তালিকায় অধিকাংশই মুসলমান।
এরশাদ ১৩ ফেব্রুয়ারির দুই সপ্তাহ আগে ছাত্র আন্দোলন ঠাওর করতে পেরে ঘোষণা করলেন- এবারের ২১ ফেব্রুয়ারিতে শহিদ মিনারে প্রভাতফেরি আর পুষ্প স্তবক অর্পণ হবে না। এবার শহিদ মিনারে মিলাদ ও কোরআনখানী হবে। কারণ মূল ছাত্র আন্দোলনকে ডিফোকাস করতে, সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষদের মতামতকে তার পক্ষে আনতে- ওর এই ইসলামী চেতনা ব্যবহারের প্রয়োজন ছিল।
আরেক প্রেক্ষিতে- ৬ ফেব্রুয়ারিতে ইসলামী ছাত্র শিবির একুশের চেতনা- ভাষা আন্দোলন আর উদযাপন রীতি নিয়ে এরশাদের মতোই কটুক্তি করে। এর প্রেক্ষিতে সাধারণ ছাত্র অধিকার আন্দোলনের কর্মীদের সাথে ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষ হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত হয় ছাত্রশিবির। সেই আন্দোলনে পাশাপাশি ছিল ছাত্রলীগ, ছাত্রদল আর বামপন্থী সংগঠনগুলো।
৪ দশক পর সমীকরণ পাল্টেছে অনেক।সেদিনের সেই শিক্ষা অধিকার আন্দোলনের নির্যাতিত নেতা ও আইনজীবী নুরুল ইসলাম নাহিদ নিজেই শিক্ষামন্ত্রী হয়েছেন একদিন। তার হাত ধরেই দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ ও শিক্ষার খরচ বেড়েছে বহুগুণ।
সেদিনের সেই মেহনতী মানুষের সন্তানের কম পয়সায় শিক্ষা নিশ্চিতকল্পে জেল খাটা শেখ হাসিনা; এখন সংসদে দাঁড়িয়ে ৮ টাকা খরচ করে পড়া লেখার সুযোগ নিয়ে তীর্যক খোঁটা দেন ছাত্রদের। সেদিনের সেই ছাত্র-আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া বাম ছাত্র সংগঠনগুলো সরকার দলের ত্রাস ঠেকাতে শিবিরের সাথেও গলাগলি করেন। তাদের কাজিনদের সাথে 'ঐক্য' করতেও পিছপা হউন না।
শেখ হাসিনার দল এরশাদের দলের সাথে জোট করেছেন। ছাত্রদল আর ছাত্র শিবির একই মায়ের পেটের ভাই হয়ে গিয়েছে। রাজনীতি জল ঘোলা হইতে হইতে রক্তের দাগ মুছে গেছে।
কিন্তু সবাই মিলে গালি দেয় শফিক রেহমানকে; তিনি কেন ১৪ ফেব্রুয়ারিতে, এই শহিদ দিবসে ভালোবাসা দিবস উদযাপন শুরু করলেন! তিনিই স্বৈরাচারের দোসর হয়ে এই কাজ করেছেন। অথচ এরা জানে না, এরশাদের বিরোধিতা করতে গিয়ে শফিক রেহমান বিদেশে পলাতক জীবন যাপন করেছেন। তিনি কেন এরশাদের এই ক্লিনচিট দিবেন!
১৪ ফেব্রুয়ারিতে ভ্যালেন্টাইন দিবস আমদানি করে, এই শহিদ দিবসের ঔজ্জ্বল্য নষ্ট হয়েছে কতটুকু জানি না। কিন্তু এর চেতনার সাথে হঠকারিতা করেছে রাজনৈতিক দলগুলোই। যদিও গলি খায় বেচারা শফিক রেহমান আর ভ্যালেন্টাইন কাপলগুলো